বিএনএ, বরিশাল: ভবনের ছাদ এবং দেয়াল চুইয়ে পানি প্রবেশ করায় বন্ধ রয়েছে বরিশাল জেনারেল (সদর) হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগের এক্স-রে মেশিন। মেশিন চালু করলেই এক ধরনের বিকট শব্দ আসছে ভেতর থেকে। তাই দুর্ঘটনার আশঙ্কায় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জেনারেল হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগ।
টানা দু’দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার সকালে রোগীদের এক্স-রে করতে গিয়ে এমন সমস্যায় পড়েন হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবদুল জলিল। তিনি জানান, মেশিনে ত্রুটির বিষয়টি বুঝতে পেরে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার-আরএমও এবং সিভিল সার্জনকে তাৎক্ষণিক অবহিত করে এক্স-রে কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে।
তিনি জানান, ‘রেডিওলজি বিভাগের ভবনটি বহু বছরের পুরানো। এ কারণে ভবনের ভেতরের অংশে পলেস্তরা খসে পড়ে অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। এখন ভারী বর্ষা হলেই ছাদ এবং দেয়াল চুইয়ে পানি এক্স-রে রুমে প্রবেশ করছে। ওপর থেকে পানি পড়ে মেশিন ভিজে যাচ্ছে। এমন সমস্যা দীর্ঘ বছর ধরে চলে আসছে।
তিনি বলেন, বরিশালে গত কয়েকদিন টানা বৃষ্টি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আমি ব্যক্তিগত কাজে ছুটিতে ছিলাম। একই দিন ছুটিতে ছিলেন অপর টেকনিশিয়ান সুমাইয়া। শুক্রবার ছিলো সরকারি ছুটি। এ কারণে এক্স-রে বিভাগের কার্যক্রম দুদিন বন্ধ ছিলো।
আব্দুল জলিল আরও বলেন, ‘শনিবার সকালে বিভাগটির দরজা খুলতেই দেখতে পাই এক্স-রে রুমের মেঝে পানিতে তলানো। পানি মুছে রোগীদের এক্স-রে করার জন্য মেশিন চালু করতেই ভেতর থেকে হুঁ হুঁ শব্দ আসতে থাকে। তার মধ্যেই তিনজন রোগীর এক্স-রে করেছি। কিন্তু ধীরে ধীরে শব্দ বাড়তে থাকে।
তিনি বলেন, এক্স-রে মেশিনের কন্ট্রলবক্স এবং ট্রান্সমিটার পানিতে ভিজে ছিলো। ধারণা করা হচ্ছে, এজন্যই ভেতর থেকে বিকট শব্দ হচ্ছে। এভাবে মেশিনটি চালিয়ে রাখলে টিউব ফেটে যেতে পারে। দক্ষ টেকনিশিয়ান ছাড়া এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে তারা।
এ কারণে হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করে তাদের পরামর্শে এক্স-রে মেশিন বন্ধ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), সিভিল সার্জন এবং ঢাকা সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরে চিঠি লেখা হয়েছে।
বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মলয় কৃষ্ণ বড়াল জানান, এক্স-রে মেশিনটিতে পানি ঢুকে সমস্যা হয়েছে। রোববার এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে দেখবো। মেশিনটি দ্রুত চালু করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, ১৯১২ সালে শহরের উত্তর জনপদে স্থপিত হয় বরিশাল সদর হাসপাতাল। একই সময় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের পাশে স্থাপিত হয় এক্স-রে বিভাগ। প্রতিষ্ঠাকালীন সংযোজিত পুরানো পদ্ধতির মেশিন দিয়েই রোগীদের এক্স-রে কার্যক্রম চলছে। তার ওপর দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বন্ধ মেরুদণ্ডের এক্স-রে করার মেশিনটি।
যেই মেশিনটি সচল সেখানে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ জন রোগীর এক্স-রে করা হয়। বিভাগটি বন্ধ থাকলে বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় রোগীদের বাধ্য হয়েই হাসপাতালের সামনে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়।
তবে স্থানীয়রা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের অভিযোগ, রেডিওলজি বিভাগের একমাত্র টেকনিশিয়ান আব্দুল জলিল। তিনি হাসপাতালের একশো গজের মধ্যে পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অংশীদার। তাই পানি ওঠার অজুহাত না-কী পরিকল্পিতভাবে বিভাগটি এক্স-রে বন্ধ করা হয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি।
বিএনএনিউজ/সাইয়েদ কাজল,বিএম