19 C
আবহাওয়া
২:৫০ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৩ (ফরিদপুর-৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১৩ (ফরিদপুর-৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ফরিদপুর- ৩ আসনের হালচাল।

ফরিদপুর – ৩ আসন

ফরিদপুর – ৩ সংসদীয় আসনটি ফরিদপুর সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ২১৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিজয়ী হন 

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩ হাজার ১ শত ৯৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ৮ শত ৩৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৪ শত ৩২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের ইমাম উদ্দীন আহমেদ । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৩ হাজার ৬ শত ৫৩ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৩ শত ৭৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৩ শত ৩৫ জন। নির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৭ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৫ শত ১১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪১ হাজার ১ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৮৬ হাজার ৯ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ১৪ হাজার ৬ শত ১৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৫ শত ৪৪ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ৪ শত ৪৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ৬ শত ৭৯ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২২ হাজার ৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৬ হাজার ৪ শত ৭৮ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪ শত ৬৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩ হাজার ৬ শত ৮৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৪ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এম এম নুরুল ইসলাম, এবং কাস্তে প্রতীকে সিপিবির মো: রফিকুজ্জামান মিয়া প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৭৬ হাজার ২ শত ৭১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ২১ হাজার ৭ শত ৪ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ফরিদপুর – ৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফরিদপুর –৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৫.৩৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৫.৩৩%, বিএনপি ৪৭.০০%, জাতীয় পার্টি ১.৮৯%, জামায়াত ইসলামী ১২.৪২% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৩.৩৬% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮২.৮১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮.৮৪%, বিএনপি ৩৯.৩৮% জাতীয় পাটি ১৬.৫৫%, জামায়াত ইসলামী ৭.৯৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.২৪% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.৫২ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.২০%, ৪ দলীয় জোট ৬১.৩০%, জাতীয় পার্টি ০.৯৩ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৭% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯৭.৬৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫২.৫৯%, ৪ দলীয় জোট ১৩.২৮% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৪.১৩% ভোট পায়।

ফরিদপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের শ্বশুর ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি এখন দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন। দীর্ঘ আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে রয়েছেন। তার সংসদ সদস্য পদটিও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন না তা অনেকটা নিশ্চিত।

এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি, হা-মীম গ্রুপের মালিক এ কে আজাদ। এই তিন জনের মধ্যে যে কেউ পেতে পারেন মনোনয়ন।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির প্রয়াত ভাইস প্রেসিডেন্ট চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের কন্যা জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ। তিনি মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মাহবুবুল হাসান ভুঁইয়া পিংকু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, ফরিদপুর ৩ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এই আসনে বিএনপি পাঁচবার, আওয়ামী লীগ চারবার আর জাতীয় পার্টি দুইবার নির্বাচিত হয়। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে এটি দখলে নেয় ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু এই আসনে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক হালচাল হঠাৎ পাল্টে যায়। বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছোট ভাই খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর ২০২৩ সালের ৮ মার্চ গ্রেফতার হওয়ার পর। বর্তমানে এ আসনটিতে দ্বাদশ সংসদের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নানা নাটকীয়তা চলছে। আওয়ামী লীগ থেকে যাকেই প্রার্থী করা হোক না কেন বিজয় অব্যাহত রাখা খুব কঠিন হবে।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা মজবুত। দলটির তৃণমূল পর্যায়ে প্রচুর ভোট রয়েছে। ভোট ব্যাংক রয়েছে ২০ দলীয় জোটের শরিক জামায়াত ইসলামীর। যা বিএনপির বাক্সে যাবে। এছাড়া দীর্ঘ সময় এই আসনে সংসদ সদস্য ছিলেন কামাল ইবনে ইউসুফ। তার ব্যক্তিগত ইমেজ বিএনপির সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করবে।

আওয়ামী লীগ চায় আসনটি দখলে রাখতে। অন্যদিকে বিএনপি চায় পুনরুদ্ধার।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ২১৩তম সংসদীয় আসন (ফরিদপুর-৩) আসনটিতে আওয়ামী লীগ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারবে কীনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে ।

আরো পড়ুুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-২১২ (ফরিদপুর-২)

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, এমএফ, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ