বিএনএ, চট্টগ্রাম: বর্ণাঢ্য নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে উদযাপিত হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। চির নতুনের ডাক দিয়ে বাঙালির জীবনে আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ; বাঙালির প্রাণের উৎসব। দিকে দিকে চলছে বৈশাখের জয়গান, নতুনের আবাহন।
চট্টগ্রামবাসী জাতি-ধর্ম, বর্ণ-লিঙ্গ নির্বিশেষে এক হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রায়। মৌলবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের আক্রমণ থেকে বাংলার সংস্কৃতিকে রক্ষা করে অন্ধকারের জীবকে রুখে দেওয়ার দৃপ্ত শপথে বাঙালিকে জেগে ওঠার আহ্বান জানানো হয়েছে এসব আয়োজনে।
পহেলা বৈশাখে জেগেছে চট্টগ্রামের সিআরবির শিরিষতলা, ডিসি হিল, শিল্পকলার অনিরুদ্ধ মুক্তমঞ্চ। মঙ্গল শোভাযাত্রার ধ্বনি পৌঁছে গেছে নগরের ঘরে ঘরে। তাপদাহ আর প্রখর রোদ উপেক্ষা করে প্রাণের সম্মিলনে এক হয়ে মানুষ পহেলা বৈশাখের মতো আয়োজনের বিস্তার ঘটানোর তাগিদ দিচ্ছে।
প্রতিবছরের মতো এবারও চট্টগ্রামে বর্ষবরণের বড় দু’টি আসর বসেছে সিআরবির শিরিষতলা ও ডিসি হিলে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিল্পকলা একাডেমিতে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরেও ছিল প্রাণের মেলা। অন্যদিকে, নগরীতে চবি’র চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা, চারুশিল্পী সমন্বয় পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করেছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদসহ আরও বিভিন্ন সংগঠন এককভাবে বর্ষবরণের আয়োজন করেছে।
নগরীর সিআরবির শিরিষতলায় এবার পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ষোড়শ আয়োজন শুরু হয় রোববার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ভায়োলিনিস্ট চিটাগংয়ের বেহালা বাদনের মধ্য দিয়ে। নববর্ষ উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রামের উদ্যোগে দিনব্যাপী এই আয়োজনে উদীচী চট্টগ্রাম, সঙ্গীত ভবন, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, সুর সাধনা সঙ্গীতালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে সাংস্কৃতিক ফোরাম, স্বরলিপি সাংস্কৃতিক ফোরাম, সৃজামী, অদিতি সঙ্গীত নিকেতনসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা সম্মিলিত গান পরিবেশন করেন।
এছাড়া বোধন আবৃত্তি পরিষদ, প্রমা আবৃত্তি সংগঠন, শব্দনোঙ্গর ও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসসহ কয়েকটি সংগঠনের শিল্পীরা বৃন্দআবৃত্তি পরিবেশন করেন। ওড়িষি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, নৃত্যনীড় ও রাগেশ্রীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা নৃত্য পরিবেশন করেন।
নগরীর ডিসি হিলের মুক্তমঞ্চে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আয়োজন এবার ৪৬ বছরে পদার্পণ করেছে। সকাল সাড়ে ৬টায় কায়া আশ্রমের শিল্পীদের ভরতনাট্যম নৃত্যের মধ্য দিয়ে ডিসি হিলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শুরু হয়। সঙ্গীত ভবন, গীতধ্বনি, ছন্দানন্দ, সুরসাধনা, উদীচী চট্টগ্রামের একাংশ, সৃজামি সাংস্কৃতিক অঙ্গন, খেলাঘর মহানগর, সুন্দরম শিল্পী গোষ্ঠীসহ বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
নটরাজ নৃত্যাঙ্গন একাডেমি, স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ডান্স, ওডিসি অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার, ঘুঙুর নৃত্যকলা কেন্দ্র, সঞ্চারী নৃত্যকলা একাডেমি, সুরাঙ্গন বিদ্যাপীঠ, দ্য স্কুল অব ক্লাসিক অ্যান্ড ফোক ডান্স, নৃত্যানন্দন, নৃত্য নিকেতন, অঙ্গনা নৃত্যকলা একাডেমি, ধ্রুপদ নৃত্য নিকেতন, সৃষ্টি কালচারাল ইনস্টিটিউট, নৃত্যরূপ একাডেমি, কৃত্তিকা নৃত্যালয় ও নিপ্পন একাডেমির শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশন করেছেন। এছাড়া বোধন আবৃত্তি পরিষদ, উচ্চারক আবৃত্তি কুঞ্জ, নরেন আবৃত্তি একাডেমি, বোধন আবৃত্তি পরিষদ, শৈশব, তারুণ্যের উচ্ছ্বাস, স্বরনন্দন প্রমিত বাংলা চর্চা কেন্দ্র ও প্রমা আবৃত্তি সংগঠনের শিল্পীরা বৃন্দ আবৃত্তিতে অংশ নেন।
গত বছরের দুঃসহ স্মৃতি পেছনে ফেলে বাংলা নববর্ষে সবার জীবন মঙ্গলময় হয়ে উঠুক। এমন প্রত্যাশা সকলের।
বিএনএনিউজ/ বাবর মুনাফ/হাসনা