বিএনএ ডেস্ক, ঢাকা: দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে আজ। রোববার (১২ সেপ্টেম্বর) শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও বন্ধ থাকছে ১ হাজারের মত কিন্ডারগার্টেন ও স্কুল। আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী সংকটের কারণেই স্কুলগুলো বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষরা।
তবে ব্যক্তিমালিকানাধীন এসব স্কুল নিয়ে এখনও কোন পরিকল্পনা নেই- জানিয়েছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলছে না তার একটি চট্টগ্রামের ভিশন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল। এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন বলছেন, ২১জন শিক্ষক এবং সাড়ে চারশো শিক্ষার্থী নিয়ে তাদের স্কুল চলছিল। করোনার দীর্ঘ বন্ধ থাকার কারণে চরম প্রতিকূল অবস্থায় পড়ে তাকে বাধ্য হতে হয়েছে স্কুলটি বন্ধ করে দিতে।
আমজাদ হোসেন বলেন, গত বছর রোজার পর আমরা সরকারের নির্দেশ মতো অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা করেছিলাম। কিন্তু শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের কাছ থেকে কোন সাড়া পায়নি। ঘর ভাড়া, গ্যাস ও কারেন্ট বিল, শিক্ষক, কর্মচারীদের বেতন- এসব কুলিয়ে উঠতে না পাড়ার কারণে ২০২১ সালে এসে আমরা স্কুলটা বন্ধ করতে বাধ্য হই।
এদিকে বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং কলেজ ঐক্য পরিষদ দাবি করছে, সারা দেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছিল। সেখানে প্রায় ১০ লক্ষ শিক্ষক, এক কোটি শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে আসছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রকোপে স্কুল যেমন বন্ধ হয়েছে তেমনি নতুন করে স্কুল খুলতে শিক্ষকদের মোকাবেলা করতে হচ্ছে নানা চ্যালেঞ্জ।
পপুলার ইন্টারন্যাশনাল স্কুল-যেটি ঢাকায় অবস্থিত। স্কুলটির শিক্ষক আমেনা বেগম তামান্না বলছেন, কিছু শিক্ষক নিয়ে শুরু করলেও স্কুলে শিশুদের ফিরিয়ে আনা এখন বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, আমার স্কুলের ৫০ থেকে ৬০ ভাগ স্টুডেন্ট বিভিন্ন কাজে নিজেদের নিয়োজিত করেছে। আমি নিজে ৩০টা পরিবারে গিয়েছি স্কুলে আসার জন্য তাদের অভিভাবকদের রাজি করাতে। কিন্তু তারা নিম্নবিত্ত পরিবারের। ফলে কাজ থেকে তারা আর স্কুলে ফিরবে না। এখন স্টুডেন্ট যদি না আসে তাহলে আমি স্কুল চালাবো কীভাবে?
কিন্ডারগার্টেনগুলো ব্যক্তিমালিকানাধীন হওয়ায় খরচ চলে মূলত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি দিয়ে এর ব্যয় বহন করে। দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় বেতন না পাওয়ার ফলে অনেক স্কুলের শিক্ষক এখন অন্য পেশা গ্রহণ করেছেন বলেন এই শিক্ষক।
রাজধানীর কেরানীগঞ্জের ইনফ্যান্ট ইন্টার ন্যাশনাল (কিন্ডারগার্টেন) স্কুলের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, তিন বছর হলো স্কুল চালু করেছি। খুবই ভালই চলছিলো। কিন্তু করোনায় দীর্ঘ দেড় বছরের বেশি সময় স্কুল বন্ধ থাকায় কোনো ইনকাম নেই। স্কুলের ভাড়া দিতে পারছি না। তাই স্কুল এখন খুলতে পারছি না।
এসব কারণে ১০ হাজারের মত স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে বলে দাবি কিন্ডারগার্টেন স্কুল এবং কলেজ ঐক্য পরিষদের।
এ বিষয়ে সংগঠনটির চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার চৌধুরী বলেন, যেসব স্কুল এখনো চালু আছে তাদের ঘুরে দাঁড়াতে হলে সরকারি সহযোগিতা দরকার। কিন্তু আমরা সরকারের বিভিন্ন স্তরে ঘুরে কোনো রকমের আশ্বাস পাইনি।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ