।। কাইমুল ইসলাম ছোটন।।
‘পিতামাতা আমাদের জীবনদান করেন ঠিকই, শিক্ষকরা সেই জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন।’ বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক এ্যারিস্টটল আড়াই হাজার বছর আগে এমন মন্তব্য করেছিলেন। কিন্তু সুন্দরভাবে যোগ্য মানুষ গড়ার কারিগর সংকটে আছেন পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী শিক্ষা’র বিস্তারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজ।
দেড় হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর জন্য স্বল্প সংখ্যক শিক্ষক দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলছে শ্রেণি কার্যক্রম। শিক্ষক সংকটের ফলে নিয়মিত ক্লাস নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি হতাশ অভিভাবকরাও। উক্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চাহিদা পত্র পাঠানো হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই দ্রুত পর্যাপ্ত শিক্ষক পদায়নের দাবি কলেজ কর্তৃপক্ষের।
তথ্য মতে, রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজে রয়েছে স্নাতক (পাস) এবং উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শাখা। সব মিলিয়ে সতেরোটি বিষয়। কলেজের ১৫৮৪ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক পদ সৃষ্টি হয়েছে ১৬ টি। ১৬ জন শিক্ষকের জায়গায় আছেন মাত্র ৮ জন। এর মধ্যে একজন শিক্ষক ১৪ বছর ধরে সাময়িকভাবে বরখাস্ত। সে অনুযায়ী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:১৯৮। অর্থাৎ একজন শিক্ষকের জন্য রয়েছে ১৯৮ জন শিক্ষার্থী।
কলেজ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কলেজের গণিত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ইতিহাস, দর্শন ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি (ছয়টি) বিষয়ে কোন শিক্ষক নেই। উচ্চ মাধ্যমিকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয় থাকলেও সৃষ্টি হয়নি কোন পদ।
অন্যদিকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ১৪ বছর ধরে সাময়িকভাবে বরখাস্ত। এতে অতিথি শিক্ষক দিয়ে চালাতে হচ্ছে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম। আর্থিক সংকটের কারণেও তাও সম্ভব হয়ে ওঠছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১ হাজার ৫৮৪ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। শিক্ষার্থীদের প্রাণ হলো শিক্ষক কিন্তু সেই প্রাণের সংকট কলেজে। ফলে শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট ও কোচিংসেন্টারমুখী হচ্ছে। সমস্যা তৈরি হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রমে, তার প্রভাব পড়ছে ফলাফলেও। তাছাড়াও কলেজে রয়েছে পরিবহন সংকট, নেই কোন অডিটোরিয়াম।
শিক্ষাবিদ নিরুপা দেওয়ান বলেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যদি একজনও শিক্ষক না থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তির শিকার হবে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া রাঙামাটির বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক সংকট রয়েছে, জেলার মিটিং গুলোতে বারবার বলছি। এ ব্যাপারে সরকার যদি একটু আন্তরিক হন তাহলে শিক্ষক সংকট নিরসন হবে এবং ছাত্র সংগঠনগুলোকে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন তিনি।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, দূর-দূরান্ত থেকে অনেক শিক্ষার্থী এখানে পড়তে আসেন। শিক্ষক সংকটের কারণে অনেক বিষয়ের পর্যাপ্ত ক্লাস হয়না। শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা খুব কম। তারা শিক্ষক সংকট নিরসনের দাবি জানান।
অর্শ্চি ও স্বস্তি চাকমা নামে একাদশ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী বলেন, অনেক বিষয়ের একজন শিক্ষকও নেই। এই কারণে প্রায় ছাত্রীরা ভর্তি হয়ে খুবই বিপদে পড়ছে। তাছাড়া শিক্ষক সংকটের কারণে ক্লাস কম হচ্ছে। ফলাফল তেমন ভালো হচ্ছে না, এভাবে চললে এক সময় কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাবে।
একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শাখার শিক্ষার্থী সুশীলা চাকমা বলেন, কলেজের ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিষয়ে কোনো শিক্ষক নেই। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীরা পড়ছেন বিপাকে।
রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও প্রভাষক মোঃ রবিউল হোসাইন বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে শ্রেণি কার্যক্রম। ফলে ক্লাসে শিক্ষার্থী বেশি হওয়ার কারণে ভালো কোন সাপোর্ট শিক্ষার্থীরা পাচ্ছে না। তাছাড়া কলেজের নিজস্ব কোনো পরিবহণ ব্যবস্থা নেই, অডিটোরিয়াম নেই। শূণ্য পদ পূরণসহ শিক্ষকদের পদের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তোলেন তিনি।
এ বিষয়ে রাঙামাটি সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ এনামুল হক খোন্দকার বলেন, শিক্ষক সংকটের কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা শিক্ষকদের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রতিবেদন দেওয়া হলেও সুরাহা মিলতেছে না। আমি নিজেও সরাসরি কয়েকবার যোগাযোগ করেছি।
পদ সংখ্যা বিষয়ে তিনি বলেন, পদ সংখ্যা খুব কম। যা আছে তার মধ্যেও অনেক পদ শূণ্য রয়েছে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া আর্থিক সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় শিক্ষক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক সময় মানসম্মত শিক্ষকও মিলে না। শিক্ষক সংকট নিরসনের জন্য তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিএনএ/ ওজি/ হাসনাহেনা
