24 C
আবহাওয়া
২:৪৬ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ভূ-রাজনীতির শিকার বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

ভূ-রাজনীতির শিকার বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ

বিএনএ সম্পাদক মিজানুর রহমান মজুমদার

।।মিজানুর রহমান মজুমদার।।

১৭৫৭ সালের ২৩শে জুন, পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাকে পরাজিত করার মাধ্যমে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বাংলার স্বাধীনতা হরন করে নেয়। বাংলার স্বাধীনতা হরন হলেও বাংলার সাধারণ মানুষ কখনোই  অধীনতাকে স্বীকার করে নেয়নি। বরং যখনই তারা সুযোগ পেয়েছে, তখনই অধীনতার শিকল ছিন্ন করার চেষ্টা করেছে। ফকির বিদ্রোহ থেকে শুরু করে বারাসত বিদ্রোহ, ফরায়েজি আন্দোলন, সিপাহী বিদ্রোহ প্রভৃতি বিভিন্ন সুযোগে বাংলার মানুষ নিজেদের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল।  ব্রিটিশ অধীনতা শেষ হয়েও শেষ হলো না।

১৯৪৮ সালে ১৪ আগস্ট পূর্ববাংলাকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার মধ্যে দিয়ে বাঙ্গালির আলাদা রাষ্ট্রের স্বপ্ন ছিনতাই হয়ে যায়। কিন্তু  অজপাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণকারি শেখ মুজিব নামে এক যুবকের চোখে বাঙ্গালি পলাশীর প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে। দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙ্গালি স্বাধীনতা পায়। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় বাংলাদেশ নামে একটি রাষ্ট্র। যার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন থেকে বাংলা, বাঙালি, বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এ শব্দযুগলগুলো বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও জীবনমানেরসঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িত।

কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ইতিহাসের জঘন্যতম রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়। আর তা ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা। সেদিন জার্মানিতে থাকায় বেচেঁ যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কাল রাতে সেনাবাহিনীর কতিপয় বিপথগামী সদস্যরা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতাসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করে ক্ষান্ত হয় নি। ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ রুদ্ধ করে দেয় খুনীচক্র। বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের পরবর্তীতে পুরস্কার দেয়া হয়ে থাকে নানাভাবে। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরির ব্যবস্থা করা হয় আত্মস্বীকৃত খুনীদের জন্য, ফ্রিডম পার্টি তৈরির মাধ্যমে সংসদেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা প্রতিনিধিত্ব করে।

অথচ যে বাঙালির জন্য সারাজীবন নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যকে বিসর্জন দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু, সে বাঙালি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবে সপরিবারে সেটি কখনও তিনি নিজেই চিন্তা করতে পারেননি। বিভিন্ন মাধ্যমে বিশেষ করে দেশী-বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা বঙ্গবন্ধুকে বারংবার হত্যার ছক সম্বন্ধে জানালেও তিনি ছিলেন নির্ভার। তিনি বলেছিলেন, ‘বাঙালি কখনই আমাকে হত্যা করতে পারে না’। কারণ, জাতশত্রু পাকিস্তান বারংবার সুযোগ পেয়েও বঙ্গবন্ধুর পাহাড়সম দৃঢ়তা এবং পশ্চিমা বিশ্বের চাপের কারণে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাহস পায়নি। অথচ পরাশক্তির রোষানলে পড়ে  ভূ-রাজনীতির শিকারে পরিণত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান  ও তার পরিবারের সদস্যরা।

বাংলাদেশর স্বাধীনতার বিরোধীতাকারি যেই পরাশক্তির ইন্দনে ও নীলনকশায় বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করেছিল কতিপয় বিপদগামী সেনা সদস্য। দীর্ঘ ৪৮ বছর পর সেই পরাশক্তি বঙ্গবন্ধুর কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার ষড়যন্ত্র করছে!

কেননা বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতিকে দিয়েছেন স্বাধীনতা। তার কন্যা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া, রুপসা থেকে পাথুরিয়া পর্যন্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের মাধ্যমে চিরচেনা রূপকে বদলে দিয়েছেন। বাংলাদেশ নামের সেই দরিদ্র, মঙ্গা, খরা, বন্যা কবলিত দেশকে পৌঁছে দিচ্ছেন উন্নত বিশ্বের ঠিকানায়। এটি কোন অবস্থায় মেনে নিতে পারছেন না বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও উন্নয়ন বিরোধী ওই পরাশক্তি।

কেন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে শুধু স্বাধীন করে ক্ষান্ত হননি, অর্থনৈতিক মুক্তির প্রকল্প হাতে নেন। এর অন্যতম ছিল বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সম্পদ আহরণ। যাকে আজকের বিশ্ব ব্লু ইকোনমি নাম দিয়েছে।

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে সামিল করতে বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদের ২ নম্বর ধারা অনুযায়ী সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়ন করেন। এর পরপরই সেন্টমার্টিন দ্বীপ সংলগ্ন ১২ মাইল এলাকা জুড়ে ‘টেরিটোরিয়াল সি’ অঞ্চল গঠনের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। বঙ্গবন্ধুর আগে সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনৈতিক চিন্তা কেউ করেনি! বিশ্বের কোনো দেশে এ ধরনের আইনও ছিল না। ১৯৮২ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রনয়ন করা আইন জাতিসংঘ সমুদ্র আইন কনভেনশন হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও পিতার আর্দশ বাস্তবায়নে দেশের উন্নয়ন সমৃদ্ধির জন্য কাজ করতে গিয়ে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ সীমানায় থাকা সম্পদ উত্তরণে পদক্ষেপ নেন। এতেই স্বাধীনতার বিরোধী বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারি পরাশক্তি মাথাচড়া দিয়ে ওঠে। তারা কথিত গণতন্ত্র ও মানবতার নামে চলচাতুরি করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার নীল নকশা কষে যাচ্ছে। যার আলামত এখন দৃশ্যমান। বাংলাদেশে যেন আর একটি ১৫ আগস্ট সংগঠিত না হয়, সেজন্য মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিকে সজাগ থাকতে হবে।

Loading


শিরোনাম বিএনএ