চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জস্থ জেএম সেন হলে দুর্গাপূজার মণ্ডপে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’ নামের একটি সংগঠনের ছয় সদস্য মঞ্চে ইসলামী সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে ইসলামী বিপ্লবের দাওয়াত দেন। যা ফেসবুকের মাধ্যমে মূহুর্তে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনার জেরে বিক্ষুদ্ধ হয় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
এই অবস্থায় রাত ১২টার দিকে পূজা উদযাপন পরিষদের দুই পক্ষ হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে। অনেকে বিক্ষোভও করে। পরিস্থিতি সামলাতে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মণ্ডপের আশেপাশে অবস্থান নেয়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এ সময় তিনি জড়িতদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘স্টেজে কারা উঠবে, কারা উঠবে না, এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালিত হয়নি। এ ঘটনায় নিয়মিত মামলা দায়ের হবে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত হোক না কেন, তারা যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন আগামী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।’ তার পরও রাত ২টা পর্যন্ত উত্তেজনা অব্যাহত থাকে। পরে সংগীতের মাধ্যমে ইসলামী বিপ্লবের দাওয়াতকারি চট্টগ্রামের তানজিমুল উম্মাহ মাদ্রাসার শিক্ষক শহীদুল করিম ও দারুল ইরফান একাডেমির শিক্ষক নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করার সংবাদ পুলিশ প্রশাসন থেকে জানানোর পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রসঙ্গত, ইসলামী সংগীত পরিবেশনকারি ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’ ইসলামী ছাত্র শিবিরের একটি সহযোগী সংগঠন হলেও এই ঘটনার পর ইসলামী ছাত্রসংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাদের সঙ্গে সংগঠনটির কোন সর্ম্পক নেই।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আ জ ম ওবায়দুল্লাহ বলেন, পূজা পরিষদের নেতারা একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ দিয়ে নিয়ে গেছে। সংগঠনটির কেউ জামায়াত বা শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এগুলো তো সম্প্রীতির সংগীত। যদিও এ ধরনের সংগীত পূজামণ্ডপে পরিবেশন না করলেও পারত সংগঠনটি।
ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি ফখরুল ইসলাম ও সেক্রেটারি তানজীর হোসেন জুয়েল জানান, চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণে ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’র সদস্যরা জেএম সেন হলে দুর্গাপূজার মণ্ডপে গান পরিবেশন করতে গিয়েছিলেন। একই দাবি চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানেরও।
তিনি জানান, পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই সেখানে সংগীত পরিবেশন করতে গেছেন তারা। সেখানে দুটো গান পরিবেশন করা হয়েছে, দুটোই সম্প্রীতির সংগীত। কেউ কেউ ভিডিও এডিট করে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে দাবি করেন সেলিম জামান।
রইছ উদ্দিন জানান, এ ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও ধরার চেষ্টা করা হচ্ছে। যিনি তাদের গান গাইতে ডেকেছেন, পূজা কমিটির সেই নেতা সজল দত্তকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটি দাবি করছে, পূজামণ্ডপে যে ইসলামি গান গাওয়া হবে, সে বিষয়ে কমিটির সদস্যরা আগে থেকে কিছু জানতেন না। পূজা উদযাপন কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের অনুমতি নিয়ে ঐ ছয় যুবক গান গাইতে মঞ্চে উঠেছিলেন. জানার পর তাকে পূজা উদযাপন কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। ঘটনার পর থেকে সজল দত্ত আত্মগোপনে রয়েছেন।
এ দিকে পূজামণ্ডপের অনুষ্ঠান মঞ্চে ইসলামি সংগীত পরিবেশনের ঘটনায় চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্যসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত বিকাশ মহাজন বাদী হয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ৬ আসামি হচ্ছে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, নুরুল ইসলাম, আবদুল্লাহ ইকবাল, মো. রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো. মামুন। তারা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে চট্টগ্রামের রহমতগঞ্জের জেএম সেন হলে দুর্গাপূজার অনুষ্ঠান মঞ্চে উঠে ইসলামী বিপ্লবের সংগীত পরিবেশন করেন। মামলায় এই ছয়জনের সঙ্গে তাঁদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তকেও আসামি করা হয়েছে।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব,ওজি/ শাম্মী/এইচমুন্নী