31 C
আবহাওয়া
২:২৭ অপরাহ্ণ - সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১২১ (বরিশাল- ৩)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১২১ (বরিশাল- ৩)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে বরিশাল-৩ আসনের হালচাল।

বরিশাল- ৩ আসন 

বরিশাল-৩ সংসদীয় আসনটি সুগন্ধা ও আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে বাবুগঞ্জ ও মুলাদী উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১২১তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন:  নির্বাচনে বিএনপির মোশারফ হোসেন মঙ্গু বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৩ হাজার ২ শত ৫২ জন। ভোট প্রদান করেন ৮০ হাজার ৪ শত ৮৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোশারফ হোসেন মঙ্গু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ২৩ হাজার ৭ শত ৭৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল বারী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৮ হাজার ৯ শত ৫২ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোশারফ হোসেন মঙ্গুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির মোশারফ হোসেন মঙ্গুকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে বিএনপির মোশারফ হোসেন মঙ্গু বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৩৫ হাজার ৩ শত ৭৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৯৭ হাজার ২৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোশারফ হোসেন মঙ্গু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৮ হাজার ৪১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অধ্যাপক আব্দুল বারী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩০ হাজার ৬ শত ৬৫ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মোশারফ হোসেন মঙ্গু বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৩ শত ৪৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৮ হাজার ৪ শত ৬৯ জন। নির্বাচনে বিএনপির মোশারফ হোসেন মঙ্গু বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭১ হাজার ৬ শত ৩৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আফজালুল করিম। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৬ হাজার ৮ শত ৩২ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৩ হাজার ৩ শত ৭৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫ শত ৪৭ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ৪ শত ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির সেলিমা রহমান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৫১ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির টিপু সুলতান বিজয়ী হন 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৬ শত ৭৮ জন। ভোট প্রদান করেন ৫৯ হাজার ৯জন। নির্বাচনে ওয়ার্কাস পার্টির টিপু সুলতান বিজয়ী হন। হাতুড়ি প্রতীকে তিনি পান ৩৫ হাজার ৬ শত ২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৩ হাজার ৪ শত ৭ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৪ হাজার ২৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৬ শত ৭৯ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির জয়নুল আবেদীন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু, হাতুড়ি প্রতীকে ওয়াকার্স পাটির টিপু সুলতান, কুলা প্রতীকে বিকল্প ধারা বাংলাদেশের এনায়েত কবির, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের সিরাজুল ইসলাম ও ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান, প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৫৪ হাজার ৭শত ৭৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির জয়নুল আবেদীন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪৭ হাজার ২ শত ৮৭ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে টানা বিএনপি বিজয়ী হয়। নবম ও একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি এবং, দশম সংসদে ওয়ার্কাস পাটি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর বরিশাল-৩ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বরিশাল-৩ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৩৭.৭৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৩.৫৫ %, বিএনপি ২৯.৫৪%, জাতীয় পার্টি ০.৪৩%, জামায়াতে ইসলামী ১৭.৮২%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৮.৬৬% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.৬৭%। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৬০%, বিএনপি ৪৯.৫১%, জাতীয় পাটি ৫.৩৩%, জামায়াতে ইসলামী ৫.৮৫% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.৭১% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৪.৭৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.৪৫%, ৪দলীয় জোট ৫৫.৭৬%,জাতীয় পার্টি ৭.২৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.৬৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৪৩.৭১%, ৪দলীয় জোট ৩৯.৪৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.৮% ভোট পায়।

বরিশাল-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু। জোটগত নির্বাচন হলে তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদে মনোনয়ন চাইবেন। ১৪ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন চাইবেন দশম সংসদের সংসদ সদস্য ওয়াকার্স পাটির টিপু সুলতান।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন গৌরনদী উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সরদার মনিরুজ্জামার মনির, বাবুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আতিকুর রহমান ও যুবলীগের সাবেক সহসম্পাদক মিজানুর রহমান।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন।

ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শেখ টিপু সুলতান এবং ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের স্ত্রী ও সংরক্ষিত আসনের এমপি লুৎফুন্নেছা খান বিউটি।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, বরিশাল-৩ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু দলের দুই হেভিওয়েট নেতার দ্বন্দ্বে সাংগঠনিক অবস্থা বেশ দুর্বল। কেন্দ্রীয় দুই হেভিওয়েট প্রার্থী দুই মেরুতে অবস্থান করায় স্থানীয় নেতাকর্মীরা দুই শিবিরে বিভক্ত। ২০০৮ সালের নির্বাচনের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ঘিরে সেলিমা রহমান ও জয়নুল আবেদীনের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। যা এখনো চলমান। এই অবস্থায় আগামী নির্বাচনে বিএনপি এই আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবে কীনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী নয়। এছাড়া জাতীয় রাজনৈতিক সমিকরণের কারণে আওয়ামী লীগ গত তিনটি নির্বাচনে দলীয় জোটকে ছেড়ে দেয় এই আসনটি। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ দলীয় জোটকে আসনটি ছেড়ে দিতে নারাজ। তাছাড়া দলে ব্যক্তি ইমেজ ও রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী প্রার্থী নেই।

ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেননের জন্মস্থান হওয়ায় এলাকায় তাঁর দল ওয়ার্কার্স পার্টির বেশ প্রভাব রয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান নৌকা প্রতীক পেলেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাঁর পক্ষে কাজ করেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১২১ তম বরিশাল-৩ সংসদীয় আসনটিতে কোন দলের কোন প্রার্থী জিতবে তা অনেকাংশে নির্ভর করবে প্রার্থী মনোনয়নের ওপর।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, এমএফ, ওয়াই এইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ