বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামে করোনা উপসর্গের রোগী ছাড়াও সাধারণ রোগীদেরও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চরম স্বেচ্ছাচারিতা, ভোগান্তি, ও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব। বুধবার (১৪ জুলাই) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ক্যাব।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রোগীদের সঙ্গে চরম স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠেছে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো। চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের মালিকরা সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙুলি দেখিয়ে নিজেদের খেয়াল-খুশিমতো পরিচালনা করে আসছে। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সংকটে করোনা উপসর্গের রোগীদের বেসরকারি হাসপাতাল নিয়ে গেলেও ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। করোনা সন্দেহে নগরের কোনো বেসরকারি হাসপাতাল আইসিইউ সাপোর্ট দিচ্ছে না। চিকিৎসাসেবা না পেয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষুব্ধ, তাদের অসন্তোষের মাত্রা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এর বাইরে বেসকারি হাসপাতালগুলো বছরের পর বছর চিকিৎসার নামে গলাকাটা ফি আদায় করে মুনাফা করেছে।
বর্তমান করোনা মহামারীর সংককালীন পরিস্থিতিতেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো সাধারণ মানুষের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করছে। বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলির সেবা কার্যক্রম তদারকিতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারে নেতৃত্বে মনিটিরং কমিটি গঠিত হলেও কার্যত একমিটি কাগুজেই সীমিত আছে। এ অবস্থায় বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকে রোগীদের চিকিৎসায় গলাকাটা ফিস আদায়, চরম স্বেচ্ছাচারিতা, রোগী-স্বজনদের চরম ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা বন্ধ ও ভোগান্তি নিরসনে নাগরিক পরিবীক্ষণ জোরদারের দাবি জানিয়েছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব।
এতে বলা হয়, সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত হবার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে করোনায় আক্রান্ত ও আক্রান্ত নন-এমন সব রোগীদের চিকিৎসাসেবা পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। সরকার সরকারি-বেসরকারি সকল হাসপাতালে সকল রোগীর সেবা নিশ্চিতের নির্দেশনা দিয়েছে। কিন্তু বেসকারি হাসপাতালগুলোতে সাধারণ রোগীরা ভর্তি হতে ও চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। প্রতিদিন কোনো না কোনো সাধারণ রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করছে। চিকিৎসাসেবা পেতে রোগীদের ভোগান্তি-হয়রানি, লাগামহীন সেবামূল্য আদায়, সরকারি নজরদারির অভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলো স্বেচ্ছাচারিতায় মেতেছে। তাই ভোগান্তি নিরসনে নাগরিক পরিবীক্ষণ জোরদার ও চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নাই।
বিবৃতিতে আরও বলা হয় বিগত ৩০ মে ২০২০ চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আয়োজিত বৈঠকে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে কোভিড, নন-কোভিড সব ধরনের রোগী ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত হয়। করোনা উপসর্গ কিংবা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়াও বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত সেবার মান তদারকিতে জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন অফিস যৌথ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কিন্তু বাস্তবে তার কোন প্রতিফলন নগরবাসী দেখতে পায়নি। ফলে সাধারণ রোগী ও স্বজনরা অসহায় এবং অনেক জায়গায় বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু বরণে বাধ্য হচ্ছে।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক মালিকরা স্বচ্ছতার সাথে দেশীয় আইন অনুযায়ী হাসপাতাল পরিচালনা করলে, অতিরিক্ত ফিস আদায়, ভুঁয়া ও মনগড়া টেস্ট রেজাল্ট, ভুয়া ডাক্তার, মেয়াদহীন রিএজন্টে, মানহীন ওষুধের ব্যবসা বন্ধ করলে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার অধিকার সুরক্ষিত হবে। একই সাথে হাসপাতালে অভিযানের স্বচ্ছতা ও আইনের অপব্যবহার রোধে চলমান ভেজাল বিরোধী অভিযানের আদলে অভিযান চলাকালে ক্লিনিক মালিক সমিতি ও ক্যাব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের দাবি জানান।
বিবৃতিদাতারা হলেন-ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবদুল মান্নান ও ক্যাব যুব গ্রুপের সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ।
বিএনএনিউজ২৪/আমিন