18 C
আবহাওয়া
২:৩৯ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » খাগড়াছড়িতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে বিক্রি হচ্ছে বাঁশ কোড়ল

খাগড়াছড়িতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে বিক্রি হচ্ছে বাঁশ কোড়ল

খাগড়াছড়িতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে বিক্রি হচ্ছে বাঁশ কোড়ল

।। আনোয়ার হোসেন ।।

বিএনএ, খাগড়াছড়ি: জুন-আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বাঁশের প্রজনন মৌসুম। বাঁশের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ সময় বাঁশ কোড়লে অংকুর সংগ্রহ ও বিক্রি করা যাবেনা বলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় দেদারছে চলছে বাঁশকোড়ল বেচাকেনা। বাঁশ কোড়ল সবজি হিসেবে জনপ্রিয় ও চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এক শ্রেণির অর্থলোভী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙ্গালী জাতির মানুষ চলতি মৌসুমে বাঁশ কোড়ল সংগ্রহ ও বিক্রি করে বিক্রি করাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর নির্বিচারে ধ্বংস করছেন কচি বাঁশ। খাদ্য হিসেবে বাঁশ কোড়লের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কোন উদ্যোগ নেই। সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে নেই তৎপরতা। আর এ কারণে বন্ধ হচ্ছেনা বাঁশ কোড়ল আহরণ ও বিক্রি।

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) গুইমারা বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে বাঁশ কোড়ল বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন নৃগোষ্ঠীর মহিলারা। প্রতি কেজি বাশঁ কোড়ল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। বর্ষা শুরু হলে বাঁশের চারা গজানো আরম্ভ হয়। আর বাঁশের কচি অংশ সংগ্রহ করে প্রতি হাটের দিন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মেয়েরা বাঁশ কোড়ল নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। পাঠানো হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চাহিদার তুলনায় বাঁশ কোড়ল এখন অপ্রতুল। বছরের মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত এ সবজির ভরা মৌসুম থাকে। মুলি বাঁশ, ডলু বাঁশ, মিতিঙ্গ্যা বাঁশ, ফারুয়া বাঁশ, বাজ্জে বাঁশ, কালিছুরি বাঁশসহ বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁশ কোড়ল পাওয়া যায়। যদিও বাঁশ কোড়ল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের কাছে জনপ্রিয় খাবার। এখন বাঙ্গালি জাতি গোষ্ঠীর মানুষও বাঁশ কোড়ল খেতে পছন্দ করেন। বাঁশ কোড়লের অনেক নাম। মারমারা একে বলে মহ্ই আর ত্রিপুরাদের কাছে ‘মেওয়া’। চাকমা ভাষায় বলা হয় বাচ্ছুরি।

বিভিন্ন জাতের বাঁশ কোড়ল স্বাদে ভিন্ন। তবে মুলি বাঁশের কোড়ল সবচেয়ে সুস্বাদু হওয়ায় সবার কাছে এটি জনপ্রিয়। ফলে বাজারে এর চাহিদা ও দাম কিছুটা বেশি। স্যুপ, মুন্ডি, মাংস দিয়ে রান্না ও ভাজি করে খাওয়া যায় বাঁশ কোড়ল।

বাঁশ দিয়ে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা হয় যেমন, বাঁশের দোলনা থেকে শুরু করে বাড়িঘরের বেড়া, ঘরের খুঁটি, ঝুড়ি, ঝাকা, চালুন, খাঁচা, পাটি, খাড়ি, ঝাড়ু, কুলা, হাতপাখা, মাদুর, ঘরের মাচা, ঘরের খাটও বাঁশ দিয়ে তৈর করা যায়।

কিন্তু বাঁশের অঙ্কুরকালে এটাকে অনেকেই তরকারি হিসেবে ব্যবহার করায় ঐতিহ্যের বাঁশ শিল্প দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এ বাঁশ শিল্প ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে বাঁশ কোড়ল অর্থাৎ বাঁশের অঙ্কুর নষ্ট না করার জন্য বলা থাকলেও স্থানীয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের তদারকি না থাকায় গুইমারা উপজেলা থেকে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাঁশের বংশ। এটাকে অনেকেই তরকারি হিসেবে ব্যবহার করায় এ ঐতিহ্যের বাঁশ শিল্প দিনদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদিপ চৌধুরী বলেন, পাহাড়ের মানুষ বাঁশ কোড়লকে খাবার হিসেবেই খেয়ে থাকে। বাঁশ কোড়ল কাটারও একটা নিয়ম আছে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে বাঁশের বংশ ধ্বংস করা হচ্ছে দেদারছে। বাঁশ কোড়ল বাণিজ্যিক সবজি হিসেবে দেশের বিভিন্ন যায়গায় বিক্রি করার কারণে হুমকির মুখে বাঁশ শিল্প। এখনি সরকারিভাবে ব্যবস্থা না নিলে একসময় হারিয়ে যাবে বাঁশ।

খাগড়াছড়ি বন বিভাগের সহকারি বন সংরক্ষক শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, বাঁশ কোড়ল অর্থাৎ বাঁশের অঙ্কুর নষ্ট না করার জন্য নির্দেশনা আছে। এখন নিষিদ্ধ সময় চলছে। কোনভাবেই কেউ বাঁশকোড়ল আহরণ ও বাজারজাত করতে পারবেনা। যদি কেউ আইন অমান্য করে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিএনএনিউজ/বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ