বিএনএ, ঢাকা: অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার ৯ যুবক নিখোঁজ হয়েছেন। এর আগে গত ২৪ জুন নৌপথে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সাতজন নিখোঁজ ও রায়পুরা উপজেলার একজনের মৃত্যুর খবর আসে।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) নিখোঁজ হওয়া ৯ যুবকের স্বজনেরা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
নিখোঁজ ৯ জন হলেন- উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কাঙ্গালিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোখলেছুর রহমান (২০), একই এলাকার মৃত হাছেন আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে কামাল হেসেন (৩৪), ভাটের গ্রামের হাসান উদ্দিনের ছেলে মাসুদ রানা (২২), দুলালকান্দি গ্রামের হারুন রশিদের ছেলে মনির হোসেন (২২), একই এলাকার আব্দুল মোতালিব মিয়ার ছেলে রবিউল (৩৩), রায়হান (২২), লক্ষ্মীপুর গ্রামের মহরম আলীর ছেলে স্বাধীন মিয়া (২০), নিলক্ষীয়া গ্রামের আমান মিয়া (২১) ও দেওয়ানেরচর গ্রামের আলমাছ আলীর ছেলে ইমন (২০)।
নিখোঁজদের স্বজনদের ভাষ্য, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা খরচ করে তারা দালালের স্থানীয় দুই সহযোগী দুলালকান্দি গ্রামের লাল মিয়ার ছেলে জাকির হোসেন এবং তার ফুফু একই এলাকার নুর কাসেমের স্ত্রী শাহিনুরের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন।
নিখোঁজ কামাল হোসেনের ছোট ভাই জামাল মিয়ার দাবি, ৫-৬ মাস আগে তার ভাইকে ১২ লাখ টাকা চুক্তিতে ইতালি নেওয়ার কথা বলে প্রথমে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কিছুদিন ‘গেইমঘরে’ (অবৈধ অভিবাসীদের ক্যাম্প) রেখে গত বুধবার রাত ৮টায় নদীপথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করার ৪০ মিনিটের মাথায় তাদের বহনকারী বোটটি ডুবে যায়।
‘জাকিরের তত্ত্বাবধানে ওই বোটে থাকা ২০ জনের মধ্যে কয়েকজন তীরে ফিরে এলেও ৯ জন নিখোঁজ থেকে যায়।
লিবিয়ায় থাকা জাকির হোসেন ও অন্যদের ফোন করে স্থানীয় মিলন মেম্বার বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হওয়ার খবর জানতে পেরে আমাদের জানান। এর মধ্য আমার ভাইও আছে।’
রবিউল নামে নিখোঁজ আরেকজনের ভাই ইব্রাহিম দাবি করেন, ৮ মাস আগে ভৈরবের এক দালালের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়েছিলেন তার ভাই। কিন্তু সেখানে তার ভাইকে বৈধ কোনো কাগজ করে দেওয়া হয়নি।
‘পরে দুলালকান্দি এলাকার জাকির হোসেন ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আমাদের কাছ থেকে ৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এখন খবর পেলাম, আমার ভাই নিখোঁজ।’
রবিউলের স্ত্রী সাথী আক্তার বলেন, ‘১৭ দিন আগে আমার স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিল, জানিয়েছিলেন, তারা গেইমঘরে আছেন, দোয়া চেয়েছিলেন। আগামী বুধবার ডিঙ্গিতে তুলবে, এ কথা জানিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেন। তারপর থেকে আর যোগাযোগ করতে পারিনি।
’এ বিষয়ে দুলালকান্দি গ্রামের বাসিন্দা নারায়ণপুর ইউপি সদস্য মিলন মিয়া বলেন, বিভিন্ন পরিবারের লোকজনের মাধ্যমে নিখোঁজের খবর পেয়ে লিবিয়ায় জাকির হোসেনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করি। ‘তাকে ফোন দেওয়া হলে অন্য একজন ধরেন। তিনি বলেন, বোট ডুবে জাকির হোসেনের অধীনে থাকা ২০ জনের মধ্যে কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হলেও বাকিদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।’
এদিকে, জাকির হোসেন ও তার ফুফু শাহিনুরের বাড়িতে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে তাদের পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা দিয়ে আত্মগোপনে আছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেলাব থানার ওসি মো. তানভীর আহমেদ বলেন, বিষয়টি তিনি সাংবাদিকদের মাধ্যমে ও লোকমুখে শুনেছেন। এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাননি। তবে খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।
একই কথা জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়েশা জান্নাত তাহেরা বলেন, ‘নিখোঁজদের বিষয় জানতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছি।’
বিএনএ/এমএফ/ হাসনাহেনা