35 C
আবহাওয়া
১২:২৭ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » সিরিয়ায় আটকাবস্থায় এখনো নিখোঁজ লাখ লাখ মানুষ

সিরিয়ায় আটকাবস্থায় এখনো নিখোঁজ লাখ লাখ মানুষ

সিরিয়ায় আটকাবস্থায় এখনো নিখোঁজ লাখ লাখ মানুষ

বিএনএ, বিশ্ব ডেস্ক : সিরিয়ায় দশ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধের সময় আটক হওয়া লাখ লাখ বেসামরিক নাগরিক এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। আরও কয়েক হাজার বন্দিকে নির্যাতন করা হয়েছে বা হত্যা করা হয়েছে বলে জাতিসংঘের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।

নির্যাতিত ও প্রত্যক্ষদর্শীরা ‘অকল্পনীয় দুর্ভোগের’ বর্ণনা দিয়েছেন, এসবের মধ্যে ১১ বছর বয়সী পর্যন্ত বালক ও বালিকাদের ধর্ষণের মতো ঘটনাও আছে। এসব ঘটনা ‘জাতীয় মানসিক আঘাত’ হয়ে আছে এবং এগুলোকে অবশ্যই চিহ্নিত করতে হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

দেশটির গৃহযুদ্ধকালীন যুদ্ধাপরাধ বা মানবতাবিরোধী অপরাধ বিষয়ে নতুন এক রিপোর্টে এসব তথ্য দেয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে বিষয়টি এখন ‘ন্যাশনাল ট্রমা’য় পরিণত হয়েছে, যার দিকে অবশ্যই দৃষ্টি দেয়া দরকার।

২০১১ সালে সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ বিরোধী এক বিক্ষোভের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ব্যবস্থার নেয়ার মধ্য দিয়ে দেশটিতে যে সংঘাতের সূচনা হয় সেটিই পরে গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়, যা এখনো চলছে। এতে সিরিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এই লড়াইয়ে অন্তত তিন লাখ ৮০ হাজার লোকের মৃত্যু হয় এবং দেশটির জনসংখ্যার অর্ধেক বাড়ি ছেড়ে পালতে বাধ্য হয়, এদের মধ্যে প্রায় ৬০ লাখ বিদেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন।

জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশন সিরিয়া বিষয়ক এই তদন্ত রিপোর্টটি প্রণয়ন করে প্রায় ২ হাজার ৬৫০ সাক্ষ্য আর আটকের পর একশটির বেশি ঘটনার উপর ভিত্তি করে। এতে দেখা যায় সিরিয়ায় সক্রিয় সব পক্ষই মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে প্রতিপক্ষকে শাস্তি দেয়ার জন্য।

কমিশনের চেয়ারম্যান পাওলো পিনহেইরো বলেছেন, ‘সরকারি বাহিনী একতরফাভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও বিক্ষোভকারীদের আটক করেছে।’

আগে আটক ছিলেন এমন কয়েকজন জানিয়েছেন তারা মাসের পর মাস দিনের আলো দেখেননি, নোংরা পানি পানে বাধ্য হয়েছেন, খেয়েছেন বাসি খাবার এবং ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত সেলে তাদের রাখা হয়েছিলো। এসব সেলে টয়লেট সুবিধা যেমন ছিল না, তেমনি ছিল না কোনো চিকিৎসা সুবিধা।

সরকারি কারাগারগুলোতে যারা নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, যে মিথ্যা স্বীকারোক্তি আদায়ের জন্য অন্তত বিশটি উপায়ে সেখানে নির্যাতন করা হতো। এর মধ্যে ছিলো ইলেকট্রিক শক দেয়া, শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেয়া, নখ ও দাঁত উপড়ে ফেলা এবং দীর্ঘ সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখা।

‘প্রথমে আমাকে নির্যাতন করলো। তারপর বললো আমরা তোমাকে এখনই মেরে ফেলতে পারি, কেউ জানতেই পারবে না’ হোমস শহরে আটক হওয়া এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়কার স্মৃতিচারণ করেন এভাবেই।

নির্যাতনের শিকার হয়েও ফিরে আসা ব্যক্তিরা বর্ণনা দিয়েছেন কিভাবে তাদের শরীর জুড়ে ব্যথার সাথে এখনো লড়াই করছেন তারা যা পরে মানসিক ট্রমায় রূপ নিয়েছে।

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, হায়াৎ তাহরির আল শাম পরিচালিত কেন্দ্রগুলোতে যাদের আটক রাখা হয়েছিলো তাদেরকেও অত্যাচার করা হতো। এই কথিত জিহাদিরা এখন বিরোধী দল নিয়ন্ত্রিত সর্বশেষ ঘাঁটিটি নিয়ন্ত্রণ করছে।

বহু পুরুষ জানিয়েছেন যে, তাদের নগ্ন করে পুরুষাঙ্গে ইলেকট্রিক শক দেয়া, এমনকি ধর্ষণও করা হয়েছিলো।

নারী বন্দীরা জানিয়েছেন, তাদের ধর্ষণের হুমকি দেয়া হতো প্রায়শই এবং হামা চেকপয়েন্টে একজন নারীকে ধর্ষণও করা হয়েছিলো।

তদন্তকারীদের জানানো হয়েছে যে, বিচার ছাড়াই বা কমিশনের মতে সামরিক আদালত বা বিকল্প আদালতে বিরোধী সশস্ত্র গ্রুপগুলোর প্রশ্নবিদ্ধ বিচারের নামে অনেক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে।

রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে যে, আটক অবস্থায় কত মানুষ মারা গেছে তার কোনো হিসেব নেই। তবে ধারণা করা হচ্ছে লাখো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে সরকারি হেফাজতেই। সূত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহতদের বিভিন্ন গণকবরে দাফন করা হয়েছে, যার দুটি অন্তত দামেস্কের শহরতলীতেই।

তবে সিরিয়া সরকার ও হায়াৎ তাহরির আল শাম বন্দীদের নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

বিএনএনিউজ/জেবি

Loading


শিরোনাম বিএনএ