বিএনএ, ইসলামিক ডেস্ক: ইফতার অর্থ উপবাস নিরসন করা। ভোর থেকে সারা দিন ‘সাওম’ পালন শেষে সূর্যাস্তের পর প্রথম যে পানাহারের মাধ্যমে উপবাস নিরসন করা হয়, তাকে ‘ইফতার’ বলে। যে খাদ্য বা পানীয় দ্বারা ইফতার করা হয়, তা হলো ‘ইফতারি’।
ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। কোরআন- হাদিসে উল্লেখ রয়েছে এমন দোয়া উত্তম। এছাড়া নিজের ভাষায় নিজের মতো দোয়া করা যায়। ইফতারের আগে এই দোয়া পড়া সুন্নাত, ‘আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু’। অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার জন্য আমি রোজা রেখেছি, আপনার রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করা উত্তম। ইফতারের আগেই ইফতারি সামনে নিয়ে অপেক্ষা করা এবং যথাসময়ে ইফতার করা সুন্নাত। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে রোজাদারের দোয়া আল্লাহর কাছে এতই আকর্ষণীয় যে আল্লাহ তাআলা রমজানের সময় ফেরেশতাদের উদ্দেশে ঘোষণা করেন, ‘রমজানে তোমাদের পূর্বের দায়িত্ব মওকুফ করা হলো এবং নতুন দায়িত্বের আদেশ করা হলো, তা হলো আমার রোজাদার বান্দাগণ যখন কোনো দোয়া মোনাজাত করবে, তখন তোমরা আমিন! আমিন!! বলতে থাকবে।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক)।
আল্লাহর সন্তুষ্টি মুমিনের জীবনের লক্ষ্য। আনুগত্যে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, তাই মুমিনেরা ইবাদতে আনন্দ লাভ করেন। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুটি খুশি; একটি ইফতারের সময়, অপরটি আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। আল্লাহ তাআলার নির্দেশ, ‘তোমরা সন্ধ্যা পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো।’ এই আদেশ পালনের আনন্দ প্রকাশিত হয় ইফতারের মাধ্যমে।
ইফতার ও সাহরীতে প্রয়োজন স্বাস্থ্যসম্মত হালাল খাবার। কারণ, হালাল খাদ্য ও হালাল উপার্জন রোজা, নামাজ ও যাবতীয় ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত। তাই ইফতার ও সাহরীতে চাই বৈধ উপার্জনের হালাল খাবার।
খেজুর দ্বারা ইফতার করা সুন্নাত; যেকোনো ফল দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নাত আদায় হবে। মিষ্টান্ন দ্বারা ইফতার করলেও সুন্নাত পালন হবে। যদি তা–ও সম্ভবপর না হয়, তাহলে যেকোনো হালাল খাদ্যবস্তু দ্বারা এমনকি শুধু পানি দিয়েও ইফতার করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দ্বারা; নিশ্চয়ই পানি পবিত্র।’ (তিরমিজি ও আবু দাউদ; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)।
ইফতার করা যেমন ফজিলতের, ইফতার করানোও তেমনি বরকতের। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার গুনাহ মাফ হয়ে যাবে, সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে এবং রোজাদারের সওয়াবের সমপরিমাণ সওয়াব সে লাভ করবে। তবে ওই রোজাদারের সওয়াব কম করা হবে না।’ সাহাবায়ে কিরাম বললেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আমাদের অনেকেরই রোজাদারকে ইফতার করানোর সামর্থ্য নেই।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘পানিমিশ্রিত এক পেয়ালা দুধ বা একটি খেজুর অথবা এক চুমুক পানি দ্বারাও যদি কেউ কোনো রোজাদারকে ইফতার করায়, তাতেও সেই পরিমাণ সওয়াব পাবে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তিসহকারে আহার করাবে, আল্লাহ তাআলা তাকে হাউসে কাউসার থেকে এমন পানীয় পান করাবেন, যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করার পূর্ব পর্যন্ত তৃষ্ণার্ত হবে না।’ (মুসনাদে আহমাদ)।
বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম