31 C
আবহাওয়া
১:০২ পূর্বাহ্ণ - মে ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬২ (কিশোরগঞ্জ-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৬২ (কিশোরগঞ্জ-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের হালচাল।

YouTube player

কিশোরগঞ্জ-১ আসন 

কিশোরগঞ্জ-১ (কিশোরগঞ্জ সদর এবং হোসেনপুর উপজেলা) নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৬২ তম আসন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে সাবেক কিশোরগঞ্জ-৩ আসন (সদর) এর সঙ্গে হোসেনপুর উপজেলা যুক্ত করে নতুন করে কিশোরগঞ্জ-১ আসন বিন্যস্ত করা হয়। এর আগে হোসেনপুর উপজেলা পাকুন্দিয়া উপজেলার সঙ্গে যুক্ত ছিল।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ বি এম জাহিদুল হক বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১০ হাজার ২ শত ৬৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২ শত ৫৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির এ বি এম জাহিদুল হক বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪১ হাজার ১০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শামছুল হক । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩৬ হাজার ২ শত ৫৬ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির এ বি এম জাহিদুল হক কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির এ বি এম জাহিদুল হক কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এ কে এম শামসুল হক বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৭ হাজার ৫ শত ৩০ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ২ শত ৮৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে এম শামসুল হক বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৮ হাজার ২ শত ৩৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইদ্রিস আলী ভূইয়া। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৮ হাজার ২ শত ১৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আলাউদ্দিন আহম্মদ বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৩ শত ৯৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫ শত ৫৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আলাউদ্দিন আহম্মদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৬ শত ২৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির ইদ্রিস আলী ভূইয়া। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৫ শত ৯ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ২৯ হাজার ২ শত ৭০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮০ হাজার ২ শত ৭৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭২ হাজার ৬৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাসুদ হিলালী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮০ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে নি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ৩০ হাজার ১ শত ৯৩ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৪২ হাজার ৩ শত ৬৬ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ,ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির রেজাউল করিম খান, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মো. মহিউদ্দিন , তারা প্রতীকে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের আবদুর রহমান ,কাস্তে প্রতীকে সিপিবির এনামুল হক প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৬০ হাজার ৪ শত ৭৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির রেজাউল করিম খান । ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৭১ হাজার ৭ শত ৩৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করার পর ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সৈয়দ আশরাফের বোন ডা:সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম ও ষষ্ঠ সংসদে বিএনপি,সপ্তম ,অষ্টম,নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ টানা বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর কিশোরগঞ্জ-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়,কিশোরগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৭.৬৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.১৬%, বিএনপি ৪০.৯০%, জাতীয় পাটি ১৩.৬৩%,জামায়াত ইসলামী ৬.২৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.০৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.১৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৩.০৪%, বিএনপি ২৮.২৫% জাতীয় পাটি ২২.০৬%, জামায়াত ইসলামী ৪.১১ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.৫৪% ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৪.১৭ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৮.৭৯ %, ৪ দলীয় জোট ৪৮.৭২%,জাতীয় পাটি ২.১৪% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৫% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৪.৫৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬১.৭৫ %, ৪দলীয় জোট ৩৪.৫৯% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৬৬% ভোট পায়।

কিশোরগঞ্জ -১ সংসদীয় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ডা:জাকিয়া নূর লিপি। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে আরো মনোনয়ন চাইবেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ুন। কিশেআরগঞ্জ জেলা আ.লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু, অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেলসৈয়দ শাফায়াতুল ইসলাম ও সাবেক রাষ্ট্রপতি পূত্র রাসেল আহমেদ তুহিন।
এছাড়া ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল গণতন্ত্রী পার্টির জেলা কমিটির সভাপতি অ্যাড. ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক এই আসন থেকে জোটের মনোনয়ন চাইবেন।

বিএনপি থেকে মনোনয় চাইবেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি,সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান চুন্নু। কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম,সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানী, সহ-সভাপতি এডভোকেট শরিফুল ইসলাম শরীফ, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা বিএনপির আহবায়ক সাবেক ভিপি খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল। বিএনপির কেন্দ্রীয় তথ্য সেলের সদস্যসচিব সালাউদ্দিন আহমেদ সেলু।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ -১ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। স্বাধীনতার পর এগারটি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সাতবার, বিএনপি তিনবার ও জাতীয় পার্টি একবার এই আসন থেকে বিজয়ী হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম স্বাধীনতার পর প্রথম সংসদ নির্বাচনে সদর আসন থেকে নির্বাচিত হন। তার পুত্র সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আশরাফ টানা পাচঁ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই মজবুত। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে গ্রুপিং , বিরোধ রয়েছে। বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় নয়। তার ওপর রয়েছে দলীয় কোন্দল। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম কাগজে কলমে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৬২তম সংসদীয় আসন (কিশোরগঞ্জ) আসনটিতে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হবেন বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ 

Loading


শিরোনাম বিএনএ