29 C
আবহাওয়া
৭:৩৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দখিনা হাওয়ায় সেজেছে প্রকৃতি

দখিনা হাওয়ায় সেজেছে প্রকৃতি

দখিনা হাওয়ায় সেজেছে প্রকৃতি

।। আর করিম চৌধুরী।।

বিএনএ:বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিল নেশা, কারা যেন ডাকিছে পিছে বসন্ত এসে গেছে।প্রকৃতি সেজেছে তার নতুর রূপে। উত্তরের বাতাসকে বিদায় জানিয়ে শীতের মৌনতা ভেঙ্গে সময়ের পালাবদলে আবারও দুয়ারে এসে হাজির হয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। আজ পহেলা ফাগুন, বসন্তের প্রথম দিন। বসন্ত মানেই পূর্ণতা। গাছে গাছে নতুন পাতা, স্নিগ্ধ সবুজ কচি পাতার ধীর গতিতে বাতাসের সঙ্গে বয়ে চলা জানান দিচ্ছে নতুন কিছুর।

দখিনা হাওয়া, শুকনো ঝরা পাতার নুপুরের নিক্কন, প্রকৃতির মিলন এ বসন্তেই। আগুন ঝরা ফাগুনের আবাহনে ফুটেছে পলাশ,শিমুল।কৃষ্ণচুড়াসহ নানা ফুলের সঙ্গে সৌরভ ছড়াচ্ছে আমের মুকুলও। মৌমাছির দল গুনগুন করছে আম্রমুকুলে।গাছের শাখা-প্রশাখায় স্বর্ণালী ফুলগুলো চারিদিকে যেনো ফাগুনের রূপের ব্যঞ্জনাময় উৎসবের জানান দিচ্ছে।

ফাগুন শুধু প্রকৃতিকেই উচ্ছ্বাস আর আবেগের রঙে রাঙ্গায় না, সেই আবেগ ছড়িয়ে দেয় প্রতিটি তরুণ প্রাণে। প্রাণের টানে হোক বা প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই হোক এই ঋতু মনকে করে উতলা আর বাঁধনহারা।দখিনা হাওয়ায় গাছের কুড়ির নাচন, আর ভ্রমরের মাতাল ছুটে চলা সবই ঘটে এ বসন্তে।

ঋতুরাজ বসন্ত

শীতের খোলস ছেড়ে জীর্ণ প্রকৃতি নব যৌবনে  নিজেকে একটু একটু করে সাজাতে শুরু করেছে। সূর্যমুখী, গাঁদা, মালতি, মাধবী, ডালিয়াসহ নাম না জানা নানা ফুলে মধুর নেশায় প্রজাপতি আর  ভ্রমরের ছুটে চলা। পলাশ, শিমুল ফুলে পাখিদের নাচন। এ যেন কেবলই ঋতুরাজ বসন্তের চিরচেনা রূপ। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। প্রকৃতিতে নতুনের বারতা নিয়ে আসে বসন্ত। ফুলের কলির মৃদুলয়ে দোল খাওয়া যেন নতুনেরই আবাহন।প্রকৃতিকে নতুন করে জাগিয়ে তোলে  বসন্তের বাতাস। সাহিত্যে প্রেম আর মিলনের ঋতু হিসেবেও বসন্ত সুপরিচিত।

অনুভব ও আবেগের এই ঋতুতে  গ্রামের মেঠো পথে কখনও কখনও দূর সীমানা থেকে কানে ভেসে আসবে কোকিলের কুহু কুহু কলতান।রাতের আধাঁরে ধিকি ধিকি করে জলে উঠবে জোনাকী।

বসন্তের সূচনার এই দিনটি এখন বাঙ্গালির সর্বজনীন প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। পয়লা ফাগুনকে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বরণ করে নিচ্ছে বাঙালি। বসন্ত মানেই অন্যরকম এক অনুভূতি।

বসন্ত মানেই মৃদু হাওয়ায় প্রিয় মানুষের হাত ধরে হাঁটা। মিলনের ঋতু বসন্তই মনকে সাজায় বাসন্তী রঙে, জীর্ণতা সরিয়ে মানুষকে নতুন শুরুর প্রেরণা জোগায়। বসন্তের শুরুর দিনে রাঙা মনের সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে পোশাকেও, রয়েছে ফাগুনের আগুন ঝরানো রঙ। বাসন্তি রঙের শাড়ি পরে খোঁপায় গাঁদাসহ নানা রঙের ফুল গুঁজে দিয়েছে বাঙালি নারী। তরুণীদের পরনে শোভা পাচ্ছে বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় বাসন্তী ফুল।
তরুণীদের পরনে শোভা পাচ্ছে বাসন্তী রঙের শাড়ি, খোঁপায় বাসন্তী ফুল

তরুণদের বসনেও বাসন্তী ছোঁয়া। বাদ যায়নি শিশু কিংবা বয়োবৃদ্ধরাও। এটি এমন এক প্রকৃতি যা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। বসন্তের আগমনী গানে পুরো বাংলাদেশ যেন আট পৌরের আগল ভেঙ্গে বসন্তের আহ্বানে জেগে উঠেছে।

ফাগুনের আগুন যে মনে ধরছে—তা গত কয়েক দিনের প্রকৃতির চিত্রপটেই বোঝা যাচ্ছিল। শীতের রুক্ষতা দূরে করে মনকে উদাস করে দিচ্ছিল মৃদু বাতাস। ষড় ঋতুর বাংলায় বসন্তের রাজত্ব প্রকৃত একেবারে সিদ্ধ। ঋতুরাজ বসন্তের বর্ণনা কোনো রঙতুলির আঁচরে শেষ হয় না। কোনো কবি-সাহিত্যিক বসন্তের রূপের বর্ণনায় নিজেকে তৃপ্ত করতে পারেন না। তবুও বসন্ত বন্দনায় প্রকৃতিপ্রেমীদের চেষ্টার কোন অন্ত থাকে না।

বাঙালির ইতিহাস আবেগের। এ আবেগ যেমন মানুষে মানুষে, তেমনি মানুষের সঙ্গে প্রকৃতিরও বটে। দিন-ক্ষণ গুনে বসন্ত বরণের অপেক্ষায় থাকে বাঙালি। কালের পরিক্রমায় বসন্ত বরণ আজ বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম উৎসবে পরিণত হয়েছে।

তবে, বসন্ত শুধু বাঙালি জীবনে কেবল আনন্দের নয়। ফাগুনের শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙ মনে করিয়ে দেয় বায়ান্নের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের কথা। ফুল-ফাগুনের এই বসন্তেই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারসহ আরও অনেকে। যাদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিল প্রাণের ভাষা বাংলা।ফাগুনের আগুনে, মন রাঙিয়ে দীপ্ত চেতনায় উজ্জীবিত হোক বাঙালি।

বিএনএনিউজ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ