26 C
আবহাওয়া
১০:১৬ অপরাহ্ণ - জুলাই ১৫, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » পলিটিক্যাল মব: ৬ মাসে ১ হাজার ৯৩০ জন খুন!

পলিটিক্যাল মব: ৬ মাসে ১ হাজার ৯৩০ জন খুন!


বিএনএ,ডেস্ক–গত বছরের ৮ আগস্ট সাংবিধানিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূস। জনগণের প্রত্যাশা ছিল ড. ইউনূস নতুন বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু জনগণ তার উল্টোটা দেখেছে, খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চাঁদাবাজি গানিতিকহারে বেড়েছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শেখ হাসিনার আমলের চেয়েও ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। কথায় কথায়, ‘মব’ তৈরি করে মানুষ হত্যার একটি নতুন সংস্কৃতির বিস্তার ঘটেছে।

YouTube player

পুলিশ সদর দপ্তরের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৯৩০ জন খুন হয়েছেন। এর মধ্যে জানুয়ারিতে খুন হন ২৯৪ জন। ফেব্রুয়ারিতে খুনের সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০০ জন। পরের মাসে খুনের সংখ্যা আরো বেড়ে যায়। মার্চে সারা দেশে ৩১৬ জন খুন হয়েছেন। এপ্রিলে ৩৩৬ জন, মে মাসে ৩৪১ জন খুন হন। জুনে চলতি বছরের সর্বোচ্চ খুনের ঘটনা ঘটেছে। এই মাসে সারা দেশে ৩৪৩ জন খুন হয়েছেন। খুনের পাশাপাশি সারা দেশে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক ডাকাতি, ছিনতাই, নারী ও শিশু নির্যাতন এবং অপহরণের মতো অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে।

পুলিশ সদর দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সারা দেশে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে ৩৬৬টি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৭৪টি ডাকাতি হয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। এছাড়া এ ছয় মাসে ১১ হাজার ৮টি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটে গত এপ্রিলে। সারা দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া খুনের মামলার তথ্যের ভিত্তিতে অপরাধ পরিসংখ্যান তৈরি করে পুলিশ সদর দপ্তর।

পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এ বছরে প্রতি মাসেই খুনের ঘটনা বাড়ছে। বেশি খুন হচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন, ঢাকা রেঞ্জ ও চট্টগ্রাম রেঞ্জে। অনেক খুনের পেছনে চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের মতো ঘটনা কাজ করেছে বলে জানা যাচ্ছে। যার সর্বশেষ উদাহরণ পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড। ঢাকার জনবহুল একটা এলাকায় এক রকম উল্লাস করে পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে ওই ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়েছে। পিটিয়ে, কুপিয়ে, নির্যাতন করে, পরনের কাপড় খুলে ফেলে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয় ওই ব্যবসায়ীকে। এরপর বড় একটা পাথর দিয়ে একের পর এক আঘাত করে মাথা থেঁতলে, তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করে ঘাতক। হত্যার শিকার সোহাগ এবং হত্যাকারিরা বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ফলে জনরোষের সবটুকু গিয়ে পড়ে বিএনপি’র উপর। সোহাগ হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গসংগঠন রাজপথে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মিছিল সমাবেশ করেছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে একটি ছাত্র সংগঠনের কতিপয় শিক্ষার্থীরা পরিকল্পিতভাবে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অশ্লীল, অশ্রাব্য ও কুরুচিপূর্ণ শ্লোগান দিয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেশের মানুষ প্রত্যক্ষ করে। এছাড়া পুরান ঢাকার ভাঙ্গারি ব্যবসায়ি হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করে একটি রাজনৈতিক দল তারেক রহমানকে নিয়ে অশ্লীল, অশ্রাব্য ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেওয়ার কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

এই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। তিনি বলেছেন, ‘আমি সুস্পষ্ট কণ্ঠে সমস্ত জাতিসত্তাকে বলতে চাই, বিএনপির নেতাকর্মীকে বলতে চাই, তারেক রহমান সাহেব সম্পর্কে যারা এসব কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দিয়েছে—তাদেরকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনারা রাজপথে নামুন। এবং আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের বিরুদ্ধে এমন প্রতিবাদ জানাই, ঘৃণাবোধ জানাই যে, তারা এই দেশে মানুষ হিসেবে পরিচিত হবে না। এদিকে ব্যক্তি বা দলের সমালোচনা করতে চাইলে সেটি যুক্তি ও তথ্যনির্ভর হতে হবে বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান। রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন জামায়াতের আমির।

উল্লেখ্য, পুরান ঢাকায় এক ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ্য করে, এনসিপি ও ছাত্রশিবিরের অশ্লীল স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জামায়াত আমিরের এই বক্তব্য ওই সব স্লোগান নিয়ে কি না, তা ফেসবুক পোস্টে স্পষ্ট করা হয়নি।

জামায়াতের আমির লেখেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবশ্যই আপনার নিজস্ব অধিকার। এ ক্ষেত্রে অন্যায়ের প্রতিবাদ হোক শালীন প্রতিবাদের ভাষায়। সমালোচনা হোক যুক্তি ও তথ্যনির্ভর। কোনো ব্যক্তি বা দলের চরিত্রহনন একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত ও নিন্দনীয়। মানবাধিকার কর্মী ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য এএসএম নাসির উদ্দিন এলান বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমরা যে অর্জনটা করেছিলাম তার মধ্যে, এখন একটা পলিটিক্যাল দুর্বৃত্তায়ন ঢুকে গেছে। এ উত্তাপেই মূলত এমন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এ ধরনের সংকট নিরসনে সরকারকে কঠোর হতে হবে। দলমত নির্বিশেষে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। এছাড়া, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না।’ প্রশ্ন ওঠেছে, সরকার চালাচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস; তাহলে দায় কেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার উপর আসছে? শান্তিতে নেবেল পাওয়া প্রফেসর ড. ইউনূস কেন দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারছেন না?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থতি চরম অবনতির লাগাম টানতে না পারলে খুব দ্রততম সময়ে ড. ইউনুস সরকার ব্যর্থ ও দেশ অকার্যকর জঙ্গী রাষ্ট্রে পরিণত হবে। সেই সঙ্গে আবারও পথ হারাবে বাংলাদেশ।

বিএনএ/ওজি

Loading


শিরোনাম বিএনএ