বিএনএ, জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের বৈধ শিক্ষার্থীকে নিজ কক্ষ থেকে বের করতে বন্ধুবান্ধব নিয়ে রুমে গাঁজা সেবন, পরীক্ষার আগেরদিন রাতে উচ্চস্বরে গান বাজানো এবং ওই হলের ছাত্রলীগ কর্মী দ্বারা মারধরের অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮ ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের প্রিতম সাহার বিরুদ্ধে। এছাড়া মারধরের অংশ নেওয়া ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- একই ব্যাচের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের মাহবুব রহমান উৎসব, নৃবিজ্ঞান বিভাগের মির্জা তৌফিক রায়হান এবং ৪৯ ব্যাচের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান পরশ।
১১ সেপ্টেম্বর (সোমবার) দিবাগত রাতে বিশ্বিবদ্যালয়ের শেখ রাসেল হলের ৮১৬ নাম্বার রুমে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহিবি রহমান (ভুগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ-৪৯) শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিচার চেয়ে হল প্রভোস্টের নিকট ঘটনার দিন মৌখিক অভিযোগ ও পরবর্তীতে লিখিত অভিযোগ পত্র জমা দেয়।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে ইউটিউবে ভিডিও দেখে এসাইনমেন্ট করছিলেন মাহিবি। এসময় তাকে হেডফোন ব্যবহার করতে বললেও কথা না শোনায় প্রিতম সাহা অভিযুক্ত তিনজনকে রুমে ডেকে নিয়ে আসে। তারা রুমে ঢুকার সাথে সাথে মাহিবি রহমানের বাম গালে দুটি থাপ্পড় মারে মুশফিকুর রহমান পরশ। এরপর উৎসব পরিবার তুলে গালাগাল করে এবং ডান গালে আরও দুটি থাপ্পড় মারে। তারপর কোথাও অভিযোগ করলে অবস্থা আরও খারাপ হবে বলে হুমকি দেয় ও প্রভোস্টকে গালিগালাজ করে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মাহিবি বলেন, ‘৩০ জানুয়ারি আমাদেরকে যখন নতুন হলে এলোট দেয়া হয় তখন ৮১৬ নং কক্ষে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের দুই জন এবং সিএসই বিভাগের দুই জন ছিলাম। প্রথম দিনেই সিএসই বিভাগের ১৫-২০ জন এসে আমাদের রুম ছেড়ে দিতে বলে। আমরা রুম ছাড়তে রাজি না হওয়ায় সিএসই বিভাগের ৫০ ব্যাচের দু’জনকে সরিয়ে ৪৮ ব্যাচের প্রিতম সাহা ও প্রকাশ মিত্র এসে উঠে। পরবর্তীতে নানাভাবে তারা আমাদেরকে মানসিক অত্যাচার করতে থাকে। এমনকি পরীক্ষার দিনেও উচ্চশব্দে গান বাজিয়ে আমাদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায় ও রুমের মধ্যে সিগারেটের পাশাপাশি গাঁজা সেবন করে।’
ভুক্তভোগী আরও জানান, ‘প্রিতম ও প্রকাশ নিয়মিত রুমে সিগারেট খান। সারাদিন রুমে লোকজন আসতেই থাকে। সপ্তাহে অন্তত ২/৩ দিন তার বন্ধুবান্ধবরা রুমে এসে একসাথে কার্ড খেলে। রাতভর সাউন্ডবক্সে গান বাজায় ও মাঝে মাঝে গাঁজাও খায়। আমাদের পরীক্ষা বা এসাইনমেন্ট থাকলেও তারা কোনো কর্ণপাত করেনা। রুমের মধ্যে তাদের খারাপ ব্যবহার ও হুমকির জন্য আমরা সবসময় মানসিক যন্ত্রণায় ভুগি। পরীক্ষার আগের দিন তারা ইচ্ছাকৃতভাবে বন্ধুবান্ধবকে ডেকে সাউন্ডবক্স বাজায় এবং আমাদেরকে বিরক্ত করে।’
তবে অভিযুক্ত শেখ মুশফিকুর পরশ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘গতকাল রাতে ভাই যখন জানালেন যে রুমমেট জুনিয়র তার কথা শুনছে না, তখন আমরা গিয়ে তাকে সতর্ক করেছি ও বুঝিয়েছি। এসময় তার গায়ে হাত তোলার কোন ঘটনা ঘটেনি।
আরও পড়ুন: নাইকো দুর্নীতি মামলা: খালেদার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ ১৭ সেপ্টেম্বর
মাদক সেবন ও মারধরের ঘটনা অস্বীকার করে মাহিবির রুমমেট প্রিতম বলেন, ‘মাহিবি জুনিয়র হওয়া সত্ত্বেও তার আচরণে যথেষ্ট সমস্যা ছিল। আমরা রুমে ধুমপান করি সত্য, তবে গাঁজা খাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। গতকাল রাতে তাকে জোরে ভিডিও ছাড়তে নিষেধ করেছি। সে না শোনায় আমার বন্ধুরা তাকে উচ্চস্বরে ধমক দিয়েছে। তবে রুমে একদমই মারধরের ঘটনা ঘটেনি।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি চালু হয় নবনির্মিত শেখ রাসেল হল। প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানোর সময় নামের পাশে কক্ষ নং উল্লেখ করে বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং নিজ নামীয় বরাদ্দকৃত কক্ষে ওঠার জন্য হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে প্রিতম ও প্রকাশের ৭২২ ও ১০২৪ নং কক্ষে বরাদ্দ থাকলেও একসাথে থাকার সুবিধার্থে নিজ বিভাগের দুই জুনিয়র শিক্ষার্থীকে বের করে তারা ৮১৬ নং কক্ষে এসে উঠেন।
হল প্রভোস্ট ড. তাজউদ্দিন শিকদার বলেন, ‘গতকাল রাতেই তারা আমাকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানিয়েছে। আজ তাদের লিখিত অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। আমি ওয়ার্ডেন ও হলের কর্মকর্তাদের বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। মারধরের ঘটনা ঘটে থাকলে আমরা ব্যবস্থা নিবো।’
বিএনএনিউজ/ সানভীর, বিএম