22 C
আবহাওয়া
৪:০১ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » শবে কদরের(২০২৩) দোয়া, ফজিলত ও আমল

শবে কদরের(২০২৩) দোয়া, ফজিলত ও আমল

শবে কদরের (২০২৩) দোয়া, ফজিলত ও আমল

পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের বেজোড় তারিখে দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। মুসলমানদের কাছে এই রাত অত্যন্ত মহিমান্বিত একটি রাত। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ রাত কাটাবেন। ইসলাম ধর্ম মতে, মহান আল্লাহতায়ালা লাইলাতুল কদরের রাতকে অনন্য মর্যাদা দিয়েছেন। হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও এ রাতের ইবাদত উত্তম। এই রাতে আল্লাহর অশেষ রহমত ও নিয়ামত বর্ষিত হয়।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হজরত  রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লাইলাতুল কদরে যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের নিয়তে কিয়াম করবে, তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হবে। ’ -সহিহ মুসলিম: হাদিস নং ৭৬০; সহিহ বোখারি: হাদিস নং ২০১৪

তাই এই রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রমজান মাসের আগমন ঘটলে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের উদ্দেশে বললেন, তোমাদের নিকট এই মাস সমাগত হয়েছে, তাতে এমন একটি রাত রয়েছে, যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল, সে প্রকৃতপক্ষে সকল কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত। একমাত্র (সর্বহারা) দুর্ভাগাই এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়। ’ -সুনানে ইবনে মাজা: হাদিস নং ১৬৪৪

শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও দোয়া

শবে কদরের নামাজ পড়ার নিয়ম
শবে কদরের নামাজ দুই রাকআত করে চার রাকআত পড়তে হয়। এরপর যত ইচ্ছা নফল নামাজ পড়া যায়। এই নামাজের প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একবার সূরা কদর ও তিনবার সূরা ইখ্লাস পড়তে হয়।

‘লাইলতুল কদর’আরবি শব্দ। শবে কদর হলো ‘লাইলাতুল কদর-এর ফারসি পরিভাষা। কয়েক শতাব্দী মুঘল শাসন এবং উপমহাদেশে ফারসি রাজকীয় ভাষা থাকার কারণে ধর্ম, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও বিচার-আচারের বহু ফারসি শব্দ আমাদের সংস্কৃতির সাথে একাকার হয়ে গেছে। ‘সালাতের পরিবর্তে নামাজ,‘সাওমের’ পরিবর্তে রোজার মতো লাইলাতুল কদর এর ফারসি পরিভাষা শবে কদর সাধারণ মানুষের কাছে তাই বেশি পরিচিত।

‘শব’অর্থ রাত, আর আরবি ‘লাইলাতুন’ শব্দের অর্থও রাত বা রজনী। কদর অর্থ সম্মানিত, মহিমান্বিত। সুতরাং লাইলাতুল কদরের অর্থ সম্মানিত রজনী বা মহিমান্বিত রজনী।

শবে কদরের দোয়া
মর্যাদার রাত লাইলাতুল কদর। যে রাতটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এ রাতে মহান আল্লাহ বান্দার মুক্তির জন্য নাজিল করেছেন কোরআনুল কারিম। এ রাতের উপস্থিতি কেউ জানতে পারলে তাকে নবীজি (স.) বিশেষ দোয়া পড়তে বলেছেন।

আরবী উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।’

বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে পছন্দ করেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’

উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে জানতে চেয়েছেন, ‘কোন রাতটি লাইলাতুল কদর, তা যদি আমি জানতে পারি, তখন কোন দোয়া পড়বো?’ তখন রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁকে উপরোক্ত দোয়াটি পড়তে বলেন। (তিরমিজি: ৩৫১৩)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, রমজানের শেষ দশকের প্রতিটি রাতে বেশি বেশি এ দোয়া পড়ার।

যেদিনে শবে কদরের রাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে

ঠিক কবে শবে কদরের রাত সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট বা নির্দিষ্ট করে বলার বা জানার কোনো সুযোগ নেই। তবে, এটি সুস্পষ্ট যে তা রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় কোনো একটি রাত হবে। এই অনুসারে শবে কদর হবে, রমজান মাসের শেষ ১০ ‍দিনের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের কোনো এক রাতে। অর্থাৎ ২০ রমজান দিবাগত রাত, ২২ রমজান দিবাগত রাত, ২৪ রমজান দিবাগত রাত, ২৬ রমজান দিবাগত রাত এবং ২৮ রমজান দিবাগত রাতে লাইলাতুল কদর হবে।

পবিত্র হাদিস গ্রন্থ সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতদের লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা কদরের রাত সন্ধান কর।’ (বুখারি)

লাইলাতুল কদরের ফজিলত

শবে কদরের ফজিলত
লাইলাতুল কদর রমজান মাসের একটি মহিমান্বিত রাতের নাম। এ রাতের ফজিলত ও মর্যাদা স্বয়ং আল্লাহ তাআলা অনেক বৃদ্ধি করেছেন। কেননা এ রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে। এ রাতকে নিয়ে পবিত্র কুরআনে একটি সূরাও নাজিল করা হয়েছে। এ বিষয়ে সূরা আল-কদরে বর্ণিত আছে, ‘নিশ্চয়ই আমি তা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কী জানো?’ (আয়াত: ১-২)

এ সম্পর্কে সূরা দুখানে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দিয়েছেন, ‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি একে (কুরআন) নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় (লাওহে মাহফুজ থেকে ফেরেশতাদের কাছে) স্থিরিকৃত হয়। আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (আয়াত: ২-৬)

এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। শান্তি আর শান্তি, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত (নাজিল হতে) থাকে।’ ( সূরা: আল-কদর, আয়াত: ৩-৫)

এ রাত সম্পর্কে হাদিসে এসেছে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গোনাহ মাফের কথা উল্লেখ করেছেন। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত পবিত্র হাদিস গ্রন্থ সহিহ বুখারির বর্ণনায় এসেছে , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদর তথা (নির্ধারিত মর্যাদার রাত) জেগে ইবাদাত করে, তার বিগত জীবনের সব গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারি)।

শবে কদরের নামাজের নিয়ম ও নিয়ত (আরবী)

লাইলাতুল কদর নামাজের নিয়ম
লাইলাতুল কদরে বিশেষ কোনও নামাজের পদ্ধতি নেই। লাইলাতুল কদরের রাতে নামাজ দুই রাকাত করে যত সুন্দর করে, যত মনোযোগ সহকারে পড়া যায় ততই ভালো। দুই রাকাত, দুই রাকাত করে আপনি যত খুশি পড়তে পারবেন। এই রাতে কোরআন তেলাওয়াত করবেন। বেশি বেশি দোয়া পড়বেন। ইস্তেগফার পড়বেন। তওবা করবেন।

এই রাতে যে দোয়া বেশি পড়বেন
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, শবে কদরের রাতে আমার কোন দোয়াটি পড়া উচিত?’ তিনি তাঁকে পড়ার জন্য নির্দেশ দিলেন-

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

শবে-কদরের নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতু আন্‌ উছাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল লাইলাতিল কাদ্‌রি নফ্‌লে মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি- আল্লাহু আকবর।

বাংলা অর্থ: আমি কাবামুখী হয়ে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) জন্য শবে কদরের দুই রাকআত নফল নামাজ পড়ার নিয়ত করলাম- আল্লাহু আকবর।

লাইলাতুল কদর কি?

এবার আমরা জানবো লাইলাতুল কদর সম্পর্কে
পবিত্র কোরআন নাযিলের কারণে ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র লাইলাতুল কদর বা শবে কদর অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাস যে কারণে বিশেষ মর্যাদার পেয়েছে তার অন্যতম ‘লাইলাতুল কদর’ বা কদরের রাত। যার অপর নাম শবে কদর। আল্লাহ মহিমান্বিত এই রাতে কোরআন নাজিল করেছেন এবং রাতকে হাজার মাসের চেয়ে মর্যাদাবান ঘোষণা করেছেন। এই রাতের কোনো এক সময় পৃথিবীর সকল অচেতন পদার্থ, বৃক্ষ-লতা ইত্যাদি আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে সিজদাহ্ করে থাকে।

এই রাতে ফেরেশতাগণ পৃথিবীতে এসে মানুষের ইবাদত পর্যবেক্ষণ করেন এবং তাদের শান্তি কামনা করেন। তাই এই রাতে জেগে থেকে কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, দোয়া-দুরূদ, জিকির ইত্যাদি ইবাদত বেশি করে করা প্রত্যেক মুসলমানের একান্ত কর্তব্য।

শবে কদরে আরও যে আমল করা যেতে পারে
শবে কদরের অন্যতম ইবাদত হলো দুই ব্যক্তির বিরোধ বা কোনও পরিবারের পারস্পরিক ঝগড়াবিবাদ মিটিয়ে দেওয়া। উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) ‘লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন। এ সময় দুইজন মুসলমান ঝগড়া করছিলেন। তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘আমি আপনাদের ‘লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে অবহিত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, উঠিয়ে নেওয়াটা আপনাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। আপনারা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ তম) এবং পঞ্চম (২৫ তম) তারিখে এর সন্ধান করুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯)

শবে কদর (২০২৩) কি?

শবে কদর একটি মহিমান্বিত, বরকতময় ফজিলতপূর্ণ রজনী। শবে কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। অর্থাৎ, শবে কদরে ইবাদত করা হাজার মাস ইবাদত করার চেয়েও বেশি ফজিলত রাখে। শবে কদর রমজানুল মোবারকের শেষ দশকের যে কোনও বেজোড় রাতে হতে পারে। শবে কদরে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রেখে ওয়াবের আশায় ইবাদত করলে, পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। শবে কদরের দোয়া: উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফয়া ফাফু আন্নি। হে আল্লাহ, আপনি বড়ই ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন।

শবে কদর কবে ২০২৩

বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে চাঁদ দেখা কমিটি এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের শবে কদর পালন করা হবে ১৯ এপ্রিল বুধবার ২০২৩। সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমান গুগলে অনুসন্ধান করছে এ বছর শবে কদর কবে পালন করা হবে। আমাদের দেশে শুধু ২৭ রমজানে শবে কদর পালন করা হয়, কিন্তু আল্লাহতালা ২৭ রাতে কদর রাতে যে কোরআন নাজিল করেছেন এমন কোন প্রমান নেই, তাই আমাদের 20 থেকে 30 রোজা বেজোর রাত্রে কদরের রাত খুঁজে নেওয়া দরকার।

শবে কদর কত তারিখ ২০২৩
১৮ এপ্রিল দিবাগত রাত্রে হবে শবে কদরের রাত। পালিত হবে ১৯ এপ্রিল বুধবার।

শবে কদর অর্থ কি?
শবে কদর অর্থ হলো মর্যাদাপূর্ণ রাত বা ভাগ্যরজনী। শবে কদর কথাটি ফারসি। শব মানে রাত বা রজনী আর কদর মানে সম্মান।

শবে কদরের দোয়া
শবে কদর/লাইলাতুল কদরের দোয়া

লাইলাতুল কদরের দোয়া

এই রাতে যে দোয়া বেশি পড়বেন
হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, শবে কদরের রাতে আমার কোন দোয়াটি পড়া উচিত?’ তিনি তাঁকে পড়ার জন্য নির্দেশ দিলেন-

বাংলা উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুয়্যুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।’

বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিস

শেষ দশক এসে গেলো- আলহামদুলিল্লাহ। এই সময়ের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর যার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ জানিয়েছেন, এতে এমন এক রাত রয়েছে যা হাজার রাত অপেক্ষা উত্তম। যে তার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হল সে যে সামগ্রিক কল্যাণবঞ্চিত হল

রাসূলুল্লাহ নিজে এসময় সারারাত জাগতেন, নিজের পরিবারকেও জাগাতেন।

আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিন যেন এই শেষ দশক আমলে পূর্ণ হয়, যেন আমরা এর কল্যাণ লাভ করতে পারি, তিনি আমাদের আমলের তাওফিক দিন, তা কবুলও করে নিন। এই দশকের হক যেন আমরা আদায়ে সক্ষম হই- আমিন।

হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, শবে কদরে হজরত জিবরাইল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট এক দল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে, তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (তাফসিরে মাজহারি)।

মিশকাত শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যদি তোমরা কবরকে আলোকময় পেতে চাও তাহলে লাইলাতুল কদরে জাগ্রত থেকে ইবাদত কর। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যদি কেউ ঈমানের সঙ্গে সাওয়াব লাভের খাঁটি নিয়তে লাইলাতুল কদর কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে অতিবাহিত করে তবে তার পূর্ববর্তী সকল গোনাহ ক্ষমা করা হবে। (বুখারি, হাদিস নং : ৬৭২)।

রাসূল (সা.) আরও বলেন, ‘রমজানের শেষ দশদিনে তোমরা কদরের রাত তালাশ কর। (মুসলিম, হাদিস নং: ১১৬৯)।

একদা হযরত উবায়দা (রা.) নবী করীম (সা.) কে লাইলাতুল কদরের রাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তখন নবীজী সেই সাহাবিকে বললেন রমজানের বেজোড় শেষের দশ দিনের রাতগুলোকে তালাশ করো। (বুখারি, হাদিস নং: ২০১৭)।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, যদি কেউ লাইলাতুল কদর খুঁজতে চায় তবে সে যেন তা রমজানের শেষ দশ রাত্রিতে খোঁজ করে। (মুসলিম, হাদিস নং : ৮২৩)। তাই ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রমজানের রাতগুলোকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হবে।

ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত রাসূল (সা.) বলেন, যে লোক শবে কদর থেকে বঞ্চিত হয় সে যেন সমগ্র কল্যাণ থেকে পরিপূর্ণ বঞ্চিত হল। আবু দাউদ শরিফে উল্লেখ রয়েছে, হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেলো কিন্তু ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে কাটাতে পারলো না, তার মতো হতভাগা দুনিয়াতে আর কেউ নেই। কদরের রাতের ইবাদতের সুযোগ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষ দশদিনের পুরো সময়টাতে ইতেকাফরত থাকতেন। (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৭)।

রাসূল (সা.) বলেন, শবে কদরকে নির্দিষ্ট না করার কারণ হচ্ছে যাতে বান্দা কেবল একটি রাত জাগরণ ও কিয়াম করেই যেন ক্ষ্যান্ত না হয়ে যায় এবং সেই রাতের ফজিলতের উপর নির্ভর করে অন্য রাতের ইবাদত ত্যাগ করে না বসে। তাই বান্দার উচিত শেষ দশকের কোন রাতকেই কম গুরুত্ব না দেয়া এবং পুরোটাই ইবাদাতের মাধ্যমে শবে কদর অন্বেষণ করা।

হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদা আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম হে আল্লাহর রাসূল আমি যদি কদরের রাত সম্পর্কে অবহিত হতে পারি তবে আমি কি করব? তখন রাসূল (সা.) আমাকে এই দুয়া পাঠ করার জন্য বললেন। ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি’। (তিরমিজি, হাদিস নং : ৩৫১)

লাইলাতুল কদর সূরা

লাইলাতুল সূরা সম্পর্কিত তথ্য
লাইলাতুল কদর সূরা একটি মাক্কী সূরা। কদর শব্দের অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। তাই লাইলাতুল কদরকে মাহাত্ম্য বা সম্মানের সূরা বলা হয় । লাইলাতুল কদর সুরাটি মক্কায় অবতীর্ণ (নাজিল) হয়। সুরাতুল কদর পবিত্র কোরআন এর ৯৭ তম সূরা হিসেবে পরিচিত। এই সুরার আয়াত সংখ্যা ৫ টি। এবং সুরাটিতে রুকুর সংখ্যা একটি।

সূরা কদরে উল্লেখ আছে যে, পবিত্র কোরআন নাজিল হয় রমজানের পবিত্র কদরের রাতে। এবং এই রাত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। হাজার মাস ইবাদতের সমান এই মাসের ইবাদত।

আরও পড়ুন : রমজানের রোজার নিয়ত, সেহেরি ও ইফতারের দোয়া

আশা করছি সুরাতুল কদর বা সূরাতুল কদর সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জানতে পেরেছেন।
এবার আমরা লাইলাতুল সুরার ফজিলত সম্পর্কে জানবো। জানবো সুরাতুল কদরে কি কি ফজিলত আছে।

সূরা কদরের ফজিলত
পবিত্র কোরআন এর অন্যতম সূরা লাইলাতুল কদর বা সুরাতুল কদর। সুরাতুল কদরে আল্লাহ স্পষ্ট বলেছেন কদরের রাতের ইবাদতের বিষয়ে। পবিত্র রমজান মাসে নাজিল হয় মহাগ্রহন্থ পবিত্র কোরআন। এজন্য অন্যান্য মাসের চেয়ে রমজান মাসের ইবাদতে সাওয়াব অর্থাৎ ফায়েদা অনেক বেশী। আর রমজান মাসের রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদর সবচেয়ে মহিমান্বিত, তাৎপর্য পূর্ণ একটি রাত।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরানের সুরাতুল কদরে বলেন, “আমি একে (পবিত্র কোরআন) নাজিল করেছি কদরের রাতে। তুমি কি জানো ‘কদরের রাত’ কি? খাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম কদরের রাতের ইবাদত”। সূরা কদর এর আয়াত ১ থেকে ৩)

সূরা কদরের ফজিলত সম্পর্কিত ব্যাখ্যায় মুফাসসিরকুল হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, “কদরের রাতের ইবাদত অন্য হাজার হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে বেশী উত্তম”। (তথ্যঃ তাফসিরে ইবনে আব্বাস, পৃষ্ঠা নং  ৬৫৪)

অন্যদিকে তাবেই মুজাহিদ (র.) এই সূরার ফজিলত সম্পর্কে বলেন, “এই সুরার ভাবার্থ হচ্ছে, এই রাতের (কদরের রাতের) ইবাদত যেমন, তেলাওয়াত, দরুদ, কিয়াম ও অন্যান্য আমল অন্য হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে অতি উত্তম”।

সকল মুফাসসিররা সূরা কদরের ফজিলতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমনটাই ব্যাখ্যা দিয়েছেন, আর এটাই সঠিক। (তথ্য সুত্র খণ্ড ১৮, পৃষ্ঠা নং ২২৩)

এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন যে লাইলাতুল কদর এর রাত কতটা গুরুত্বপূর্ণ রাত।

একজন মুসলিম হিসেবে এক রাত ইবাদত করে হাজার রাত ইবাদতের সমান সাওয়াব বা ফায়েদা পাওয়া যাবে। তাই পবিত্র শবে কদরের রাতে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ ইবাদত করা উচিত। তবে, নিয়ম অনুযায়ী শুধু আল্লাহ ইবাদত -ই করা উচিত। এমন কোনও কাজ করা উচিত না যার জন্য আল্লাহ আমাদের উপর বেজার হন। সবাইকে আল্লাহ বোঝার তৌফিক দিন।

সূরা কদর, লাইলাতুল কদর
সূরা কদর/লাইলাতুল কদর

সূরা কদর (বাংলায়)

সূরা কদর
এতক্ষণ আমরা লাইলাতুল কদর সূরা -র সাথে পরিচিত হলাম। জানলাম সুরাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে। এখন আমরা সূরা কদর এর আরবি ও বাংলা উচ্চারণ দেখবো। এবং বাংলা অর্থ জানবো। চলুন তাহলে সুরাতুল কদরের আরবি, বাংলা উচ্চারণ, বাংলা অর্থ এবং ইংরেজি অর্থ জেনে নেওয়া যাক।

সূরা আল-কদর পবিত্র কুরআন শরীফের ৯৭ তম সূরা। এর আয়াত সংখ্যা ৫ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১। আল কদর সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। কদরের এর অর্থ মাহাত্ম্য ও সম্মান। এর মাহাত্ম্য ও সম্মানের কারণে একে “লায়লাতুল-কদর” তথা মহিম্মান্বিত রাত বলা হয়। নিচে সূরা আল-কদর এর বাংলা উচ্চারণ সহ দেয়া হলো-

বাংলা উচ্চারণ: ইন্নাআনঝালনা-হু ফী লাইলাতিল কাদর।
বাংলা অর্থ: আমি একে নাযিল করেছি শবে-কদরে।

বাংলা উচ্চারণ: ওয়ামাআদরা-কা-মা-লাইলাতুল কাদর।
বাংলা অর্থ: শবে-কদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?

বাংলা উচ্চারণ: লাইলাতুল কাদরি খাইরুম মিন আলফি শাহর।
বাংলা অর্থ: শবে-কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।

বাংলা উচ্চারণ: তানাঝঝালুল মালাইকাতুওয়াররুহু ফীহা-বিইযনি রাব্বিহিম মিন কুল্লি আমর।
বাংলা অর্থ: এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে।

বাংলা উচ্চারণ: ছালা-মুন হিয়া হাত্তা-মাতলা‘ইল ফাজর।
বাংলা অর্থ: এটা নিরাপত্তা, যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

এ রাতে করণীয়

কোরআন অধ্যয়ন : এ রাতে পবিত্র কোরআন নাযিল হয়েছে। মানব জাতির এ বিরাট নিয়ামতের কারণেই এ রাতের এত মর্যাদা ও ফজিলত। এ কোরআনকে ধারণ করেলেই মানুষ সম্মানীত হবে, দেশ ও জাতি মর্যাদাবান হবে; গোটা জাতির ভাগ্য বদলে যাবে। কাজেই এ রাতে অর্থ বুঝে কোরআন পড়তে হবে। কোরআনের শিক্ষাকে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠার শপথ গ্রহণ করতে হবে। বাছাইকৃত কিছু আয়াত এ রাতে মুখস্তও করা যেতে পারে। যাদের কোরআনের উপর প্রয়োজনীয় জ্ঞান রয়েছে তারা এ রাতে একটি দারসও প্রস্তুত করতে পারেন।

পড়ার নিয়ম : ন্যুনতম ৮ রাকাত থেকে যত সম্ভব পড়া যেতে পারে। এজন্য সাধারণ সুন্নতের নিয়মে ‘দু’রাকাত নফল পড়ছি’ এ নিয়তে নামাজ শুরু করে শেষ করতে হবে। এ জন্য সূরা ফাতিহার সাথে আপনার জানা যেকোনো সূরা মিলালেই চলবে। বাজারে প্রচলিত কিছু বইতে ৩৩ বার সূরা আল্ কদর, ৩৩ বার ইখলাস ইত্যাদি উল্লেখ করে অহেতুক জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে।

এছাড়া সালাতুল তাওবা, সালাতুল হাজত, সালাতুল তাসবিহ নামাজও আপনি পড়তে পারেন। এগুলোর নিয়ম আপনি মাসয়ালার বইগুলোতে পাবেন। রাতের শেষভাগে কমপক্ষে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়ার চেষ্টা আমরা অবশ্যই করব। কারণ এ নামাজ সর্বশ্রেষ্ঠ নফল নামাজ। আর রাতের এ অংশে দোয়া কবুল হয়। নফল নামাজের সংখ্যার হিসাবের চেয়ে নামাজের গুণগত দিকটির দিকে আমাদের বেশি লক্ষ্য রাখতে হবে।

জিকির ও দোয়া : হাদিসে যে দোয়া ও জিকিরের অধিক ফজিলতের কথা বলা হয়েছে সেগুলো থেকে কয়েকটি নির্বাচিত করে অর্থ বুঝে বার বার পড়া যেতে পারে। ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) ও দরুদ আল্লাহর কাছে খুবই প্রিয়। কমপক্ষে ১০০ বার ইস্তেগফার ও ১০০ বার দরুদ পড়া যেতে পারে।

হযরত আয়েশা রা: বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সা: কে বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ- যদি কোনো প্রকারে আমি জানতে পারি রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে কি দোয়া করব? জবাবে নবী সা: বলেন, এ দোয়া পড়বে- আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নি।” অর্থাৎ ‘আয় আল্লাহ তুমি বড়ই মাফ করণেওয়ালা এবং বড়ই অনুগ্রহশীল। মাফ করে দেয়াই তুমি পছন্দ কর। অতএব তুমি আমাদেরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দাও।’

মুনাজাত : মুনাজাতের মাধ্যমে বান্দার বন্দেগি ও আল্লাহর রবুবিয়াতের প্রকাশ ঘটে। বান্দাহ তার প্রভূর কাছে চায়। প্রভূ এতে ভীষণ খুশি হন। মহন আল্লাহ তার বান্দার প্রতি এতটাই অনুগ্রহশীল যে, তিনি তার কাছে না চাইলে অসস্তুষ্ট হন। ‘যে আল্লাহর নিকট কিছু চায় না আল্লাহ তার উপর রাগ করেন’- (তিরমিযি)। ‘দোয়া ইবাদতের মূল”- (আল হাদিস)।’ যার জন্য দোয়ার দরজা খোলা তার জন্য রহমতের দরজাই খোলা রয়েছে’- (তিরমিযি)। কাজেই আমরা কায়মনোবাক্যে আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করব, ক্ষমা চাইব, রহমত চাইব, জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাইব।

উপরোক্ত আমলের মাধ্যমে আমরা এ পবিত্র রাতটি কাটাতে পারি। লাইলাতুল কদর পাওয়ার তামান্না নিয়ে নিষ্ঠার সাথে অনুসন্ধান করলে আল্লাহ আমাদের বঞ্চিত করবেন না ইনশাআল্লাহ। অবশ্য নফল ইবাদত নিরবে নিভৃতে ঘরে আদায় করাই মাসনুন। এতে আমাদের ইবাদত রিয়া (প্রদর্শন ইচ্ছা) দোষে দুষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে। এ পবিত্র রাতে কিছু অনাকাঙ্খিত কাজ হতে দেখা যায়। এগুলো বন্ধ করার জন্য গঠনমূলক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক। আমিন।


বিএনএনিউজ/বিএম,জিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ