বিএনএ,কুবি: কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী নিয়ে ‘ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী: আত্মপরিচয় ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার(১৪ জানুয়ারি) গল্লাক আদর্শ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হরিপদ দাসের সভাপতিত্বে কলেজ মিলনায়তনে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
কথাসাহিত্যিক শাহমুব জুয়েলের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গবেষক ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জি এম মনিরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুর এর স্থানীয় পত্রিকা পল্লিকাহিনীর সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন। এছাড়া কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ হরিপদ দাস বলেন, ত্রিপুরা নামটা কোন ছোটখাটো নাম নয়। এখনো প্রাচীন আমলের বৌবিহারগুলোতে দেখা যায় তারা কত সুন্দরভাবে তপস্যার মাধ্যমে জ্ঞান চর্চা করেছিল। এ অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিল অনেক জ্ঞানী ব্যক্তি যারা এখনো আমাদের অনুপ্রেরণা যোগায়। পরবর্তীতে এ ত্রিপুরা নামটিকে কেটে ঝেড়ে কুমিল্লা নামকরণ করা হয়েছে। কুমিল্লাকে খণ্ডবিখণ্ড করে আবার বিভিন্ন নামে নামকরণ করা হয়েছে। ভারতে ঠিকই ত্রিপুরা নামটা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. জি এম মনিরুজ্জামান বলেন, আমি খুব শিগগিরই ত্রিপুরা জনজাতির সাহিত্য নিয়ে উচ্চতর গবেষণা করবো। তাদেরকে নিয়ে সবসময় স্বপ্ন দেখি, যার কারণে আমি এতদূর আসতে পেরেছি। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন ত্রিপুরা জনজাতির বসবাস। তারা বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের তৃতীয় বৃহত্তম আদিবাসী। অপরদিকে বাঙালির সাথে তাদের পার্থক্য শুধু সংখ্যায়। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ত্রিপুরারা এদেশে আসে। তারা এমন কিছু ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে যা প্রকৃতি পূজার পর্যায়ভুক্ত। ত্রিপুরারা নিজেদের কখনো সনাতন কখনো খ্রিস্টান বলে দাবি করে। তারা নিজেদেরকে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তাদের ‘ত্রিপুরাব্দ’ নামে বর্ষপঞ্জি রয়েছে। ত্রিপুরাদের নিজস্ব ভাষা হচ্ছে ‘ককবরক’। ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত ত্রিপুরা রাজ্যের ভাষা ছিল ‘ককবরক’। এদের ভাষার নিজস্ব কোন লিপি নেই। তারা তাদের নিজস্ব ভাষায় গল্প, আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করে। ত্রিপুরা রাজারা ‘ককবরক’ ভাষার পরে বাংলা ভাষাকে রাজভাষার মর্যাদা দেন। বর্তমানে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ত্রিপুরা জনজাতি বাস করে। ১৯৯১ সালের প্রতিবেদনে আদিবাসীদের মধ্যে ত্রিপুরা জাতি সংখ্যায় তৃতীয়। আধুনিক ত্রিপুরা নারী-পুরুষেরা বাঙালিদের মত পোশাক পরিধান করে। তাদের বিভিন্ন প্রকার রান্নার প্রক্রিয়া ও রান্নার পৃথক পৃথক নাম রয়েছে। এদের ১৪ জন দেবতার সাথে হিন্দুদের দেবতার মিল পাওয়া যায়। এদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত। ত্রিপুরাদের অন্যতম পূজা ও নৃত্য হলো ‘কাথাররক’। এদের বিবাহ পদ্ধতি তিন ধরনের হয়ে থাকে। ‘বৈসু’ ত্রিপুরাদের জাতীয় উৎসব। বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির পরিচয় দিতে এদেশে বসবাসকারী ত্রিপুরা ও এজাতীয় অন্যান্য জনজাতির সাহিত্যকে সাথে না রাখলে সে পরিচয় অসম্পূর্ণই থেকে যাবে।
ত্রিপুরা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে উচ্চতর গবেষণার সম্ভাবনা আছে জানিয়ে তিনি তরুণ গবেষকবৃন্দকে গবেষণাকর্মে আহ্বান জানান। সবশেষে বাংলাদেশে বসবাসকারীকে সকলকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনে ভূমিকা রাখতে বলেন।
বিএনএ/ হাবিবুর রহমান, ওজি