30 C
আবহাওয়া
৩:৪৭ পূর্বাহ্ণ - মে ২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » যাকাত হিসাব করার নিয়ম

যাকাত হিসাব করার নিয়ম

যাকাত হিসাব করার নিয়ম

ভূমিকা :  যাকাত ২০২৩
যাকাত ইসলাম ধর্মের মৌলিক পাঁচটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। সম্পদের সাথে সম্পর্কিত ইবাদতের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল যাকাত। পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ৩২ স্থানে যাকাতের কথা উল্লেখ করেছেন।

যারা যাকাত সঠিকভাবে আদায় করেনা তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন, “যারা স্বর্ণ-রূপা বা টাকা-পয়সা সঞ্চয় করে রাখে, আল্লাহর রাস্তায় সেটা ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সুসংবাদ (?) দিয়ে দাও।” (সূরা তাওবা-৩৪)।যাকাত হিসাব করার নিয়ম নিচে আলোচনা করা হল।

যাকাত হিসাব করার নিয়ম (Zakat Calculator)

এই বছর ২০২৩ সালের যাকাত নিয়ে তথ্য দেওয়া হলোঃ
নগদ ৪২ হাজার টাকা আপনার কাছে থাকলেই আপনার ওপর যাকাত ফরজ (রুপার ক্ষেত্রে)
এবং নগদ ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা যদি থাকে তাহলে আপনার উপর যাকাত ফরজ (স্বর্ণের ক্ষেত্রে)

নগদ ৪২ হাজার টাকা জমা থাকলেই (১০৫০) টাকা যাকাত দিতে হবে। রুপার ভরি-৮ শত টাকা। ২.৫% প্রতি ভরির যাকাত আসে-২০ টাকা।
১ লাখে- ২ হাজার ৫ শত টাকা যাকাত দেবেন আজ ২২ ক্যারেট স্বর্ণের বাজার মূল্য- ৭৮ হাজার টাকা। ২০% বাদে বিক্রয় মূল্য- ৬২ হাজার ৪ শত টাকা। ২.৫% যাকাত- ১ হাজার ৫ শত ৭০ টাকা।

প্রতি ভরি যাকাত – ১ হাজার ৫ শত ৭০ টাকা।
আনুমানিক যেদিন যাকাত হিসাব করবেন সেদিনের দাম দেখে নিবেন গোল্ডের। কারণ স্বর্ণের দাম সবসময় উঠানামা করে।

আপনার যত ভরি সোনা আছে, সেখান থেকে সাড়ে সাত ভরি বা ৮৫ তোলার অতিরিক্ত যদি থাকে, তাহলে সম্পূর্ণ সোনার যাকাত দিতে হবে। শুধু অতিরিক্তটার নয়।

আপনার কাছে ১৫ ভরি থাকলে ১৫ ভরিই যাকাত দেবেন, পুরাটারই যাকাত দিতে হবে। আপনি সাড়ে ৭ ভরি বাদে যাকাত দেবেন, এ কথা শুদ্ধ নয়।

যাকাত কখন ফরজ হয়, কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়

কিসের উপর যাকাত প্রদান করতে হয়?
চার বস্তুর উপর যাকাত প্রদান করতে হয়।
(১) নগদ টাকা
(২) ব্যবসায়িক পণ্য
(৩) সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা ও
(৪) সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ।
উল্লেখ্য যে, গরু-মহিষ-উটের উপরও যাকাত আসে যা সাধারণত আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়।

যাকাত কখন ফরজ হয়,
যে ব্যক্তির কাছে উপরোক্ত চার বস্তুর পরিপূর্ণ কোন একটি অথবা সবগুলোর কিছু কিছু অংশ মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা যার বর্তমান (আন্তর্জাতিক ও জাতীয়) বাজার দর অনুযায়ী (২০২২ সন) ৪০ হাজার টাকা সমপরিমান অর্থ এক বছর সময় অতিবাহিত হয়েছে তার উপর যাকাত ফরজ হয়। অর্থাৎ বছরের শুরুতেও ছিল এবং শেষেও এই পরিমাণ ছিল।

১ লাখ টাকায় যাকাত কত

মোট ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হবে অর্থাৎ ২.৫%। একশত টাকায় আড়াই টাকা, ১ হাজার টাকায় ২৫ টাকা মাত্র। ১ লাখ টাকায় ২ হাজার ৫ শত টাকা যাকাত ইত্যাদি।

কত গ্রাম স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয় ?

স্বর্ণে যাকাত ফরজ হবে যদি শুধু স্বর্ণ স্বতন্ত্রভাবে সাড়ে ৭ তোলা বা ৮৭.৪৫ গ্রাম বা এর বেশি থাকে। রৌপ্যে যাকাত ফরজ হবে যদি শুধু রৌপ্য স্বতন্ত্রভাবে সাড়ে ৫২ তোলা বা ৬১২.৩৫ গ্রাম বা এর বেশি থাকে। তখন স্বর্ণ ও রৌপ্যের সরাসরি চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অথবা মূল্যের ৪০ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে।

যাকাত কাকে দিবেনঃ
যাকাত গরীব-ইয়াতিম-মিসকিনদের হক্ব। নিকটস্থ গরীব ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনদেরকে যাকাত দেয়া উত্তম। তবে খুব খেয়াল রাখতে হবে যেন আমার যাকাতের টাকা এমন কোন ব্যক্তিকে না দেয়া যে কিনা এই টাকা দিয়ে নেশা করবে, জুয়া খেলবে অথবা কোন হারাম কাজে ব্যবহার করবে। বরং নামাজী, পরহেজগার ও সৎ ব্যক্তিদেরকেই খুঁজে খুঁজে যাকাত দেয়া জরুরী।

এছাড়াও নিকটস্থ এ ইয়াতিম-গরীব ছাত্র-ছাত্রীদেরকে নিশ্চিন্তে আপনার যাকাতের টাকা দিতে পারেন। দ্বীন কায়েমের আন্দোলন করে তাদের দিতে পারেন। এর যথাযথ ব্যবহার করবে তারা।

যাকাতের ফায়দাঃ
যাকাত দিলে সম্পদ পবিত্র হয়, সম্পদে বরকত হয় ও সম্পদ নিরাপদ থাকে। আল্লাহর হুকুম আদায় হয়।

যাকাত অনাদায়ে কী ক্ষতিঃ
যাকাত আদায় না করলে তাকে ভয়াবহ শাস্তি প্রদান করা হবে। তার কপাল, পাঁজর ও পিঠে তার সম্পদ আগুনে পুড়িয়ে গরম করে সেকা দেয়া হবে। এই সম্পদই বিষাক্ত বিশাল সাপের আকার ধারণ করে তাকে ছোবল দিতে থাকবে যাকাত আদায় না করার অপরাধে।

উল্লেখ্য যে, অবশ্যই হিসেব করে যাকাত আদায় করুন। কখনও কখনও কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিসাব শতভাগ নির্ণয় করা সম্ভব হয় না যেমনঃ ব্যবসায়িক পণ্য সেক্ষেত্রে হিসাবে একটু বেশি ধরে হিসাব করুন। মুখে বলে দেয়া জরুরী নয় তবে অন্তরে নিয়্যত থাকা জরুরী।

কে যাকাত খেতে পারবে নাঃ
নিজ পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা এভাবে উপরের দিকে পিতার পিতা-মাতা, মাতার পিতা-মাতা, তাদের পিতা-মাতা এবং নিচের দিকে পুত্রের পুত্র-কন্যা কিংবা কন্যার পুত্র-কন্যা ইত্যাদি (এরা নেসাব পরিমান মালের মালিক না হলেও এদেরকে যাকাত দেয়া যাবে না)।

যাকাত ও ফিতরার মধ্যে পার্থক্য কি

আমাদের সমাজে অনেকেই আছেন যারা যাকাত ও ফিতরার বিষয়টি গুলিয়ে ফেলেন। আমাদের যেকোনো বিষয় জানার অভাবে বিভিন্ন প্রকার ভুল হয়ে থাকে। তাই আমরা আজকে জানার চেস্টা করবো যাকাত ও ফিতরার পার্থক্য।

যাকাত কি
যাকাত ইসলামে ৫ টা পিলারের ১ পিলার যা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কুরআনে সালাত আদায়ের মতো করে যাকাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাকাত হলো, পুরো ১ বছরে সাধারণ চাহিদা মিটানোর পর যে অর্থ বা সম্পদ গচ্ছিত থাকে ওই সম্পদ বা অর্থ থেকে আল্লাহ এর নির্ধারিত পরিমাণ দান করাকে যাকাত বলে।
যাকাত দয়া করে দেওয়া না এইটা আল্লাহ তাআলা নির্ধারিত ফরজ হিসেবে গরিবদের অধিকার আদায়ে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। গরিবের হক রয়েছে এই যাকাতের অর্থ বা সম্পদের মধ্যে। যাকাত দানের মাধ্যমে অর্থ সম্পদ ও তার আত্না পবিত্র হয়ে যায়। যার কারণে তার সম্পদে কল্যাণ আসে।
ফিতরা কি
ফিতরাও যাকাত। ফিতরাকে সাদকাতুল ফিতর বলা হয়। রমজানের শেষে ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায়। ফিতরা ও যাকাত এর হিসাব সাধারণত একই। তবে কিছু ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে।

ফিতরার ক্ষেত্রে পুরো ১ বছর স্থায়ী সম্পদের প্রয়োজন হয়না। অর্থাৎ ঈদ উল ফিতর এর দিন নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হলেই ফিতরা ওয়াজিব হয়ে যায়।

যাকাত ও ফিতরার পার্থক্য

তাহলে আমরা কিছুটা বুঝতেই পারছি।  যাকাত হলো পুরো ১ বছরের হিসাব অনুযায়ী আর ফিতরা হলো ইদুল ফিতরের দিন পর্যন্ত যা সম্পদ থাকে তার উপর।

রমাদানে আমাদের ইচ্ছার বাইরেও অনেক ছোট খাটো অনেক ভুল ভ্রান্তি হয়ে থাকে তার থেকে ক্ষমা পাওয়ার জন্যও আমাদের ফিতরা দিতে হয়। সাদকাতুল ফিতর শুধু মাত্র রমজান মাসে দেওয়া যায়। ফিতরা কাকে দেয়া যাবে আসুন জেনে নেয়া যাক।


প্রতিটি সামর্থবান মানুষের ওপর ফিতরা ওয়াজিব। যে ব্যক্তির নিকট ঈদের দিন তার ও তার পরিবারের খাদ্য-খোরাক বিদ্যমান রয়েছে এবং সেই সাথে ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য আছে তার জন্য আল্লাহ্‌ তায়ালা ফিতরা ওয়াজিব করেছেন। অর্থাৎ কারোর কাছে একদিন ও এক রাতের খাদ্যের অতিরিক্ত পরিমাণ সম্পদ বিদ্যমান থাকলে তার নিজের ও পরিবারের সমস্ত সদস্যদের পক্ষ থেকে তাকে ফিতরা আদায় করে নিতে হবে।

ফিতরা যাদের দেয়া যাবে-

বাড়ির কাজের লোক বা চাকর-চাকরানীদের জন্য ফিতরা দেয়া বাড়ির মালিকের জন্য আবশ্যক নয়। তবে গরীব মানুষ হিসেবে ফিতরা দিলে সওয়াব পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে মালিক নিজের ও নিজ পরিবারের যেভাবে ফিতরা দিবে সেভাবেই বাড়ির কর্মচারীদের ফিতরা দিবে।

ফিতরা আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের নামাজ বের হওয়ার পূর্বক্ষণে। অর্থাৎ ফিতরা দিয়ে নামাজ পড়তে যাওয়া।

রাসুলুল্লাহ সা. ঈদের নামাজ আদায়ের পূর্বে ফিতরা আদায় করার আদেশ দিতেন। (সহি বুখারি : ১৫০৩)

ইবনে উমর থেকে বর্ণিত, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাতুল ফিতরা আদায় করার আদেশ দেন লোকদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বে।’ (বুখারী, নং ১৫০৯ )

তবে ফিতরা দেয়ার সময় শুরু হয় রমযানের শেষ দিনে সূর্য ডোবার সাথে সাথে। (সউদী ফাতাওয়া কমিটি ৯/৩৭৩)

কেউ ঈদের এক দুই দিন পূর্বেও তা দিতে পারে কারণ সাহাবিদের মধ্যে কেউ কেউ ঈদের এক দুই দিন পূর্বে তা আদায় করতেন। (বুখারী, নং ১৫১১)

কেউ ঈদের পরে ফিতরা দিলে সেটা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে এবং সে ফিতরার বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা হতে বঞ্চিত থাকবে। (আবু দাউদ, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: ফিতরের যাকাত)

টাকা-পয়সা দ্বারা ফিতরা না দেয়ার চেয়ে খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেয়া উত্তম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মুদ্রা হিসেবে দিনার এবং দিরহামের প্রচলন ছিল এবং সে কালেও ফকির ও মিসকিনদের তা প্রয়োজন হত। তা দ্বারা তারা জিনিস-পত্র ক্রয়-বিক্রয় করত। তা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুদ্রা দ্বারা ফিতরা নির্ধারণ না করে খাদ্য দ্রব্য দ্বারা নির্ধারণ করেছেন। হাদীস মতে, খাদ্যবস্তু দ্বারাই ফিতরা আদায় করা সুন্নত। আর এটাই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত।

ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (স.) স্বীয় উম্মতের ক্রীতদাস ও স্বাধীন, নারী ও পুরুষ, ছোট ও বড় সকলের উপর মাথা পিছু এক ‘সা’ পরিমাণ খেজুর বা যব যাকাতুল ফিতরা হিসাবে ফরয করেছেন এবং তা ঈদগাহের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন’। (বুখারী-মুসলিম, মিশকাত হা/১৮১৫)

তাই ফিতরা আদায় করতে হবে প্রত্যেকের জন্য মাথাপিছু এক ‘সা’ খাদ্যশস্য দিয়ে। ‘সা’ হচ্ছে তৎকালীন সময়ের এক ধরনের ওজন করার পাত্র। নবী করীম (স.) এর যুগের ‘সা’ হিসাবে এক ‘সা’ তে সবচেয়ে ভাল গম দুই কেজি চল্লিশ গ্রাম হয়। বিভিন্ন দ্রব্যের নিজস্ব ওজনের ভিত্তিতে ‘সা’ এর ওজন বিভিন্ন হয়। এক সা চাউল প্রায় দুই কেজি পাঁচশ গ্রাম হয়। তবে ওজন হিসাবে এক ‘সা’ গম, যব, ভুট্টা, খেজুর ইত্যাদি দুই কেজি দুইশ পঁচিশ গ্রামের কিছু এদিক সেদিক হয়ে থাকে। তাই সতর্কতা হিসেবে তিন কেজি নির্ধারণ করা ভালো।

অনেকটা সংক্ষেপে  যাকাত হিসাব করার নিয়ম এখানে তুলে ধরা হল। কোন ভুলত্রুটি থাকলে মন্তব্য করে জানাবেন। সংশোধনী দেব।আশা করি কিছুটা উপকৃত হবেন ইনশআল্লাহ।

বিএনএনিউজ২৪/ বিএম, এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ