বিএনএ, ময়মনসিংহ: দেড় বছর বয়সি এক শিশু ছেলেকে নিয়ে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের স্কয়ার মাষ্টারবাড়ি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মা ও বেঁচে যাওয়া শিশুর পরিচয় মিলেছে। শিশুটির নাম মেহেদী হাসান। তার মায়ের নাম জায়েদা খাতুন (৩২)।
সে সিলেট সুনামগঞ্জ জেলার দুয়ারা উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. রমিজ উদ্দিনের মেয়ে।
শনিবার (১১ মে) রাত ১১টায় ভালুকা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি আরও জানান, নিহত জায়েদা ভালুকার স্কয়ার মাষ্টার বাড়ি এলাকায় দেড় বছর বয়সি শিশু মেহেদীকে নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। জায়েদা খাতুনের দ্বিতীয় বিয়ে হয়েছিল নরসিংদী জেলার পলাশ থানার গজারিয়া ইউনিয়নের কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. ফারুক মিয়ার সাথে। তার ঘরে প্রথম স্ত্রী ও তিনটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এ কারণে তার দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি পরিবার মেনে নেয়নি। ফলে জায়েদা স্বামীর সাথে যোগাযোগ না থাকায় ভালুকার স্কয়ার মাষ্টার বাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে ঘটনার দিন রাতে সে রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
নিহত জায়েদার বড় ভাই মো. রবিন মিয়া বলেন, ঢাকা এবং ভালুকা থেকে দ্বিতীয় বিয়ে করেছিল বলে শুনেছি। এখন ফেসবুকে আমরা তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। এখন থানার সাথে কথা বলে মরদেহ নিতে আসব। আমার বোনের দেড় বছর বয়সি শিশু ছেলের নাম মো. মেহেদী হাসান হোসেন।
নিহত জায়েদা খাতুনের স্বামী ফারুক মিয়া বলেন, আমি পেশায় ট্রাক চালক। আনুমানিক ৭/৮ আট বছর আগে জায়েদাকে দ্বিতীয় বিয়ে করি। তবে, পরিবার বিষয়টি মেনে নেয়নি। এরপর থেকেই সে বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করতেন। আমার সাথে বিয়ে হওয়ার পর আরও তিনটি বিয়ে করেছে বলে শুনেছি। এখন আমি প্রথম স্ত্রীকে নিয়ে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় বসবাস করি। জায়েদা খাতুনও তার ছেলেকে নিয়ে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় বসবাস করতেন। তবে, নির্দিষ্ট ঠিকানা আমার জানা নেই। গত এক মাসে আমার সাথে জায়েদার তিনবার দেখা হয়েছে।
ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি যে, জায়েদা মারা গেছে। তাই, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। তবে, সড়ক দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া মেহেদী হাসান আমার সন্তান না। জায়েদার পরিবারকে খবর দেয়া হয়েছে। তার ভাই সুনামগঞ্জ থেকে মরদেহ নিতে আসছে বলে জানতে পারছি।
এর আগে গত ৯ মে রাত আনুমানিক তিনটার দিকে ভালুকা উপজেলার স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ওই দুধের বয়সি শিশুটিকে নিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয় মা জায়েদা। এতে শিশুটি বেঁচে গেলেও সে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়। বতর্মানে শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সেখানে মা হারা এই শিশুটির চিৎকারে পরিবেশ ভারি হয়ে যাওয়ায় ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় নেটিজেনদের হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত আনুমানিক তিনটার দিকে স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ওই শিশু ও তার মা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তবে কিভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা জানা যায়নি। পরে ৯৯৯ কল পেয়ে পুলিশ ওই শিশু ও তার মাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে মা মারা গেছে। তবে সেখানে আহত শিশুটির চিকিৎসা চলছে।
সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের চিকিৎসক ফারজানা বলেন, শুক্রবার রাত সাড়ে আটটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ফলে অবুঝ শিশুটি কান্নাকাটি করছে। তবে আমরা তার চিকিৎসা নিয়মিত মনিটরিং করছি।
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারি পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা নিয়মিত শিশুর খোঁজখবর নিচ্ছি। আল্লাহর রহমতে শিশুটি সুস্থ আছে। ওয়ার্ডে কর্মরত কর্মীরা তার দেখভাল করছে।
বিএনএনিউজ/ হামিমুর রহমান/ বিএম/হাসনা