22 C
আবহাওয়া
২:৩০ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » পাহাড়ি ঝর্ণার দেশে ববি শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ

পাহাড়ি ঝর্ণার দেশে ববি শিক্ষার্থীদের ভ্রমণ


।। রবিউল ইসলাম।।

বিএনএ, ববি: কংক্রিটের শহুরে কর্মব্যস্তময় একঘেয়েমি জীবনের অবসাদ দূর করতে মেঘবালিকার বাড়ি পাহাড়ি ঝর্ণার অনিন্দ্য সৌন্দর্য, নিমিষেই ক্লান্তি দূর করে প্রশান্তি এনে দেয়। সমতলের শহুরে আবদ্ধ জীবনের গন্ডি পেরিয়ে সবুজের সমারোহে পাহাড়ি ঝর্ণার প্রকৃতির স্বাদ নিতে আমরা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও বিভাগের একজন শিক্ষক মিলে বেরিয়ে পড়ি বান্দরবানে মেঘবালিকার দেশে। তিনদিন ঘোরাঘুরি শেষে ফিরেছি একরাশ মুগ্ধতা আর বিষ্ময় নিয়ে।

তৃতীয় বর্ষের ২য় সেমিস্টারের ফটো জার্নালিজম নামে একটি কোর্সের ফিল্ডট্রিপে কোর্স শিক্ষক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমরান হোসেনের তত্ত্বাবধানে আমরা শিক্ষার্থীরা বান্দরবানে মেঘবালিকার দেশে ভ্রমণের আয়োজন করি।

৭ অক্টোবরে ভোর ৬টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেট থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। সকালের তুমুল বৃষ্টি উপেক্ষা করে সবাই হাজির হলাম নগরীর লঞ্চঘাট। লঞ্চে করে বরিশাল থেকে সোজা গিয়ে নামলাম লক্ষ্মীপুর। গাড়িতে বসে বন্ধুদের সাথে গান, গল্প উল্লাসে আর আড্ডায় সময় পেরিয়ে গেল ততক্ষণে বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়েছে। বৃষ্টিও নেই চারিদিকে ঝলমলে রোদ উঠেছে।

লক্ষ্মীপুর থেকে বাসে করে চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম থেকে আবার বাসে চেপে বসে যখন পৌঁছলাম বান্দরবান সদরে তখন দিনের আলো নিভে রাত নেমেছে। রাতটা হোটেলে কাটিয়ে ভোরে উঠে পাহাড়ি পথে চলে চান্দের গাড়িতে উঠে পড়লাম। পাহাড় দেখার যে তীব্র আকাঙ্খা তার অবসান হলো সবার। চাঁন্দের গাড়িতে বসে চারিদিকের সুবিশাল পাহাড় দেখছি আমরা সবাই। সুনসান নিরবভাবে সৌন্দর্য মেলে দিচ্ছে যেন পাহাড়গুলো। পাহাড়ি বনের ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আলো এসে পড়ে এক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সৃষ্টি করে। সুবিশাল পাহাড়ের যেখানে কিছুটা জায়গা সেখানে পাহাড়িদের বাড়ি দেখা মিলল৷ বাড়িগুলো বিছিন্নভাবে একটা থেকে অনেক দূরে আরেকটা বাড়ির দেখা মিলল। চাঁন্দের গাড়ি যখন পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে উপরে উঠে চলল তখন মনে পাহাড়ের সৌন্দর্য আরও বেশি ধরা পড়ল চোখে। মেঘপুঞ্জ যেন পাহাড়কে আলিঙ্গন করছে।

সকাল ৮টার দিকে আমরা গিয়ে পৌঁছালাম শৈলপ্রপাত ঝরনায়। চাঁন্দের গাড়িতে বসে কিছুটা দূর হতেই বুঝতে পারছিলাম ঝর্ণার মধুর প্রপাতের শব্দ। শৈলপ্রপাতের সৌন্দর্যে বিমোহিত হলাম আমরা সবাই। পাহাড়ি ঢাল বেয়ে কবিতা হয়ে যেন স্বচ্ছ পানি ঝরছে অবারিত। শৈলপ্রপাত দেখে সকালের নাশতা সেরে নিয়ে আবার চাঁন্দের গাড়িতে চড়লাম। এবারের যাত্রা চিম্বুক পাহাড়। আবারো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলল। চারিদিকের পাহাড়ি সৌন্দর্য দেখে সবাই আনন্দ উল্লাস শুরু করেছে। নিজেকে উজাড় করে দিয়েছে পাহাড়ের কাছে। চিম্বুকে পৌঁছে পাহাড়ের সাথে স্মৃতিচারণের জন্য ছবি তুলে নিলাম আমরা কয়েকটা। চিম্বুক পাহাড় যেন মাথা উঁচু করে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে তাঁর সৌন্দর্য বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।

চিম্বুকের পরে আমরা পৌঁছে গেলাম নিলগীরি পাহাড়ে। নীলগিরি আরও সুবিশাল পাহাড়, চারিদিকে মেঘবালিকারা খেলা করছে। নীলগিরির বুকে স্বচ্ছ বাতাস আর সুনীল আকাশের সৌন্দর্য কিছুটা বিহ্বলিত হলাম আমরা সবাই। নীলগিরি দেখার পর আবার গাড়িতে চেপে বসলাম এবারের গন্তব্য থানচি বাজার। চারিদিকে পাহাড়ের সৌন্দর্য আর সবুজের লীলাভূমি দেখতে দেখতে আমরা যখন থানচি উপজেলায় পৌঁছালাম তখন ভর দুপুর। স্থানীয় মারমা একটা হোটেলে বাঙালি খাবার খেয়ে নিলাম দুপুরে। বিকেল চারটার দিকে আমরা ছোট বোটে করে বেরিয়ে পড়লাম খরস্রোতা সাঙ্গু নদীতে।

রবীন্দ্রনাথের সেই আমাদের ছোট নদী কবিতার নদীর মত হাঁটুসম সাঙ্গু নদীর স্বচ্ছ পানি আমাদের সবারই মন কাড়ল। স্রোতের প্রতিকূলে দক্ষহাতে নৌকা চালিয়ে আমাদের বহন করলেন মারমা মাঝি হ্যাবল। সাঙ্গু নদীর দুধারে সুবিশাল দানব আকৃতির সব পাহাড়। এই পাহাড়ে জন্মেছে সব বিভিন্ন গাছ ও বাঁশ। পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সাঙ্গু নদীর মাঝে মাঝে দেখা মিলল বড় বড় পাথর। নদীর তীরঘেষে পাহাড়ে জুম চাষ করেছে পাহাড়িরা। গোধূলী লগ্নে আমরা পৌঁছালাম তিন্দুংয়ে। সাঙ্গু নদীর স্বচ্ছ পানি দেখে গোসল করার লোভ সামলাতে পারলাম না আমরা। স্রোতধারা সাঙ্গু নদীতে পানির গভীরতা অল্প নদীর নিচে কাদা-মাটি নয় ছোট বড় পাথরে ভরপুর। নদীর এখানে মারমা পাড়ায় একটি বাড়িতে আমরা রাত কাটালাম। নির্জন কোলাহলমুক্ত পাহাড়ের ঢালুতে নির্জিব এক রাত উপভোগ করলাম আমরা।

ভ্রমণের তৃতীয় দিনে আমাদের গন্তব্য পাহাড়ের সুউচ্চ থেকে প্রবাহিত পাহাড়ি ঝর্ণা লাংলোকের সৌন্দর্য উপভোগ করা। সমতল থেকে দেড় ঘণ্টা পাহাড়ি সরু উচুঁ নিচু ঢালু পথ হেঁটে ট্রাকিং করে উপরে উঠে অনিন্দ্য সুন্দর লাংলোক ঝর্ণার দেখা মিলল। ঝর্ণার সৌন্দর্য পরিশ্রম করে পাহাড় ট্রাকিং করার সেই বেদনা সুখে পর্যবেশিত হলো। ঝর্ণার অবারিত শীতল বারিধারা নিমেষেই মনে প্রশান্তির ছোঁয়া বইয়ে আনল।

এরপরে আবারো সেই ছোট নৌকায় করে সামনে ছুটে চললাম আমরা রেমাক্রি ফলস দেখার উদ্দেশ্য। স্রোতের বিপরীতে সাঙ্গু নদীর দিয়ে বড় বড় পাথর পাশ কাটিয়ে সাবধানে সাঙ্গু নদীতে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের বোট। বোটে বসে দুই ধারের হাজার বছরের সুউচ্চ পাহাড় দেখার সাক্ষী হচ্ছিলাম আমরা৷ বোটে বসে দুই ধারের পাহাড় দেখছিলাম আর মনে হচ্ছিল এই তো জীবন যা স্রোতধারা নদীর মত বহমান জীবন কখনো থামবার নয়।

সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে আমরা এসে পৌঁছালাম রেমাক্রি ফলসে। এখানে আমাদের মত অনেকে এসেছে ফলসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। আসলে ফলসের সৌন্দর্য অবর্ণনীয় উপর থেকে অনবরত জোরে স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা প্রবাহিত হচ্ছে। রেমাক্রি ফলস স্বচ্ছ পানি দান করছে সাঙ্গু নদীকে। রেমাক্রি ফলস দেখে ছোটে বোটে করেই আবার রওয়ানা হলাম থানচি বাজারে। থানচি বাজারের অদূরেই তমাতুঙ্গি চাঁন্দের গাড়িতে করে পৌঁছালাম সেখানে। তমাতুঙ্গি থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং ও কেওক্রাডংয়ের দেখা মিলল।

পাহাড়ি ঝর্ণা আর মেঘের দেশের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে শরীর মনের অবসাদ ক্লান্তি দূর করে একরাশ প্রশান্তি আর হাজারো সৌন্দর্যের স্মৃতি নিয়ে থানচি বাজার থেকে চান্দের গাড়িতে করে রওয়ানা করলাম নিজ গন্তব্যে। অনিন্দ্যসুন্দর বান্দরবান ভ্রমণ স্মৃতির পাতায় লেপ্টে থাকবে আজীবন।

বিএনএ/এমএফ

Loading


শিরোনাম বিএনএ