বিএনএ, ঢাকা: শহীদ মিনারে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি-হামলা চালানোর নির্দেশদাতাদের বিচারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের সদস্যরা জড়ো হয়েছেন। বুধবার (১৪ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হতে থাকেন রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের স্বজনহারা ব্যক্তিরা। তারা শহীদ পরিবার ও নিপীড়িত ছাত্র-জনতার ব্যানারে সেখানে উপস্থিত হন।
শহীদ পরিবারের সদস্যরা বলেন, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ ও যুক্তিসংগত আন্দোলনে ঠাণ্ড মাথায় গুলি করে তৎকালীন সরকার এবং সরকারের মদদপুষ্ট পুলিশ বাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। সরকারের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরাও গুলি-হামলা চালিয়েছে। যার জন্য অসংখ্য মানুষ মারা গেছে। শিগগিরই এ গণহত্যার বিচার করতে হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে কোনো মূল্যে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। শেখ হাসিনা দেশকে মেধাশূন্য করতেই বল প্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছেন। আর নিরস্ত্র মানুষের ওপর তার অনুগত পুলিশ বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নিষিদ্ধ মারণাস্ত্র ব্যবহার করেছেন। এই যৌক্তিক আন্দোলনে যারা স্বজন হারিয়েছে তারা দোষীদের বিচার দাবি করছি।
নিহতদের স্বজনরা জানান, তারা এখনো ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কোন ধরনের দৃশ্যমান কিংবা কার্যকর পদক্ষেপ দেখতে পাচ্ছেন না। দ্রুত হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সকল অপরাধীকে গ্রেপ্তার করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরি করে সহযোগিতার ব্যবস্থা চালু করার দাবি জানাচ্ছি।
তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ গণহত্যায় জড়িত সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সবাইকে বিশেষ ট্রাইবুনালে বিচার করা এবং গণহত্যায় জড়িত আওয়ামী লীগ ও দলটির অংগসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা হামলা ও হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করা।
এছাড়া শহীদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রকাশ করা, শহীদদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও মাসিক আর্থিক সহয়তা প্রদান এবং আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, শহীদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে জাতীয় বীরের মর্যাদা দেওয়া, বৈষম্য প্রতিরোধে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন করা এবং জাতিসংঘের অধীনে গণহত্যার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করারও দাবি জানানো হয়েছে মানববন্ধনে।
মানববন্ধনে মধ্যবাড্ডায় নিহত হওয়া হাফিজুর রহমানের বাবা বলেন, “যে খুনিরা পরিকল্পনা করে আমার ছেলের মতো হাজারো ছাত্রকে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করেছে, তাদের সর্বোচ্চ শান্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং আমাদের কষ্ট লাঘবের ব্যবস্থা করতে হবে।”
শনির আখড়ায় নিহত হওয়া জুয়েলের বোন শারমিন সুলতানা বলেন, “এই আন্দোলনে শুধু ছাত্ররা শহীদ হয়নি, অনেক কর্মজীবীও শহীদ হয়েছেন। আমার ভাই নিহত হওয়ার পরেরদিন থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে মৃত্যু সনদের জন্য ঘুরছি। অথচ কর্তৃপক্ষ পোস্টমর্টেমের কথা বলে দিচ্ছে না। আমাদের দাবি, শহীদের পরিবারকে যেন কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়।”
বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম