22 C
আবহাওয়া
১১:১৩ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ‘রাজনীতি করতে হলে আমাদের মতো সন্ত্রাসীর সবারই প্রয়োজন হয়’!

‘রাজনীতি করতে হলে আমাদের মতো সন্ত্রাসীর সবারই প্রয়োজন হয়’!


অন্তবর্তীকালীন সরকারের আমলে রাজনৈতিক নেতাদের পাশাপাশি সন্ত্রাসীরাও মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। এই তালিকায় এবার যুক্ত হয়েছেন নাছির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে ‘শিবির ক্যাডার নাছির। ১৯৯৮ সালের ৯ এপ্রিল থেকে কারাগারে ছিলেন নাছির। দীর্ঘ ২৬ বছর পর তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ফটিকছড়ির তিনটি হত্যা মামলা বিচারাধীন।

হাটহাজারীর মন্দাকিনী এলাকার এলাহী বক্সের ছেলে নাছির চাচাতো ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ নিতে ১৯৯২ সালে অপরাধে জড়ান । একই সঙ্গে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাডার পলিটিক্সে জড়িয়ে পড়েন। নাছিরকে সর্বপ্রথম নগরের চকবাজার এলাকার একটি রেস্তোরাঁ থেকে গ্রেপ্তার করেন সাবেক মহানগর পুলিশ পরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। ঘটনার সময় ১৯৯৩ সালের মে মাসে তিনি চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে নাছির জামিনে বেরিয়ে আসেন। এরপর ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয়বারের মতো চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাস থেকে নাছিরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
তিন দশক আগে র‍্যাব–পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী নাছির উদ্দিন চৌধুরী ওরফে শিবির নাছিরের নাম শুনলে আতঙ্কিত হয়ে উঠতেন চট্টগ্রামের অনেক বাসিন্দা। তিন খুন, জোড়া খুনে সম্পৃক্ত নাছির গড়ে তুলেছিলেন একটি সন্ত্রাসী বাহিনী। এই বাহিনীর সদস্যরা অপহরণ ও চাঁদাবাজিতে জড়িত ছিলেন, আতঙ্ক ছড়াতে বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়তেন তাঁরা।
প্রথমবার চট্টগ্রামের এক শিবির নেতার কাছ থেকে একটি পিস্তল ও ৬ রাউন্ড গুলি পাওয়ার পর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার গ্রুপে প্রায় পঞ্চাশজন সক্রিয় সদস্য আছে। সমর্থক আছে বহু। অস্ত্রের মধ্যে একে ৪৭, ৩০৩ রাইফেল, এসএলআর, স্টেনগান, বন্দুক, কাটা রাইফেল, ছোরা ও বেয়নেট আছে। প্রায় ৩৫টি অস্ত্র আছে বলে পুলিশকে জানিয়েছিল নাছির।
এ কে এম শহীদুল হক ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি, স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ নামের একটি বই লেখেন। সেখানে চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনের সময়কার নানা স্মৃতির বর্ণনা দেন। আর নাছিরকে প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার, তাঁর ত্রাসের রাজত্বের চিত্র তুলে ধরেন বইটিতে।

তিনি লিখেছেন, ‘নাছির বাহিনীর নাছির এতই ভয়ংকর ও দুর্ধর্ষ ছিল যে, তাঁর ভয়ে সবাই ভীত ও সন্ত্রস্ত থাকত। তাঁর বাহিনীতে প্রায় পঞ্চাশজন সক্রিয় সন্ত্রাসী ছিল। আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে শুধু ভয় পেত তা-ই না, তাঁরা ভয়ে তাঁকে নিয়মিত চাঁদাও দিত। বিএনপি নেতারাও তাঁকে ভয় পেত। সাধারণ লোকজন ভয়ে নাছিরের নামও উচ্চারণ করত না। মায়েরা নাসিরের ভয় দেখিয়ে নাকি বাচ্চাদের ঘুম পাড়াত!

নাছিরকে গ্রেপ্তার নিয়ে বইয়ে বলা হয়, ‘দু-দুবারের অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পরও আমি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলাম যে সফল আমাকে হতেই হবে। আমি জানতে পারলাম নাছির বাহিনীর প্রধান নাছির ও তাঁর কিছু সহযোগী মূলত চট্টগ্রাম শহরে অবস্থান করে। মাঝে মাঝে অপারেশন চালানোর জন্য ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী যায়। এটা জেনে আমার সোর্সকে নিয়োগ করলাম। দুদিন পর সে আমাকে জানালো নাছির প্রায়ই চট্টগ্রাম কলেজের সামনে একটি রেস্টুরেন্টে আসে। কিছুক্ষণ আড্ডা মেরে আবার চলে যায়। তখন চট্টগ্রাম কলেজ জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের ঘাঁটি ছিল।’

গ্রেপ্তারের পর নাসির জানিয়েছিল, কলেজে পড়ার সময় তিনি শিবিরের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হলেই বেশ কয়েকটি মামলা হয়। জামায়াত নেতারা মামলায় তদবির করে জামিন করান। এভাবে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।

এক প্রশ্নের জবাবে নাছির বলেছিলেন, চট্টগ্রামে অস্ত্র সরবরাহের জন্য লোকের অভাব আছে? শিবির বলেন, জামায়াত বলেন, বিএনপি বলেন, আওয়ামী লীগ বলেন যার কাছেই চান সেই জোগাড় করে দেবে। ‘রাজনীতি করতে হলে আমাদের মতো সন্ত্রাসীর সবারই প্রয়োজন হয়’ নাছিরের এই কালজয়ী উক্তি সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি, স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ বইয়ে স্থান পেয়েছে।

নাসিরের বিরুদ্ধে জোড়া খুন, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও অস্ত্র আইনের মামলা ছিল ৩৬টি । একে একে খালাস পান ৩১টি মামলায়। দুটিতে সাজা হলেও আগে কারাভোগে শেষ হয়ে যায়। আছে আর তিনটি মামলা। এর মধ্যে দুটি মামলায় আগে থেকে জামিনে ছিলেন। ১১ আগষ্ট রোববার জামিন পান আরেকটিতে। এরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে নাছির চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান ।

আদালত সূত্র জানায়, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৪ঠা অক্টোবর নাছিরের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রাবাসে পুলিশের ওপর হামলার মামলায় রায় হয়। এতে তাঁর পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল। এর আগে ২০০৮ সালে অস্ত্র মামলায় ১০ বছরের সাজা হয়। ২০১৫ সালের ২৪ শে মার্চ চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জমির উদ্দিন হত্যা মামলায় খালাস পান নাছির। ১৯৯৪ সালের ২০শে নভেম্বর জমিরকে গুলি করে হত্যা করা হয়। নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরি ও হাটহাজারীর তিন খুনের মামলায় খালাস পান নাছির। এভাবে ৩১টি মামলায় খালাস পান র‍্যাব পুলিশের তালিকার শীর্ষ এই সন্ত্রাসী।

নাছিরের আইনজীবী মনজুর আহমেদ আনসারী দাবি করেন, রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে নাছিরকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। তাই তাকে জামিনে মুক্তি দিয়েছে আদালত।

বিএনএ নিউজ, শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী

Loading


শিরোনাম বিএনএ