।। শামীমা চৌধুরী শাম্মী ।।
বিএনএ, ঢাকা: ঢাকার মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ১৮ বছর বয়সী একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী সিনথিয়া ইসলাম তিশা। তিনি বিয়ে করেছেন বাবার চেয়ে ৮ বছর বেশি ৬০ বছরের খন্দকার মুশতাক আহমেদকে। এতে কোনও সমস্যা নেই ওই জুটির। তাঁদের গল্প হার মানাচ্ছে সিনেমা বা উপন্যাসের কাহিনীকেও। তিশা জানান, ভালোবেসে এবং স্বেচ্ছায় তিনি বিয়ে করেছেন ৬০ বছরের মুশতাক আহমেদকে। স্বামীকে নিয়ে খুব সুখেই আছেন। বিয়ের আগে তাদের সেভাবে কেউ না চিনলেও এখন নতুনভাবে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন তারা।
এই দম্পতি একুশে বই মেলায় নিয়ে এসেছে ‘তিশা এন্ড মুশতাক’ এবং ‘তিশার ভালবাসা’ দুটি লাভ স্টোরি বই। দুটি বইয়ের লেখক খন্দকার মুশতাক আহমেদ। তিশা এন্ড মুশতাক বইটিতে বলা হয়েছে ‘হঠাৎ কিছুক্ষণের তুঙ্গস্পর্শী আবেগ বা বানের স্রোতের তোড়ে ভাসিয়ে নেওয়ার সাময়িক ইচ্ছের নাম সর্ম্পক নয়! স্থিত দীর্ঘ ও ধারাবাহিক দায়িত্বশীলতার নাম সর্ম্পক’। আর তিশার ভালবাসা বইটি মূলত রোমান্টিক উপন্যাস।
‘অভিভাবকদের ভুল কিংবা ভুল শাসন, সিদ্ধান্তহীনতা, প্রেমের বাঁকা পথ সবই তুলে এনেছেন উপন্যাসের পাতায় পাতায়’। বই মেলায় স্টলে উপস্থিত হয়ে দুজনই বই বিক্রি করতে গিয়েছেন। এ যে আগুনে “ঘি ঢেলে দেওয়ার মতো ঘটনা। দর্শকদের বাঁকা মন্তব্যে শেষ পর্যন্ত বই মেলায় এসে বিতাড়িত হতে হয়েছে মোস্তাক তিশা দম্পতিকে। ফলে ভেলেন্টাইন সপ্তাহে অসম বয়সী দুজনের লাভস্টোরি দেশ-দেশান্তরে হট লাভ স্টোরিতে পরিণত হয়েছে। কীভাবে মোস্তাক – তিশার প্রেম বিয়েতে পরিণত হলো? চলুন ফিরে দেখি।
ঢাকার মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী সিনথিয়া ইসলাম তিশা। ওই স্কুলেরই গভর্নিং বডির সদস্য খন্দকার মোস্তাক আহমেদ। তাঁদের প্রেমের শুরু ফেসবুকে। তিশাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান মোস্তাক। কথাবার্তা হয়েছিল ফেসবুকে। নতুন পরিচিত কারও সঙ্গে যেমনভাবে হয়, ঠিক তেমনভাবেই। প্রথম দেখা হয়েছিল ঢাকার আইডিয়াল স্কুল ও কলেজের নবীনবরণ উৎসবে। সেখানে তিশা গিয়েছিলেন নতুন ছাত্রী হিসেবে। আর মোস্তাক খন্দকার ওই কলেজের গভর্নিং বডির সদস্য রূপে।
এই সাক্ষাতই ধীরে ধীরে মজবুত হয়। পরিণত হয় প্রেমে। তিশাকে খন্দকার মোস্তাকই ডিজ্ঞাসা করেছিলেন, এই সম্পর্কের পরিণতি ঠিক কী হতে চলেছে? জবাবে তিশা জানান, তিনি বিয়ে করতে রাজি। তবে তিশার বাড়ির লোক এই সম্পর্কটা মেনে নেননি। তিশাকে ঘরে তালাবন্ধ করে রাখেন তার বাবা-মা। কিন্তু, বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যান তিশা। ঠাকুরগাঁও থেকে তিনি চলে যান ঢাকায় খন্দকার মোস্তাকের কাছে। সেখানে ইসলাম ধর্ম মতে আইন মেনে বিয়ে করেন তারা।
তাতেও তিশার মা-বাবা এই সম্পর্ক মেনে নেননি। তাঁরা থানায় খন্দকার মোস্তাকের বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ আনেন। বিচারপ্রক্রিয়া চলাকালীন তিশাকে কিছুদিন সেইফ হোমে কাটাতে হয়। তিশার বাবা সাইফুল ইসলাম একটি মামলা করে তাকে নাবালিকা হিসাবে দাবি করেন। কিন্তু আদালতে তিশা এসে জবানবন্দি দিয়েছেন যে, স্বেচ্ছায় তিনি মোস্তাককে বিয়ে করেছেন। বিচারকের কাছে তিশা জানান, তিনি সাবালিকা। স্বামীর কাছেই স্বেচ্ছায় থাকতে চান।
অনেকেই মন্তব্য করেছেন, টাকার জন্য বিয়ে করেছে তিশা। কিন্তু মোস্তাক বলেন, ‘তিশা ভালোবেসে তাকে বিয়ে করেছে। এখানে টাকা-পয়সার লোভের প্রশ্নই আসে না’।
এক কন্যা সন্তান রয়েছে খন্দকার মোস্তাকের। তার নতুন ‘মা’ তিশার চেয়ে বয়সে বড় সে। সম্পর্কে মা হলেও সেই মেয়ের সঙ্গে বেশ বন্ধুর মত মানিয়ে নিয়েছেন ১৮ বছরের দুঃসাহসী তিশা।
সংবাদমাধ্যমকে তিশা জানিয়েছেন, স্বামীকে বুড়ো বলে মনে করেন না তিনি। তাঁর স্বামীর সেই মনটা ৩৭ বছরের তরতাজা যুবকের মত। তাই বয়সের ব্যবধান তাঁদের সম্পর্কে বাধা হয়ে ওঠেনি। স্বামীর অনুপ্রেরণাতেই লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন তিশা। স্বামীর সঙ্গে তাঁর বয়সের ব্যবধান ৪০ বছরের বেশি। তবুও তিশার দাবি, তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে সুখে ঘর-সংসার করছেন।
বিএনএনিউজ/ বিএম/এইচমুন্নী