।।সৈয়দ সাকিব।।
বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলের পুকুরে বহিরাগতদের অবাধে মাছ শিকার করতে দেখা যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী হল সংলগ্ন পুকুরে বিকেল হলেই বহিরাগত লোকজন এসে নিরবিচ্ছিন্নভাবে মাছ শিকার করে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
বুধবার (১২ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, উঠতি বয়সী কিছু কিশোরের পাশাপাশি বহিরাগত কয়েকজন যুবক পুকুরটির চারটি ঘাটেই বসে মাছ শিকার করছে। এদের কয়েকজনের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে, তারা কোনো জবাব দেয়নি।
অন্য আরেকটি ঘাটের একজন মাছ শিকারি জানান, তিনি মাদার বক্স হলের একজন স্টাফ। এভাবে মাছ শিকারের অনুমতি আছে কিনা জানতে চাইলে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যক্তি বলেন, “সবাইতো মাছ শিকার করছে; কেউতো কিছু বলছে না। আমি মাছ ধরলে সমস্যা কোথায়?” তার ব্যাগে কমপক্ষে দুই থেকে তিন কেজি মাছ আছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী।
পুকুরের চারটি ঘাট এবং এর আশেপাশে বহিরাগত লোকজন অনেকটা আরাম আয়েশ করেই মাছ ধরছে। অথচ ঘাটের পাশেই ‘সাত পুকুর গবেষণা প্রকল্পে’র স্তম্ভে লিখা আছে, মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ। আবাসিক হলের গার্ডদেরকেও এই ঘটনায় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে কৃষি প্রকল্পের নিজস্ব অর্থায়নে গ্রহণ করা হয় —সাত পুকুর গবেষণা প্রকল্প। ক্যাম্পাসের সাতটি পুকুরের সংস্কার, সৌন্দর্য বর্ধন, পোনা ছাড়া ও সংরক্ষণের মোট ব্যয় ধরা হয় ৭৯ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪২ টাকা। এই প্রকল্পের আওতাধীন পুকুরগুলোতে মাছ ধরা, গবাধিপশু গোসল করানো, কাপড় ধোয়া বা সামগ্রিক পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কিছু করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীদের গোসল ও সাঁতারকাটায় কোন প্রকার বিধি নিষেধ না থাকলেও, পুকুরগুলোতে মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষেধ করা হয়। কিন্তু, বহিরাগত লোকজন বিকেলে এসে গবেষণা প্রকল্পের এই পুকুর থেকে অবাধে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীরা এমন ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক মুঠোফোনে বলেন, “হলের পুকুরগুলো কৃষি প্রকল্পের আওতাধীন পরিচালিত হয়। পুকুরের মাছের নিরাপত্তা বিধান করাও তাদের দায়িত্ব। এই বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই।”
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এম ইমরান আলী বহিরাগতদের অবাধে মাছ শিকার প্রসঙ্গে বলেন, “পুকুরটি কৃষি প্রকল্পের কিনা, সে বিষয়ে খোঁজ নিতে হবে। তবে, সাত পুকুর গবেষণা প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এটি সাবেক উপ-উপাচার্য চৌধুরী জাকারিয়া স্যারের সময়কালে নেয়া হয়েছিল; ওনি চলে যাওয়ার পর প্রকল্পটির কার্যকারিতা আর নেই।”
আবাসিক শিক্ষার্থীরা বহিরাগতদের এমন অবাধ বিচরণ ও মাছ শিকারকে নেতিবাচকচাবে দেখছেন। শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাকিল আহাম্মেদ জানান, ” যদি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে থাকে, তাহলে আবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য পুকুরের মাছগুলো উন্মুক্ত করে দেয়া হোক। আমাদের পুকুরে এসে বহিরাগত লোকজন মাছ শিকার করে নিয়ে যাবে, এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন সার্বিক বিষয়ে বলেন, “বহিরাগতরা তো ক্যাম্পাসেই ঢুকার কথা না। আমরা একটা পোস্টার দিয়েছিলাম যেখানে মাদার বক্স হল, জোহা হল আর সোহরাওয়ার্দী হল এই তিনটি হলের দায়িত্বে পুকুরটিকে রাখার জন্য। আমি মনে করি, ক্যাম্পাসের যা সম্পদ, তা আমদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য; কোনোভাবেই সেখানে বহিরাগত লোকজনের প্রবেশাধিকার নেই।
বিএনএ/এমএফ