বিএনএ, ময়মনসিংহ: গাজীপুরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ পাঁচ বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় আসলাম মিয়া (৩০) নামে একজন নিহত ও অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।
নিহত আসলাম মিয়া ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের রৌহা গ্রামের মৃত মোছলেম উদ্দিন ও হোসনা খাতুনের ছেলে। তিনি পেশায় সবজি ব্যবসায়ী। স্ত্রী ফাতেমা খাতুন, দুই ছেলে শুভ (১১), আবু রায়হান (২) ও এক মেয়ে আরিফা (৮)। ও বৃদ্ধ তার মা হোসনা খাতুনকে নিয়ে ৬ জনের সংসার ছিল।
শালটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নাজমুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, আসলাম মিয়া পেশায় সবজি বিক্রেতা। প্রতিদিনই গফরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সবজি কিনে ঢাকায় বিক্রি করতেন। প্রায় প্রতিদিনই কাঁচামাল নিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করতেন। আজও যে সবজি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্য গাজীপুরের ভাওয়াল রেল স্টেশনে ভোররাত ৪ টার দিকে ট্রেনের ইঞ্জিনসহ পাঁচ বগি লাইনচ্যুত হয়ে আসলাম ঘটনাস্থলেই মারা যায়। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।
স্থানীয় সুত্র জানায়, আসলাম মিয়া শাকসবজি, মুরগী, ডিম, কবুতরের বাচ্চাসহ ১৫ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনের চড়ে গফরগাঁও থেকে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেক্স ট্রেনে যাত্রা করেন। গাজীপুরের ভাওয়াল রেল স্টেশন এলাকায় ইঞ্জিনসহ বগি লাইনচ্যুত হয়ে ঢাকাগামী মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের দুর্ঘটনায় নিহত হন।
আসলামের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন বলেন, আমার দুই ছেলে, এক মেয়ে, ওদের বাবা তো ট্রেন দুর্ঘটনায় মারা গেল। এখন সন্তানদের কি হবে।
আহাজারী করে তিনি আরও বলেন, আমার জামাই নির্দোষ গো আমার জামাইয়ে তো কোন দোষ করছে না, তাহলে কেন এভাবে তার মৃত্যু হলো। দ্রুত আমার স্বামীর মরদেহ হস্তান্তরের দাবী জানাই।
মা হোছনা খাতুন বলেন, আমার বাবা লাশ হয়ে গেছে। আমার বাবাকে আমার কুলে আইনা দেন। আমার বাবাকে কেন মারলো, যারা মারলো তাদের বিচার চাই।
ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া নিহতের ছেলে শুভ মিয়া বলেন, যাদের জন্য ট্রেন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছে তাদের বিচার চাই।
প্রতিবেশী বাদল মিয়া বলেন, আসলাম খুব ভালো মানুষ ছিল। কাঁচামাল সবজির ব্যবসা করতো। ২০০১ সালে তাঁর এক চাচা দুদু মিয়া রাজনৈতিক মামলার পর বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। আজও তার হদিস মিলেনি। আজকে আসলামের মৃত্যুতে এই পরিবারের অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে গেছে।
প্রতিবেশী জলিল মোল্লা বলেন, ৫/৬ জনের সংসার, আসলামের উপার্জনেই চলতো। সে আজ ট্রেন দুর্ঘটনা মারা গেল। গরিব মানুষ, এখন এই সংসার কেমনে চলবে। আসলামের পরিবারের জন্য সরকারের কাছে সহায়তা চাই এবং যারা এই ঘটনায় দায়ী তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।
বুধবার ভোরে ভাওয়াল রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনসহ পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এসময় এক যাত্রী নিহতসহ সাতজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিএনএনিউজ/ হামিমুর রহমান/ বিএম