।। এনামুল হক নাবিদ ।।
বিএনএ, চট্টগ্রাম: দক্ষিণ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি উপজেলার সংযোগ পথ আনোয়ারা উপজেলা। ফলে এই উপজেলার পিএবি সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন যাতায়াত করে হাজার হাজার গাড়ী। চলাচলরত সিএনজি অটোরিকশা ও অন্যান্য গাড়ী ট্রাফিক পুলিশের নামে গোপন ‘কোড নম্বর’ দিয়ে আদায় করা হয় প্রতিমাসে অর্ধ কোটি টাকা। এদিকে ঈদকে ঘিরে আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে ট্রাফিক পুলিশ। বিশেষ করে তাদের টোকেন বাণিজ্যের বাইরে ঈদে ঘরমুখী মানুষকে কেন্দ্র করে যে গাড়ী গুলো আনোয়ারা প্রবেশ করে সেই গাড়ী থেকে চলছে মামলাবাজি। গাড়ী গুলো আটক করে মামলার ভয় দেখিয়ে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভুক্তভোগী চালকরা।
সিএনজি সমিতি সূত্র গুলো বলছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় চার হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অন্যান্য গাড়ি থেকে মাসে অর্ধকোটি টাকা চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। এর নেপথ্যে রয়েছে ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শকসহ পরিবহন সংগঠনের নেতা ও ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ। কথিত লাইনম্যানদের মাধ্যমে এ চাঁদা তোলা হয়। বিশেষ করে তিন জন লাইনম্যান ট্রাফিকের এই গোপন কোর্ড নামের টোকেন গুলো বিক্রি করে। আর এই তিন লাইনম্যান হলো, আলম, জাহেদ ও জাবেদ। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন রয়েছে টোকেন বিক্রির নেপথ্যে।
জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম প্রবেশদ্বার আনোয়ারা উপজেলার চাতরী চৌমুহনী বাজার থেকে এসব গাড়ি আনোয়ারাসহ চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগড়া, বাঁশখালী, চকরিয়া, পেকুয়া ও মহেশখালী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করে। মূলত এই চাতরী চৌমুহনী পর্যন্ত অটোরিকশা আনতে মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে একটি কোড নম্বর নিতে হয় চালকদের। ওই পথ দিয়ে চলাচলকারী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান থেকেও মাসে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে টোকেন বাণিজ্যের কারণে সিএনজি অটোরিকশা গুলো তাদের মত করে সড়ক দখল করলেও ট্রাফিক পুলিশ কোন ভূমিকা রাখছে না। ফলে এই ব্যস্ততম চৌমুহনীতে দীর্ঘ যানজট লেগেই আছে। সিএসজির কোন স্টেশন না থাকলেও দুইটি সড়ক দখল করে থাকে নিজেদের সম্পত্তির মত। তবও নিরব ভূমিকায় ট্রাফিক পুলিশ। দেখে মনে হবে এটি একটি অনেক বড় সিএনজি স্টেশন কিন্তু না। এটি একটি মহাসড়ক। এরকম যত্রতত্র সিএনজি সিএনজি পার্কিং এর জন্য প্রতিদিন হয় যানজটের সৃষ্টি হয়।
এই টোকেন বাণিজ্যের বিষয়ে অনুসন্ধানে দুইজন কথিত লাইনম্যানের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘প্রতিটি অটোরিকশা থেকে মাসিক ৫০০ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। চাঁদার টাকা পুলিশের লোককে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। যেহেতু বেশিরভাগ গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকে না। এমনকি অনেক চালকের লাইসেন্সও নেই। ট্রাফিক পুলিশের আইনি জটিলতা থেকে রেহাই পেতে চালকরা এই চাঁদা দেন।
নাম গোপন করে একাধিক সিএনজি চালক বলেন এখানে সিএনজি চালাইতে হলে টোকেন অথবা মাসিক করতে হবে। যদি না করেন তাহলে আপনাকে পুলিশ দিয়ে ধরায় দিবে সেজন্য আমরাও করলাম। কিন্তু এখন আমাদের আর কেউ সমস্যা করে না। চালকরা আরো জানায়, এসব গাড়ি থেকে প্রতি মাসে অথবা টোকেন বাণিজ্যর টাকা তোলার জন্য বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন মানুষ সেট করা আছে। কালা বিবির মোড়ে একজন, চাতরী চৌমুহনী বাজারে তিনজন, বঙ্গবন্ধুর টানেলের মুখে একজন। তারা প্রত্যেক মাসে টাকাগুলো তুলে একটি মহলের হাতে তুলে দেন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চাতরী চৌমুহনী ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) হাফিজুল ইসলাম, ভাই এগুলো শুনা কথা। এগুলো কিছু নাই। আপনার কাছে তথ্য থাকলে নিউজ করেন।
চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজ বলেন, ভাই আমাদের অফিসার আছে। আপনি একটু মিডিয়া অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেন। ওনি ভালো বলতে পারবে।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।