বিএনএ, বরিশাল: এবারের ভরা মৌসুমে বৃষ্টিপাতের ব্যাপক ঘাটতির পরে শরতের অস্বাভাবিক বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলে জনস্বাস্থ্যসহ কৃষি ব্যবস্থায় নানামুখি সমস্যা তৈরী হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এ ধারায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ফসল আবাদ ও উৎপাদনসহ কৃষিখাত। তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই থেকে বরিশাল অঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন এখনো ঝুঁকিমুক্ত বলে দাবি করে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজিসহ আগাম শীতকালীন সবজি ইতোমধ্যে শরতের অসময়ের বর্ষণে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তবে আবহাওয়া অফিস থেকে বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দু-এক দিনের মধ্যেই সারাদেশের মত বরিশালসহ উপকূলভাগ থেকেও বিদায় নিতে শুরু করবে বলে জানান হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক ঘন্টায় বরিশালে প্রায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বরিশালে ঐদিন সকাল ৬টার পূর্ববর্তি ২৪ ঘন্টায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মহানগরীতে আরও প্রায় ৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। এর মধ্যে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১২টা মধ্যেই প্রায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। ফলে বরিশাল মহানগরীসহ সমগ্র উপকূলভাগের জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
চলতি জরিপ-২ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ২২ লাখ ৮ হাজার টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রায় ৮.৭০ লাখ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হলেও বৈরী আবহাওয়া নিয়ে এখনো দুঃশ্চিন্তায় কৃষি যোদ্ধাগণ। তবে নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার নিচে এবং সাগর ফুসে না ওঠায় প্রকৃতিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের আমন কিছুটা নিরাপদ থাকলেও পুরোপুরি ঝুঁকিমূক্ত নয় বলে মনে করছেন কৃষিবিদগণ। গত বছরও ঘূর্ণিঝড় ‘সিত্রাং’য়ের প্রবল বর্ষণ ও ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারের পানিতে বরিশাল অঞ্চলে উঠতি আমনের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
চলতি বছরের জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে কোন বৃষ্টি হয়নি। এপ্রিলে স্বাভাবিকের তুলনায় কিছু বেশী বৃষ্টি হলেও জুন-জুলাইতেও তা ছিল স্বাভাবিকের কম। এমনকি জুলাই মাসে বরিশালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিকের ৫৮% কম। কিন্তু আগস্টে তা ছিল স্বাভাবিকের ৮০% বেশী। এ সময়ে বরিশালে স্বাভাবিক ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে ৭৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া বিভাগ। এমনকি গত সেপ্টেম্বর মাসে বরিশাল অঞ্চলে স্বাভাবিক ৩২৭ মিলিমিটারের স্থলে ২৮৫ থেকে ৩৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও বাস্তবে বৃষ্টির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২% বেশী, ৩৬৬ মিলিমিটার।
অপরদিকে চলতি অক্টোবরে বরিশালে স্বাভাবিক ১৭৬ মিলিমিটারের স্থলে আবহাওয়া বিভাগ থেকে ১৬০-২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের কথা বলা হলেও ১ অক্টোবর সকাল থেকে ১৩ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত প্রায় ২৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বিদায়ের আলামত ইতোমধ্যে লক্ষ্যনীয়। গত সোমবারের পরে বরিশালে নতুন করে আর কোন ভারী বৃষ্টি না হলেও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের উপরে রয়েছে।
আরও পড়ুন: ববি শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেওয়ার অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে
অপরদিকে শ্রাবণের পূর্ণিমার ভারি বর্ষণের পরে আশ্বিনের অতি বর্ষণে বরিশাল অঞ্চলে আগাম শীতকালীন শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতিতে বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়েছে ইতোমধ্যে। বরিশালের বাজারে সরবরাহ ঘাটতির সাথে ৮০ টাকা কেজির নিচে এখন তেমন কোন সবজি মিলছে না। অপরদিকে বর্ষায় ভর করে এবার বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল জুড়েই ডেঙ্গুর সংক্রমণে জনজীবনে কিছুটা আতংক অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে শুধু সরকারি হাসপাতলেই ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে প্রায় ২৮ হাজার নারী পুরুষ ও শিশু ভর্তি হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে ১২৫ জনের। এ ছাড়া চলতি বছর ইতোমধ্যে সরকারি হাসপাতালে প্রায় ৭০ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিএনএনিউজ/ সাইয়েদ কাজল/ বিএম