বিএনএ, ঢাকা: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজধানীজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সাঈদী। এরপরই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে রাজধানীতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
সাঈদীর মৃত্যুর পর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অনেক কর্মীকেই বিএসএমএমইউ’র গেট এবং হাসপাতালের নিচে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তবে তাদের কাউকেই হাসপাতালের ভবনের ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি এবং মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল দেলাওয়ার হোসেন বলেন, আমি সমস্ত অনুরাগী ভাইদের অনুরোধ করব শোককে শক্তিতে পরিণত করুন। ধৈর্য ধারণ করুন। কোনো বিশৃঙ্খলা করা যাবে না। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর লাশ আমরা নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে গিয়ে জানাজা করব।
চকবাজার থেকে আশা কামাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি সাঈদীর অনুসারী। মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে চলে আসেন। তিনি বলেন, শুধু আমি একা নই, অনেকে এসেছেন তাকে শেষবার দেখার জন্য।
সাঈদীর মৃত্যুর পর বিএসএমএমইউ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা জোনের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সালমান ফার্সী।
সাইদীর মৃত্যুর বিষয়ে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ সোমবার রাতে বলেন, ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। যেহেতু তিনি আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ও কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন, এখন তারা কর্তৃপক্ষ তার মরদেহ নিয়ে যাবে।’
তবে কাশিমপুর কারাগার কর্তৃপক্ষ জানায়, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির মৃত্যুর পর লাশ কারাগারে আনার রেওয়াজ নেই। সাধারণত কারা কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে লাশ পরিবারে কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় শোক দিবস ১৫ আগস্টকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে গত কয়েক দিন ধরে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এর মধ্যে সোমবার রাতে জামায়াত নেতা সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হয়েছে।
রাজধানীর বিভিন্ন চেকপোস্টে তল্লাশি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের বিষয়গুলোকে আরও গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে নিরাপত্তা জোরদারের বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, রাজধানীর নিরাপত্তা সময় সময় জোরদার থাকে। এ বিষয়ে আমরা অবগত আছি।
প্রসঙ্গত, আজ সোমবার (১৪ আগস্ট) রাত ৮টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এর আগে বুকে ব্যথা অনুভব করলে রোববার (১৩ আগস্ট) বিকেলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
২০১৯ সাল থেকে কাশিমপুর কারাগারে আছেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। এর আগে ২০১০ সালের ২৯ জুন রাজধানীর শাহীনবাগের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাকে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুণ্ঠন, ধর্মান্তর করাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের আটটি অভিযোগ প্রমাণিত হলে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুটি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
এরপর আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের করা দুটি আপিল আংশিক মঞ্জুর করে বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতিদের মতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সাঈদীর বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়ে সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণা করেন আপিল বিভাগ।
রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করা হলে ২০১৭ সালের ১৫ মে আবেদন খারিজ করে আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ।
দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী ১৯৪০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পিরোজপুরের ইন্দুরকানী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করেন তার বাবার প্রতিষ্ঠিত স্থানীয় একটি মাদরাসায়। তিনি ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন ও পরে খুলনা আলিয়া মাদরাসায় স্থানান্তরিত হন। বাংলা, উর্দু, আরবি ও পাঞ্জাবি ভাষায় দক্ষ এবং ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায়ও তার দক্ষতা রয়েছে।
১৯৮০’র দশকের প্রথমদিকে সাঈদী দেশব্যাপী ইসলামী ওয়াজ-মাহফিল ও তাফসির করা শুরু করেন এবং তার সুন্দর বক্তব্যদানের জন্য দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এ সময়ই তিনি রাজনীতিতে প্রবেশের সিদ্ধান্ত নেন। তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম নেতা নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নির্বাচনী জোট গঠন করে এবং তিনি এই নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
বিএনএ/এমএফ