বিএনএ ডেস্ক : ৫ আগস্টের আগে হাসিনা তার পতন হবে কখনো কল্পনাও করেননি, কিন্তু ভারত বিষয়টি জানতো বলে মন্তব্য করেছেন পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। যিনি ২০০৭-০৯ সময়ে ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনার ছিলেন। যে সময়ে ঘটেছিল ১/১১ এর পটপরিবর্তন । সম্প্রতি দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি আলোচনায় অংশ নিয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিতে পারি না উল্লেখ করে অভিজ্ঞ এই কুটনৈতিক বলেন, আওয়ামী লীগ এমন কোনো দল নয় যে অদৃশ্য হয়ে যাবে। তারা আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এমনটাই মনে করেন মিষ্টার পিনাক। ভারত সরকার শেখ হাসিনাকে বের করে দিবেন এমনটা মনে করেন না মিস্টার পিনাক।
শেখ হাসিনা দেশে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু দিতে ব্যর্থ হয়েছেন উল্লেখ করে পিনাক রঞ্জন বলেন, একক নির্বাচন করে নিজের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী। প্রধান দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচন বয়কট করেছে। এরপর জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক সংগঠন ও দল হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে।
এ ছাড়া, তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানপন্থী জামায়াত নেতাদের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিলেন। সেই নেতাদের দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, যা অসন্তোষ তৈরি করে। এরপর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হন এই ঘটনার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্রমশ স্বৈরাচারী হয়ে উঠছেন এমন ধারণায় সাধারণ মানুষ ফুসে ওঠে বলে মনে করেন মিস্টার পিনাক ।
হাসিনার অধীনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে পিনাক রঞ্জন বলেন, বিএনপি–জামায়াত সরকারের সঙ্গে ভারতের সমস্যা ছিল নিরাপত্তা ইস্যু এবং পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিস ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে তাদের মৈত্রী রয়েছে। বিএনপি বরাবরই একটু ডানপন্থী এবং পাকিস্তানপন্থী। জামায়াত, অবশ্যই, সব সময় পাকিস্তানপন্থী ছিল, যদিও তারা এখন দাবি করে যে তারা আলাদা। বিএনপিও দাবি করে, তারা বদলে গেছে।
কিন্তু ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর তিনি বলেছিলেন, তাঁরা বাংলাদেশের মাটি ভারতীয় নিরাপত্তার স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার হতে দেবেন না। এই সবকিছু প্রত্যাশিত কাজ তিনি করেছেন। ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের উলফা নেতাদের ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। শেখ হাসিনা নিশ্চিত করেছেন যে, বিদ্রোহীদের শিবির উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং তাদের হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই সেই দিক থেকে হাসিনা ভারতের কাছে অন্যতম প্রধান গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, যিনি ভারতের নিরাপত্তার চাহিদা পূরণ করেছেন।
পিনাক রঞ্জন বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু না হওয়া পর্যন্ত এবং জ্বালানি ও খাদ্যের দাম আকাশচুম্বী না হওয়া পর্যন্ত মানুষ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে স্বাগত জানিয়েছে। তদুপরি, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভবত ন্যায়সংগত ছিল না। সৃষ্ট কর্মসংস্থান ছিল অপর্যাপ্ত এবং একটি তরুণ প্রজন্ম অর্থনীতিতে প্রবেশ করছে। এ কারণে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। কারণ, এই কোটা সরকারি কর্মসংস্থানে প্রবেশে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এ ছাড়া, নির্বাচনের সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে। কারণ, নতুন ভোটাররা মনে করেন পছন্দের প্রার্থী বাছাইয়ের অধিকার তাঁরা পাচ্ছেন না। সেটাও ক্রমবর্ধমান অসন্তোষকে বাড়িয়ে দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর আন্দোলন থেমে যেত। কারণ, আদালত কোটা মাত্র ৭ শতাংশে নামিয়ে এনেছিলেন। ওই আন্দোলনে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়। ৯ দফা দাবি নিয়ে ফিরেছে আন্দোলনকারীরা। তারা মন্ত্রী, পুলিশ কমিশনার প্রমুখের পদত্যাগ চেয়েছিল। এখন, কেন তারা এমনটি করেছে তা একটি রহস্য। সেখানে অন্যান্য প্রভাব কাজ করেছে—বেশির ভাগ বিদেশি এবং কিছু অভ্যন্তরীণ। হাসিনা স্পষ্টতই তাঁর মন্ত্রীদের বরখাস্ত করতে রাজি না হওয়ায় আন্দোলনকারীরা আবার বিক্ষোভ শুরু করে। এই সময়, তাদের পেছনে ‘খুব কার্যকর একটি শক্তি’ সমর্থন জুগিয়েছে। তবে এই কার্যকর শক্তির ব্যাখ্যা দেননি ভারতীয় এই কূটনীতিক।
শেষ পর্যন্ত সেনাবাহিনীই শেখ হাসিনাকে এই বলে অপসারণ করেছিল যে, আমরা আপনাকে আর রক্ষা করতে পারব না। আমরা এই বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি করব না।
অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে পিনাক রঞ্জন বলেন, অধ্যাপক ইউনূস একজন বড়, আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বাধীন সরকারে বিভিন্ন ধরনের লোক রয়েছে। সেখানে রয়েছেন উগ্র ডানপন্থী দল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের একজন নেতা। এরপর আছেন বিএনপির সহানুভূতিশীলেরা। এরা সবাই সরকারকে বিভিন্ন দিকে টানতে পারে। উপদেষ্টা পরিষদে দুজন ছাত্রনেতা রয়েছেন এবং স্পষ্টতই, প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তদারকির জন্য দুজন ছাত্র নিযুক্ত রয়েছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বলেছেন, আমাদের অবশ্যই দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা -সার্ক পুনরুজ্জীবিত করতে হবে। তিনি আরও বলেছেন যে তিনি চাইবেন বাংলাদেশ সাউথ–ইস্ট এশিয়ান নেশনস অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাস্তবতা পীড়াদায়ক হবে বলে মন্তব্য করেন পিনাক রঞ্জন। তিনি আরও বলেন সব জিনিস আগের অবস্থাতেই রয়েছে: হিন্দুদের ওপর হামলা হয়েছে, দুর্ভাগ্যবশত তাদের আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০০১ সালে বিএনপি–জামায়াত সরকার ক্ষমতায় আসার পরও একই ঘটনা ঘটেছিল ।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব,ওজি/হাসনা