বড় বড় শিল্পপতিরা ও কিছু সংখ্যক আমলা কিছুতেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে সেটা চাইছিলেন না।
আজ প্রকাশিত হলো পর্ব : ৩৪১
গোলাম মোহাম্মদ সাহেবও কিছুদিনের মধ্যে প্রোগ্রাম করলেন, ঢাকায় আসবেন। পাকিস্তানের বড়লাট ঢাকায় আসবেন ভাল কথা। পূর্ব বাংলায় তখন গভর্নর শাসন চলছে। পূর্বের সরকার ভেঙে দিয়েছিল। এখন পর্যন্ত সরকার গঠন করতে দেওয়া হয় নাই। এমএলএরা ও কর্মীরা জেলে। আওয়ামী লীগের সভাপতি বিলাতে, জেনারেল সেক্রেটারি কারাগারে বন্দি। অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ঝুলছে। এই অবস্থায় কি করে গোলাম মোহাম্মদকে রাজকীয় সংবর্ধনা দেবার বন্দোবস্ত করার জন্য আওয়ামী লীগ নেতারা ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, বুঝতে কষ্ট হতে লাগল।
আরও দেখলাম, একটা ফুলের মালা নিয়ে আতাউর রহমান সাহেব, আর একটা মালা হক সাহেব নিয়ে তেজগাঁ এয়ারপোর্টে গোলাম মোহাম্মদ সাহেবের গলায় দুইজনই মালা দিলেন। কিছুদিন পূর্বের থেকেই আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক দলের মধ্যে মনকষাকষি চলছিল এই অভ্যর্থনার ব্যাপার নিয়ে। এটা পরিষ্কার হয়ে পড়ল। কৃষক শ্রমিক দল আর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়, একমাত্র হক সাহেবের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে কিছু সংখ্যক সুবিধাবাদী লোক একজোট হয়েছে ক্ষমতার ভাগ বসানোর জন্য। এদের কোনো সংগঠন নাই, আদর্শ নাই, নীতি নাই। একমাত্র হক সাহেবই এদের সম্বল। তাঁরা গোলাম মোহাম্মদ সাহেবকে কেন মোহাম্মদ আলী (বগুড়া)কেও অভ্যর্থনা করতে পারেন; কিন্তু আওয়ামী লীগ একটা সংগ্রামী প্রতিষ্ঠান-সেই প্রতিষ্ঠানের নেতারা কি করে এই অগণতান্ত্রিক ভদ্রলোককে অভ্যর্থনা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লেন আমার বুঝতে কষ্ট হল!
আমি ও আমার সহবন্দিরা খুবই মর্মপীড়ার ভুগছিলাম। আমাদের দুঃখ হল এজন্য যে, আমাদের নেতারাও ক্ষমতার লোভে পাগল হয়ে পড়েছেন। এতটুকু বুঝবার ক্ষমতা আমাদের নেতাদের হল না যে, যুক্তফ্রন্টের দুই গ্রুপকে নিয়ে খেলা শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও কৃষক শ্রমিক দলকে আলাদা আলাদাভাবে তারা যোগাযোগ করছে, যাতে গোলাম মোহাম্মদ সাহেব পূর্ব বাংলায় এসে বিরাট অভ্যর্থনা পেতে পারেন। হলও তাই। কিন্তু তিনি যা করবেন, তা ঠিক করেই রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে যে তিনি যুক্তফ্রন্টকে দ্বিধাবিভক্ত করাবেন সে ক্ষমতাও তাকে দেওয়া হয়েছিল। যদিও পরে শুনেছিলাম, গোলাম মোহাম্মদ ওয়াদা করেছিলেন শহীদ সাহেব জুরিখ থেকে ফিরে আসলেই তাঁকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে। বড় বড় শিল্পপতিরা ও কিছু সংখ্যক আমলা কিছুতেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে সেটা চাইছিলেন না।
পরিকল্পনা : ইয়াসীন হীরা
গ্রন্থনা : সৈয়দ গোলাম নবী
সম্পাদনায় : মনির ফয়সাল
সূত্র: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী, প্রকাশনা- দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, পৃষ্টা নম্বর:২৮২।
আগের পর্ব পড়ুন : বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পর্ব : ৩৪০