বিএনএ ডেস্ক: উৎসব, উদযাপনহীন আরও একটি বাংলা নতুন বছরের যাত্রা শুরু হলো। মঙ্গলবার চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে ১৪২৭ সনকে বিদায় জানিয়ে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হল নতুন বছর ১৪২৮। কিন্তু গতবারের মত এবারও ভিন্ন এক পরিস্থিতিতে এলো অসাম্প্রদায়িক এই উৎসব।করোনা ভাইরাসে মৃত্যু ও সংক্রমণ বৃদ্ধির উদ্বেগে আজ থেকে দেশ জুড়ে জীবন যাত্রার ওপর সাতদিনের জন্য কঠোর বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। বেদনা আর উদ্বেগের এই সময়ে সবার আপন নীড়ে, মনের ঘরে বাংলা নববর্ষ বরণ।
নাচ আর গানে প্রথম সূর্যোদয় কিংবা নববর্ষের প্রথম দিনে মেলা এবং এখানে সেখানে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছেটা এবারও তুলে রাখতে হলো। ফলে বাধ্যতামূলক ঘরবন্দী জীবনে এবার ঘরোয়াভাবে উদযাপন করতে হচ্ছে বাঙালির সর্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ।
পহেলা বৈশাখকে ঘিরে প্রতিবছর গ্রামগঞ্জ থেকে শহর-বন্দর পর্যন্ত প্রাণের আনন্দে উদ্বেলিত নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, শিশু, কিশোর-কিশোরীরা।দেশের বিভিন্নস্থানে বসে বৈশাখী মেলা। মেলায় গান-বাজনা, যাত্রাপালাসহ নানা আয়োজনে উঠে আসে লোকজ সংস্কৃতির নানা সম্ভার। ঘরে ঘরে চলে বর্ষবরণের আয়োজন।
বাংলা নববর্ষকে প্রাণের আনন্দে বরণ করে নেয় এদেশের মানুষ। গত দিনের ব্যর্থতাকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে জেগে ওঠে সবাই। কিন্তু মহামারি করোনা ভাইরাস সবকিছু কেড়ে নিয়েছে। চারদিকে নিস্তব্ধতা! কোথাও কোনো রঙের খেলা নেই, মানুষের চলাচলেও কোন আনন্দ নেই।
রাজধানীতে বাংলা নববর্ষকে বরণের প্রধান অনুষঙ্গ রমনা বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান।প্রতিবারের মতো সেখানে চলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান। বছরের প্রথম সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই মুখরিত হয়ে ওঠে রমনার সবুজ চত্বর। নতুন প্রভাতের প্রথম সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই গান আর নৃত্যের তালে নতুন আলোকে বরণ করে নেয় তারা। বাংলা নববর্ষ উদযাপনের সঙ্গে ছায়নটের সম্পর্ক নিবিড়ভাবে জড়িত।
রমনা বটমূলে ছায়ানটের বাংলাবর্ষ বরণের এই চিরচেনা দৃশ্য অর্ধশতাধিক বছরের ইতিহাস। আজ বাংলা বছরের প্রথম দিনে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে আছে রমনা বটমূল। শুধু এবার নয়, গত পহেলা বৈশাখেও এমন প্রাণহীন ছিল বর্ষবরণের এই ঐতিহ্যস্থল। কারণ করোনা সংক্রমণের জন্য নববর্ষ বরণের সব উৎসব বন্ধ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে প্রতিবার বের করা হয় মঙ্গল শোভা যাত্রা।করোনার কারণে এবার ঐতিহ্যবাহী এই মঙ্গল শোভাযাত্রাও এবার হলোনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ও তার আশেপাশের সড়কগুলো রঙহীন, বর্ণহীন, প্রাণহীন বর্ষবরণের স্বাক্ষী হয়ে আছে।
এছাড়াও,বর্ষবরণের দিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের তত্ত্বাবধানে সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও এবার নেই।
তবে বাঙালির হাজার বছরের বর্ষবরণের সংস্কৃতিকে তো আর পুরো মুছে ফেলা যায়না।তাই দেশজুড়ে অনেকে ঘরবন্দী থেকেই নতুন বছরকে বরণ করছে। বর্ষবরণের এসব আয়োজন দেখা যাচ্ছে ডিজিটাল মাধ্যমে।
করোনাসহ সকল আধার কেটে মানুষের মনের ঘরে আলো ফুটুক, নবশক্তির দুয়ার খুলে যাক, বয়ে আনুক আনন্দের অমিয়ধারা আগামির জীবনকে সুন্দর করুক এবারের রঙহীন, নিরব বর্ষবরণ।নতুন বাংলা বছরে সবার মঙ্গল হোক।
বিএনএনিউজ/আরকেসি