বিএনএ, রাউজান (চট্টগ্রাম): ‘‘আমার জাদুরে মারার পর মরদেহটি পর্যন্ত রাখেনি, যাদুকে নিয়ে কান্নাকাটি করব, কবর দিবো এই সুযোগটাই আমাদের কপালে জোটেনি’’। ছেলের পুরো মরদেহ না পাওয়ার কষ্টের কথাগুলো এভাবে বলছিলেন অপহরণ পরবর্তী হত্যাকাণ্ডের শিকার রাউজানের কলেজছাত্র সিবলী সাদিক হৃদয়ের মা নাহিদা আকতার।
মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নিহতের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের খাটে পড়ে আছে নিহত কলেজছাত্রের বই-খাতা। আহাজারি করছেন বাবা-মা। ছেলের স্বপ্নের কথা তুলে ধরতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হন হৃদয়ের বাবা পরিবহন শ্রমিক মো. শফি।
হৃদয়কে অপহরণ পরবর্তী নির্মমভাবে হত্যার শোকস্তব্ধ তার কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী। দৃষ্কৃতিকারীদের কারণে হৃদয় একাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসতে পারেনি উল্লেখ করে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. ওমার ফারুক।
এদিকে অপহরণ মামলার আসামিকে ছিনিয়ে নিয়ে হত্যা, পুলিশের কাজে বাধা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আজিজুল হাকিম বাদী হয়ে মামলাটি দুটি করেন।
এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন।
আরও পড়ুন: অপহৃত শিবলীর কঙ্কাল উদ্ধার, গণপিটুনিতে অভিযুক্ত যুবকের মৃত্যু
মঙ্গলবার সকালে উদ্ধার কলেজছাত্রের খণ্ডিত দেহাবশেষ ও উত্তেজিত জনতার গণপিটুনীতে নিহত আসামী উমংচিং মারমার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের স্বজনদের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
একইদিন অপহরণে জড়িত পূর্বে গ্রেপ্তার পার্বত্য রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার মতিঙ্গাছড়ির অংসুচিং মারমার ছেলে সুইচিংমং মারমা (২৪) ও কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের সাপমারা গ্রামের অংথুইমং মারমা (২৫) কে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
গত কয়েকদিন আগে বেতবুনিয়া ইউপির ৬নং ওয়ার্ডের উহ্লাপ্রমং মারমার ছেলে আছুমং মারমা (২৬) ও কাপ্তাই থানার চিৎমরং ইউপির ৪নং ওয়ার্ডের আমতলী পাড়ার উষাচিং মারমার ছেলে ঊক্যথোয়াই মারমাকে (১৯) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছিল পুলিশ।
জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট রাত ১০টায় রাউজানের কদলপুর ইউনিয়নের হযরত আশরাফ শাহ (র:)’র মাজার গেটের পূর্ব পাশের ইলিয়াস পোলট্রি ফার্ম থেকে ওই কলেজছাত্র নিখোঁজ হন। তিনি কদলপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী এবং ওই পোলট্রি ফার্মের ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠির কয়েকজন কাজ করতেন। কাজের জবাবদিহিতা, ঘুম থেকে দেরিতে উঠা নিয়ে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি কর্মচারীদের সঙ্গে মনোমানিল্যের ক্ষোভের বশে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড করতে পারে বলে ধারণা পুলিশের।
নিখোঁজ কলেজছাত্রের বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হলে বান্দরবান গিয়ে দুইলাখ টাকা প্রদান করেন। মুক্তিপণ দিয়েও ছেলের মুক্তি না মেলায় অপহরণে জড়িত ছয়জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন নিখোঁজ ছাত্রের মা নাহিদা আকতার। সোমবার সকালে অপহৃত কলেজছাত্রের দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়। এরপর প্রধান আসামী উমংচিং মারমারকে নিয়ে থানায় ফেরার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে।
গণপিটুনিতে নিহত উমংচিং মারমা (২৬) রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পূর্ব রঙিপাড়া এলাকার উথোয়ামং মারমার ছেলে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রামে আ.লীগ নেতা হত্যা মামলায় বাবা-ছেলে আটক
রাউজান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুল্লাহ আল হারুন বলেন, অপহৃত কলেজছাত্রের দেহাবশেষ উদ্ধার করে ফেরার পথে বিক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসীর গণপিটুনিতে প্রধান আসামীর মৃত্যুর ঘটনায় এবং পুলিশের কাজে বাধা, হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা রুজু হয়েছে।
অন্যদিকে অপহরণ মামলাটি হত্যাকান্ডে রূপান্তরিত হবে বলে এই কর্মকর্তা জানান।
আবদুল্লাহ আল হারুন আরও বলেন, উত্তেজিত জনতার হাতে নিহত প্রধান আসামীসহ ৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চারজনকে কারাগারে পাঠানো হয়।
বিএনএনিউজ/ শফিউল আলম, বিএম