বিএনএ ডেস্ক : গত ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছড়ে ভারতে পালিয়ে যান। সেই দিন বিকালে আশুলিয়ার বাইপাইলে ছাত্র-জনতার বিজয় মিছিল চলাকালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের গুলিতে আলামিন মিয়া নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এমন অভিযোগে কুলসুম বেগম নামে এক নারী আলামিন মিয়ার স্ত্রী পরিচয় দিয়ে গত ২৪শে অক্টোবর ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। এতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৩০ জনকে আসামি করা হয়। গত ৮ই নভেম্বর ঢাকার আশুলিয়া থানায় তা এজাহারভুক্ত হয়।
মামলার বাদী কুলসুম বেগম স্থায়ী ঠিকানা দেখিয়েছেন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার স্বল্প সিংজুরী বাংগালা গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা দেখিয়েছেন আশুলিয়ার জামগড়া।
এজাহারে উল্লেখ করেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৫ই আগস্ট সকালে তাঁর ৩৪ বছর বয়সী স্বামী মো. আল আমিন মিয়া মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিকেল ৪টার দিকে আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকায় বিজয়মিছিলে তিনিও ছিলেন। তবে পরাজয় মেনে নিতে না পেরে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী, নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তাঁর স্বামী নিহত হন।
বাদী কুলসুম বেগম আরও বলেন, অনেক খোঁজাখুঁজি করে তিনি স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে আশুলিয়া নারী ও শিশু হাসপাতালের ৬ আগস্টের এক প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানতে পারেন, এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিপুলসংখ্যক অজ্ঞাতনামা লাশ দাফন করেছে। এসব কাগজপত্র হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আছে। পরে তিনি হাসপাতালে থাকা কাগজপত্র, ছবি ও ভিডিও দেখে তাঁর স্বামীর লাশ শনাক্ত করেন।
মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুছ ছালাম, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, সাবেক ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানসহ ১৩০ জনের নাম উল্লেখ আছে।
আল আমিন সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুরের বাসিন্দা। মামলা দায়েরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর তিনি জানতে পারেন, তাঁকে ‘মৃত’ দেখিয়ে স্ত্রী মামলা করেছেন। মামলা থেকে আসামির নাম প্রত্যাহার করার কথা বলে নাকি তাঁর স্ত্রী লোকজনের কাছ থেকে টাকাপয়সাও নিচ্ছেন। আল আমিন তখন মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলায় ছিলেন।
এই ঘটনার তিন মাস পর সিলেটের বাসিন্দা আলামিন মিয়া জড়ী থানায় গিয়ে জানান, তিনি জীবিত আছেন! তাঁর অজান্তে স্ত্রী কুলসুম বেগম তাঁকে ‘মৃত’ দেখিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে মামলা করেছেন। জুড়ী থানা পুলিশ তাঁকে নিজের এলাকা দক্ষিণ সুরমা থানায় বিষয়টি জানাতে পরামর্শ দেয়।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, আল আমিন সোমবার সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমা থানায় এসে জানান তিনি মরেননি! তার স্ত্রী একটি চক্রের ফাঁদে পড়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য এই মামলা করেছেন। অনেক আসামীকে ঘটনায় জড়িত নয় মর্মে এফিডেভিট দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
আল আমিন পুলিশকে জানিয়েছেন, ছাত্র-জনতার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে মেকানিকের কাজের সুবাদে তিনি স্ত্রীসহ জুড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাটে। তবে দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুরে বসবাস করছেন। এখানেই তিনি স্ত্রী-পরিবার নিয়ে থাকেন।
আল আমিন বলেন, ‘৫ আগস্ট তার স্ত্রী কুলসুম বেগম তার সঙ্গে সিলেটেই ছিল। এর তিন-চার দিন পর ঝগড়া করে মানিকগঞ্জে চলে যায়। এরপর আর তার সঙ্গে আমার কোনো যোগাযোগ হয়নি। তিন-চার দিন আগে একজনের কাছ থেকে জানতে পারি গত ৫ই আগস্ট আন্দোলনে মারা গেছে উল্লেখ করে আমার স্ত্রী একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার একজন আসামিও তাকে মোবাইল ফোনে ঘটনাটি জানিয়েছেন। এরপর দক্ষিণ সুরমা থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন জীবিত আল আমিন মিয়া।
আল আমিন আরও বলেন, ‘আমি জীবিত আছি। আমার স্ত্রী মিথ্যা মামলা করেছে। তবে এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আমি মনে করছি, ওরে কেউ জোরজবরদস্তি করে মামলা দেওয়াইছে বা কোনো চক্রান্তের সঙ্গে আমার স্ত্রী কুলসুম বেগম জড়িয়ে পড়েছে।’ বলেন, আল আমিন।
আশুলিয়া থানার পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন বলেছেন, বাদী কুলসুম বেগম মিথ্যা মামলা করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আল আমিনকে সিলেট থেকে আশুলিয়া থানায় আনা হয়েছে। তাঁকে ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপস্থাপন করা হবে। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন ।
এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকে বাদী কুলসুম বেগমকে খুঁজে পাচ্ছে না বলে জানান আশুলিয়া থানার পরিদর্শক মো. কামাল হোসেন। জীবিত স্বামীকে মৃত দেখিয়ে মামলা করার এই ঘটনাটি পুলিশ প্রশাসন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে ।
বিএনএ/সৈয়দ সাকিব, ওজি/এইচমুন্নী