বিএনএ, ডেস্ক: সোমালি জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়ার এক মাসের মাথায় দেশে ফিরেছে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ। সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যায় জাহাজটি কক্সবাজারের কুতুবদিয়া চ্যানেলে নোঙর করবে। এরপর জাহাজ থেকে চুনাপাথর খালাস শুরু হবে। এ দিকে নাবিকদের সবাই মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে কুতুবদিয়া থেকে চট্টগ্রাম আসার কথা রয়েছে।
জাহাজ মালিক পক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
কেএসআরএমের এসআর শিপিংয়ের কর্মকর্তা আবদুল মুবিন বলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ কুতুবদিয়ায় চলে এসেছে। নোঙর করতে আরও কিছু সময় লাগবে।
একই গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, সেখানে জাহাজ নোঙরের পর পণ্য খালাস শুরু হবে। মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে নাবিকদের সবাই চট্টগ্রামের সদরঘাট এলাকায় কেএসআরএমের জেটিতে উপস্থিত হবেন।
তিনি আরও জানান, এমভি আবদুল্লাহতে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর রয়েছে। কুতুবদিয়া চ্যানেলে দুইদিন পণ্য খালাসের পর বাকি পণ্য খালাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে জাহাজটি নিয়ে আসার কথা রয়েছে।
এ দিকে জাহাজ মালিকপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, ১৩ বছর আগে সোমালি জলদুস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়া জাহাজ এমভি জাহান মনি করেই নাবিকদের মঙ্গলবার চট্টগ্রাম আনা হবে। আর জাহাজ থেকে সাড়ে ১০ হাজার টন চুনাপাথর খালাস শেষে ১৫ মে রাতে চট্টগ্রামের পতেঙ্গার আলফা এনংকোরেজে ভিড়বে এমভি আবদুল্লাহ।
এর আগে, পয়লা মে আরব আমিরাতের ফুজাইরা বন্দর থেকে চট্টগ্রামের উদ্যেশে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। বিরামহীন ১২ দিন চলার পর সোমবার ভোরে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে এমভি আবদুল্লাহ। আগে জাহাজের গতিবেগ ঘণ্টায় ১০ দশমিক ৫ নটিক্যাল মাইল থাকলে বাংলাদেশে প্রবেশের পর জোয়ার অনুকূলে থাকায় গতি ২ নটিক্যাল মাইল বাড়িয়ে ১২ দশমিক ১ করা হয়। ফলে নির্ধারিত সময়ের আগে সন্ধ্যা ৬ টায় এমভি আব্দুল্লাহ কুতুবদিয়া নোঙর করতে সক্ষম হয়।
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে নতুন করে ২৩ জন নাবিক আজ যোগদান করবেন। নতুন নাবিকেরা এখন চট্টগ্রাম থেকে কুতুবদিয়া যাচ্ছেন। তারা যোগদানের পর জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকরা তাদের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। এরপর তারা চট্টগ্রাম আসবেন।
কেএসআরএম সূত্র জানিয়েছে, নাবিকদের জেটিতে বরণ করার জন্য কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। তারা ফুল দিয়ে বরণ করে নেবেন। নাবিকদের স্বজনরাও এ সময় জেটিতে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে গত ৪ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিল। ১৯ মার্চ জাহাজটি এসব পণ্য নিয়ে আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। এ দিকে মাপুতু বন্দর থেকে রওনা হওয়ার চার দিন পর গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে।
এরপর দীর্ঘ ৩৩ দিনের জিম্মিদশা থেকে গত ১৩ এপ্রিল ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ মুক্ত হয়। মুক্ত হওয়ার আট দিনের মাথায় গত ২১ এপ্রিল নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ দুবাই পৌঁছে। জাহাজটি দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের বহিনোঙর থেকে ওই বন্দরের জেটিতে ভিড়ে ২২ এপ্রিল। এরপর ওই বন্দরে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা খালাসের পর নতুন ট্রিপের পণ্য (পাথর) লোড করতে পাশ্ববর্তী ইউএইর মিনা সাকার বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় জাহাজটি। সেখানে ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর নিয়ে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ গত ৩০ এপ্রিল দুবাই মিনা সাকার বন্দর থেকে দেশের পথে রওনা হয়। অবশেষে জাহাজটি আজ বিকেল তিনটার দিকে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করেছে।
বিএনএনিউজ/ বিএম/ এইচমুন্নী