29.4 C
আবহাওয়া
২:১২ পূর্বাহ্ণ - মে ১৫, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » মহানবীর ‘রওজা মোবারক’ দেখতে কেমন?

মহানবীর ‘রওজা মোবারক’ দেখতে কেমন?

মহানবীর ‘রওজা মোবারক’ দেখতে কেমন?

।। রেহানা ইয়াছমিন ।।

মদিনা। মুসলমানদের তীর্থস্থান, ভালোবাসার নিকুঞ্জ, আবেগের সৌধ-শিখর। কারণ পবিত্র এ ভূমিতেই জীবনের মূল্যবান ১০টি বছর কাটিয়েছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১১ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল চাশতের সময় হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার ঘরে তাঁরই কোলে মাথা রেখে ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। ইন্তেকালের পর সবার ঐকমত্যে হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করা হয়।

পৃথিবীর শ্রেষ্ট মানব, হয়রত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কোথায় দাফন করা হবে, তা নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইনের মধ্যে মতভেদ দেখা দেয়। কেউ বলেন, জান্নাতুল বাকিতে দাফন করা হোক, কেউ বলেন মসজিদে নববিতে দাফন করা হোক, আবার কেউ প্রস্তাব করলেন হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের পাশে সমাহিত করা হোক।

YouTube player

এ অবস্থায় হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহুা আনহু বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, নবিরা যেখানে মৃত্যুবরণ করেন সেখানেই সমাহিত হন। তাঁর এ কথা সবাই মেনে নেন এবং সবার ঐকমত্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হুজরায় যেখানে তিনি ইন্তেকাল করেন সেখানেই সমাহিত করা হয়।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজার পাশে আছেন ইসলামের প্রথম ও দ্বিতীয় খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক ও হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুমার কবর। পাশে আরেকটি কবরের জায়গা খালি। এখানে হবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের কবর।

মসজিদে নববির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সবুজ গম্বুজের নিচে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র রওজা মোবারকের অবস্থান। মানবতার পরম সুহৃদ, মহানবী, শুয়ে আছেন সবুজ গম্বুজের নিবিড় ছায়ায়। এই সবুজ গম্বুজ পৃথিবীর প্রতিটি জনপদকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে। তাই তারা অকৃত্রিম ভালোবাসা ও প্রচন্ড আবেগের টানে সবুজ গম্বুজের একটু ঘ্রাণ নেওয়ার জন্য ছুটে আসে।

মদিনার গম্বুজে খাজ্বরা বা সবুজ গম্বুজটি দেখলেই আবেগের অশ্রু প্রবাহিত হয় দুচোখ ছাপিয়ে। উদ্বেলিত হৃদয়ে তাঁরা সালাম পেশ করেন রওজা পাকে। সেখানে কী আকর্ষণ তা কেবলমাত্র তারাই জানেন। সবুজ গম্বুজের ছায়ায় কী মজা যারা সেখানে গেছেন তারাই বুঝেন। হজে গিয়ে সবুজ গম্বুজ সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ে সবুজ গম্বুজকে ঘিরে রয়েছে অগাধ ভালোবাসা আর গভীর আবেগ।

হজ ও ওমরা পালনকারীদের মদিনা যাওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হলো-নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা মোবারক জিয়ারত করা, রওজায় সালাম পেশ করা। আর চল্লিশ ওয়াক্ত নামাজ তাকবিরে উলার সঙ্গে মসজিদে নববিতে আদায় করা। এর বিনিময়ে নেফাকি বা মনের কুটিলতা দূর হওয়া আর জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্তির কথা বলেছেন নবিজি।

মহানবী ইরশাদ করেছেন যে, আমার রওজা জিয়ারত করলো তার জন্য আমার সুপারিশ ওয়াজিব হয়ে গেলো। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘যে হজ করলো কিন্তু আমার রওজা জিয়ারত করলো না; সে আমার প্রতি জুলুম করলো।’

হযরত মোল্লা আলী কারি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, কিছু লোক ছাড়া সারা বিশ্বের মুসলিমের অভিমত হলো, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা পাকের জিয়ারত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এবং পুণ্যময় ইবাদত। যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা পাকে এলো না, সে যেন নিজের নফসের ওপর জুলুম করলো।

চার মাজহাবের প্রখ্যাত ইমামগণ এ বিষয়ে একমত যে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা পাক জিয়ারতের নিয়ত করা মুস্তাহাব। কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন আমার ওফাতের পর যে আমার রওজা পাক জিয়ারত করলো সে যেন জীবিত অবস্থায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলো।

নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ইরশাদ করেন যে, ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার রওজা জিয়ারত করবে কিয়ামতের দিন সে আমার প্রতিবেশী হবে। আর যে পবিত্র মদিনায় বসবাস করে এখানের দুঃখকষ্টের ওপর সবর করবে তার জন্য কেয়ামতের দিন আমি সাক্ষী থাকব এবং সুপারিশ করবো। আর যে ব্যক্তি হারামে পবিত্র মক্কা অথবা হারামে পবিত্র মদিনায় ইন্তেকাল করবে সে কেয়ামতের দিন নিশ্চিন্তে থাকবে।

মসজিদে নববিতে অবস্থিত মহানবীর রওজা মোবারকে প্রবেশের অনেকগুলো দরজা রয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিম পাশে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারতের জন্য যে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে হয় ওই দরজাকে বাবুস সালাম বলা হয়। বাবুস সালাম দিয়ে প্রবেশ করে রওজায় সালাম শেষে বাবুল বাকি দিয়ে বের হতে হয়। পৃথবীর সব মুসলমানকে যেন মহান সৃষ্টি কর্তা মহানবী ও রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজা জিয়ারতের তৌফিক দান করুন-আমিন।

বিএনএনিউজ/ বাবর

Loading


শিরোনাম বিএনএ