বিএনএ, ঢাকা: বছরের শুরুতে ঘোষিত ছুটির তালিকায় পুরো রমজানজুড়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি ছিল। ফলে শিক্ষকরাও রোজায় ছুটির প্রত্যাশায় ছিলেন। বেশিরভাগ অভিভাবকও স্কুল বন্ধ রাখার পক্ষে। রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নাকি বন্ধ থাকবে, তা ঠিক করা নিয়ে তিনদিনের ‘নাটকীয়তা’ দেখেছে দেশবাসী। ক্ষণে ক্ষণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে তটস্থ হয়ে পড়েন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। সিদ্ধান্তে অনড় থেকে শেষ পর্যন্ত নিজেদের পক্ষেই আদালতের আদেশ পেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ফলে প্রাথমিক বিদ্যালয় ২১ মার্চ এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৫ মার্চ পর্যন্ত খোলা থাকছে। এছাড়া মাদরাসায় ২১ মার্চ এবং কলেজে ২৪ মার্চ পর্যন্ত চলবে ক্লাস।
অভিভাবক-শিক্ষকদের প্রশ্ন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন রমজানে দুই সপ্তাহ স্কুল-কলেজ খোলা রাখছে কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে যুক্তি তুলে ধরেছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শিক্ষামন্ত্রী মতামত জানিয়ে বলেন, নতুন কারিকুলামে শিখনঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিখনঘণ্টা পূরণে বছরের নির্দিষ্ট সময় স্কুলে ক্লাস চালাতেই হবে। বাৎসরিক ছুটি, সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে বছরের প্রায় ১৫০ দিন এমনিতেই স্কুল বন্ধ থাকে। ষান্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়নের সময় বাদ দিলে যে দিনগুলো থাকবে, তা শিক্ষার্থীকে শেখানোর জন্য পর্যাপ্ত নয়।
অধ্যাপক মশিউজ্জামা বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম মুখস্তনির্ভর নয়। আগে দেখা যেত, ছুটির মধ্যে শিক্ষার্থীদের কয়েক অধ্যায় পড়া দিয়ে দিতেন শিক্ষকরা। সেসব অধ্যায় নিয়ে ক্লাস হোক বা না হোক, ওইসব অধ্যায় পড়ানো শেষ বলে ধরে নেওয়া হতো। বছর শেষে অধ্যায়গুলো থেকে প্রশ্নপত্র তৈরি করে পরীক্ষাও হতো।এখন বিষয়টি তেমন নয়। কারিকুলাম বাস্তবায়নে শিক্ষক প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের প্রতিষ্ঠানের বাইরে তথ্য সংগ্রহসহ নানান কারণে আগের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন।
বর্তমানে সাপ্তাহিক ছুটি দুদিন। শুধু সাপ্তাহিক ছুটিতেই বছরে ১০৪ দিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। ফলে শিখনঘণ্টা ঠিক রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে কমপক্ষে ১৮৫ দিন বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেই হবে।
অধ্যাপক এম তারিক আহসান বলেন, ‘দেখুন-উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগের কারণে ছুটি দিতে হয়। এতে সেখানে শিখনঘণ্টা কমে যায়। আবার কোনো কোনো এলাকায় বেশি শীত পড়লেও ছুটি দিতে হচ্ছে। এতেও শিখনঘণ্টা কমে যাচ্ছে। এসব কারণে শিখনঘণ্টা হিসাব করে ১৮৫ দিনের বেশি শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য শিক্ষাপঞ্জিকা করা উচিত হবে।’
রাজধানীর একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ নাম-পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, ‘অষ্টম-নবম ও দশম শ্রেণির মুসলিম শিক্ষার্থীরা অনেকে রোজা রাখে। ষষ্ঠ-সপ্তমের শিক্ষার্থীরাও অনেকে রোজা রাখার চেষ্টা করে। এজন্য স্কুলে আসতে চায় না। রমজানে স্কুল খোলা রেখে খুব বেশি লাভ হয় না। আমরা মনে করি- পড়ালেখাটা মুখ্য নয়। সরকারের কিছু আমলারা এ সিদ্ধান্ত নেন। এটা শিক্ষকদের ওপর জুলুম করা ছাড়া আর কিছু নয়। ’আমরা ছুটি কিছুটা কমিয়েছি শিক্ষার্থীদেরই স্বার্থে। হ্যাঁ, রমজানে শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের কিছুটা ভোগান্তি হতে পারে। তবে বৃহৎ স্বার্থে সবাইকে একটু ধৈর্য ধরতে হবে, ভোগান্তি সইতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনার কাজে হাত দিয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের দক্ষ-যোগ্য করে গড়ে তুলতে চাই। ধরাবাঁধা নিয়মে পড়ালেখা করলে আমরা পিছিয়েই থাকবো। সেখান থেকে বেরিয়ে যুগোপযোগী ও বৈশ্বিক সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। নতুন এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নে শিক্ষক-অভিভাবকসহ সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বিএনএনিউজ/ রেহানা/ বিএম