21 C
আবহাওয়া
৯:০৩ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » হাইকোর্টে তলবের পর তোড়জোর; ডুমুরিয়ায় বেপরোয়া অবৈধ ভাটা মালিকরা

হাইকোর্টে তলবের পর তোড়জোর; ডুমুরিয়ায় বেপরোয়া অবৈধ ভাটা মালিকরা

ডুমুরিয়ায় বেপরোয়া ভাটা মালিকরা

বিএনএ, ডুমুরিয়া প্রতিনিধি: উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ও প্রশাসনের নিস্ক্রিয়তা পুঁজি করে খুলনার ডুমুরিয়ায় বেপরোয়াভাবে অবৈধ ইট ভাটা পরিচালনা করছেন স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ প্রভাবশালীরা। তবে হাইকোর্টের নির্দেশ প্রতিপালন না হওয়ায় খুলনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ৫ জনকে তলবের পর শুরু হয়েছে তোড়জোর। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তড়িঘড়ি করে কিছু ইটভাটায় অভিযান শুরু করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

গত কয়েকদিন ধরে অবৈধ ইটভাটায় যাচ্ছেন ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত। কয়েকটি অবৈধ ভাটায় জরিমানা ও কিছু জায়াগার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন তারা। তবে স্থানীয় জনগণ, সাংবাদিক ও সচেতন মহল বলছেন, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে কখনই আন্তরিক নয় প্রশাসন। ইট ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন নি তারা।

প্রশাসনের দায়িত্ব অবহেলায় উচ্চ আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বহাল তবিয়তে অবৈধ ভাটা মালিকরা। তবে উচ্চ আদালত প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্তদের তলব করায় এখন আবার আইওয়াশ শুরু করেছে তারা। উচ্চ আদালতের রায় কার্যকরে প্রশাসনের এমন উদাসিনতায় ক্ষুদ্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, অবৈধ ইট ভাটা উচ্ছেদ না হলে ভিটে বাড়িতে বাস করা তাদের জন্য হুমকী হয়ে দাঁড়িয়েছে। মারাত্মক পরিবেশ দূষণে বাপ-দাদার ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যেতে হবে তাদের!

হরি ও ভদ্রা নদীর বুকে অবৈধ ইট ভাটা।
হরি ও ভদ্রা নদীর বুকে অবৈধ ইট ভাটা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চলতি মৌসুম অর্থ্যাৎ নভেম্বর মাস থেকে অবৈধ ইট ভাটায় নতুন করে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নদীর জায়গায় নদীর মাটি কেটে মাটি স্তুুপ করা, ইট তৈরি করা, ইট শুকানো, ইট পোড়ানো, ভাটা শ্রমিকদের জন্য আবাসন তৈরী করাসহ নানা কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। 

উচ্ছেদের নির্দেশ দেয়া ১৪টি ইট ভাটার মধ্যে আছে-ডুমুরিয়া কুলবাড়িয়া-বরাতিয়া ও ভদ্রাদিয়া মৌজার ভদ্রা নদীর তীরবর্তী ফজলুর রহমানের মালিকানাধীন এস বি ব্রিকস, একই মৌজার অবস্থিত স্থানীয় সংসদ সদস্য নারায়ণ চন্দ্র চন্দের কে পি বি ব্রিকস, কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ও খর্ণিয়া মৌজার ভদ্রা নদী তীরে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদের সেতু-১ ব্রিকস, শাহজাহান জমাদ্দারের নূরজাহান-১ ব্রিকস, ডুমুরিয়া সদরের সালেহ আকরাম মাহির মালিকানাধীন কে বি-২ ব্রিকস, কুলবাড়িয়া বরাতিয়া ভদ্রা নদী তীরে শাহজাহান জমাদ্দারের শান ব্রিকস, রানাই মৌজার ভদ্রা নদীর তীরে সোবাহান সানার এফ এম ব্রিকস, রানাই মৌজার হরি নদী তীরের জাহিদুল ইসলামের কে বি ব্রিকস, ইসমাইল হোসেন বিশ্বাসের আল-মদিনা ব্রিকস, মশিউর রহমানের মেরি ব্রিকস, আব্দুল লতিফ জমাদ্দারের জে বি ব্রিকস, আমিনুর রশিদের লুইন ব্রিকস, চহেড়া মৌজার হরি নদী তীরে গাজী আব্দুল হকের সেতু-৪ ব্রিকস এবং রুদাঘরা মৌজার হরি নদী তীরের গাজী ইমরানুল কবিরের টি এম বি ব্রিকস।

হরি ও ভদ্রা নদীর বুকে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম চলছে।

স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানান, অবৈধ ১৪টি ইট ভাটা ছাড়াও হাইকোর্টের নির্দেশনা না থাকায় ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া-কুলবাড়িয়া মৌজার তেলিগাতি নদীর পাড়ে গড়ে উঠা ডুমুরিয়া সদরের আজিজুর রহমান মোড়লের মালিকানাধীন আল্লার দান ব্রিকস, খুলনার খালিশপুর এলাকার আব্দুল হাই বাহারের মেসার্স বাহার ব্রিকস, ঘ্যাংরাইল নদী দখল করে আলুকদিয়া মৌজায় বয়ারসিং গ্রামের পুষ্পক সরদারের মালিকানাধীন এম এস বি ব্রিকস, বয়ারসিং মৌজায় ওই এলাকার রঞ্জন সরদারের মালিকানাধীন বিবিবি ব্রিকস, ঘ্যাংরাইল নদী দখল করে গড়ে উঠা তালা উপজেলার শুভাশুনি গ্রামের আমিন উদ্দীনের মালিকানাধীন রিপা ব্রিকস এবং শোলগাতিয়া এলাকার হরি নদীর বুকে ইকবাল জমাদ্দারের স্টোন ব্রিকসসহ আরও কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অবৈধ ভাটা মালিকরা বহাল তবিয়াতে নদীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করে তাদের আখের গোছাচ্ছেন।

হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম চলছে।
হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষা করে অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম চলছে।

ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শরীফ আসিফ রহমান জানান, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়নে কাজ করছে প্রশাসন। ইট ভাটায় কতটুকু খাস জমি বা নদীর জায়গা দখল করা হয়েছে তা পরিমাপ করে দেখছেন তারা। ভাটার মধ্যে খাস জমি পাওয়া গেলে সেখানে থাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। হাইকোর্টের তলবের বিষয়ে জানান, অবৈধ ইট ভাটার বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছেন তিনি। জেলা প্রশাসক আদালত প্রতিবেদন দাখিল করবেন।

২০২১ সালে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এইচআরপিবি’র পক্ষে হরি ও ভদ্রা নদীর জায়গা দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটা উচ্ছেদে জনস্বার্থে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

ওই রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে হরি ও ভদ্রা নদীর সীমানায় সিএস, আরএস রেকর্ড অনুসারে জরিপ করে দখলদারদের তালিকাসহ ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে খুলনা জেলা প্রশাসন ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন।

২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এরপর জেলা প্রশাসক ২০২১ সালের অক্টোবরে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করেন।

গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর হরি ও ভদ্রা নদীর দুই তীরে ১৪টি অবৈধ ইটভাটাসহ সব অবৈধ স্থাপনা ৬০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া,খর্ণিয়া, শোভনা ও রুদাঘরা ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে ভদ্রা, হরি, তেলিগাতী ও ঘ্যাংরাইল নদী। এক সময়ের খরস্রোতা এসব নদীতে পলি জমে চর পড়ে যাওয়ায় দখল করেছেন প্রভাবশালীরা। দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধভাবে দখল করে ইট ভাটা পরিচালনা করে আসছেন তারা। এতে ভদ্রা, হরি, তেলিগাতী ও ঘ্যাংরাইল নদীর দু্ই পাড়ে খুলনা ও যশোর জেলার প্রায় ১০ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য ও কৃষি হুমকীর মুখে পড়েছে।  

বিএনএ 

Loading


শিরোনাম বিএনএ