26 C
আবহাওয়া
২:৪৯ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ৪, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৮ (মাদারীপুর-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৮ (মাদারীপুর-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৮ (মাদারীপুর-১)

বিএনএ, ঢাকা : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে মাদারীপুর-১ আসনের হালচাল।

মাদারীপুর-১ সংসদীয় আসনটি শিবচর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১৮ তম আসন।

YouTube player

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ২০ হাজার ৮ শত ৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪ হাজার ৬৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৫ শত ৯৫ ভোট।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আবুল খায়ের চৌধুরী। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৩ শত ৩৩ ভোট।
ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ১৯৯১ সালে ১৯ মে মৃত্যু বরণ করেন। উপ নির্বাচনে তার ছেল নুরে আলম লিটন প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আবুল খায়ের চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচন বিএনপির আবুল খায়ের চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষনা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুর-ই- আলম চৌধুরী বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪ শত ৫৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৫ হাজার ১ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুর-ই- আলম চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬১ হাজার ১২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবুল খায়ের চৌধুরী । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৩ শত ১২ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নুর-ই- আলম চৌধুরী বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৭ হাজার ১ শত ৭৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭ শত ২৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুর-ই- আলম চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৮ হাজার ৮ শত ৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির খলিলুর রহমান চৌধুরী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৮ শত ৩১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুর-ই- আলম চৌধুরী বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৭ শত ১৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৯ হাজার ৮ শত ৬৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নুর-ই- আলম চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২১ হাজার ৩ শত ৫৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ হাসান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২০ হাজার ৮ শত ৬৪ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামীলীগের  নূর ই আলম চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী নূর ই আলম চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের নূর ই আলম চৌধুরী লিটন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৯১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৮ হাজার ৯ শত ৭২ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের নূর ই আলম চৌধুরী লিটন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী ,হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো:জাফর আহমাদ, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির হিরুল ইসলাম মিন্টু, গোলাফ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির শাহনেওয়াজ প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নূর ই আলম চৌধুরী লিটন বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৭ হাজার ৩ শত ৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এর মো: জাফর আহমেদ। হাতপাখা প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪ শত ৫২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়,ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি, পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর মাদারীপুর-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, মাদারীপুর-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৭.১৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৫.৭৩%, বিএনপি ৯.৩৬%, জাতীয় পার্টি ৩১.০৭%, জামায়াত ইসলামী ২.২৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১১.৬০% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.৭৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬৪.১১%, বিএনপি ৩০.৮০% জামায়াত ইসলামী ১.৮১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.২৮% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৮.০২ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬৬.৯৫%, ৪ দলীয় জোট ৩২.৩৮%, জাতীয় পার্টি ০.২৪ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৪৩% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৮১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৭৬.৬২%, ৪ দলীয় জোট ৭.৩১% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.০৭% ভোট পায়।

মাদারীপুর-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সংসদের চিফ হুইপ আওয়ামী লীগের নূর ই আলম চৌধুরী লিটন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই মরহুম ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী প্রকাশ দাদা ভাইয়ের বড় ছেলে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক এবং জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক কোচ, ঢাকা গোপীবাগের সাবেক কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু। তিনি দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার সাবেক সম্পাদক মরহুম মোতাহার হোসেন সিদ্দিকীর ছেলে।

এছাড়া মনোনয়ন চাইবেন শিবচর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত নাজমুল হুদা মিঠু চৌধুরীর সহধর্মিণী নাদিরা মিঠু চৌধুরী এবং বিশিষ্ট সমাজসেবক ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মাদারীপুর জেলা কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক মো. জহিরুল ইসলাম মিন্টু। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, মাদারীপুর-১ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। সংসদের হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন এই আসন থেকে ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি শিবচর নিজের মতো করে করে সাজিয়েছেন ।পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় শিবচর অংশে উন্নত দেশের আদলে নির্মিত হয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে। নির্মাণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি, শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজসহ না স্থাপনা। শিবচর যেন পদ্মাপাড়ে এক টুকরো সোনার বাংলা। বহুমাত্রিক উন্নয়নের কারণে শিবচর উপজেলা বাংলাদেশের উন্নয়নের একটি মডেল। এক কথায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দক্ষতার পাশাপাশি উন্নয়নের মাধ্যমে জনবান্ধব হয়ে উঠেছেন নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন।

বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি মজবুত নয়। দলীয় কর্মকান্ড কাগজে কলমে। নেতাদের দেখা যায় কালে ভদ্রে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২১৮তম সংসদীয় আসন (মাদারীপুর-১) আসনটিতে আওয়ামী লীগের জয় নিশ্চিত বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/শাম্মী, রেহানা, ওয়াইএইচ, ওজি

আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৭ (গোপালগঞ্জ-৩)

Loading


শিরোনাম বিএনএ