বিএনএ, ফেনী : ফেনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠান ‘বীরের গল্প’ রবিবার(১১ ডিসেম্বর) দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়। ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর যশপুর গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সুলতান ভিলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনমেলার অভূতপূর্ব দৃশ্য তাদেরকে ৫১ বছর আগের যুদ্ধদিনের সেই উত্তাল সময়ের কাছে নিয়ে যায়।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বৃহত্তর নোয়াখালী (বর্তমানে ফেনী ) জেলার আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি সুলতান আহমেদ মজুমদার এর স্মৃতি রক্ষায় প্রতিষ্ঠিত সুলতান আহমেদ ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বাগত জানান সুলতান আহমেদ ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী কমিটির অন্যতম প্রভাবশালী সদস্য মিজানুর রহমান মজুমদার। এ সময় তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা,মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সকলের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন, নতুন প্রজম্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনের কথা মুক্তিযোদ্ধাদের মুখেই শোনানোর পরিকল্পনা ছিল।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পর এই প্রথম ফেনীর ৬ উপজেলার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের জেলার শত শত মুক্তিযোদ্ধাদের একত্রিত করা হলো।
সাংবাদিক ও নাট্য ব্যক্তিত্ব সেলিম আক্তার পিয়ালের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মজুমদার।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,বীরত্ব গাঁথা, মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান মহামায়া তথা হাজী বাড়ীকে ( সফিক সাহেব ও সুলতান সাহেবের বাড়ী) ঘিরে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন ফেনী জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আব্দুল মোতালেব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাবেক স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ডাক্তার আলা উদ্দিন, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক আবু তাহের, মহামায়া ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হুদা মজুমদার, পরশুরামের মুক্তিযোদ্ধা শাহরিয়ার হোসেন, রাধানগর ইউনিয়নের মোশাররফ হোসেন প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান এএসএম মহিউদ্দিন বুলবুল, পরিচালক রবিউল হোসেন বাবু।
আরও পড়ুন : ফেনীর প্রশাসন পরিবারের হেমন্ত উৎসব ছাগলনাইয়ার সুলতান ভিলায়
সেলাই মেশিন ও গৃহ নির্মাণ অনুদান দিলেন আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান মজুমদার
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যারা একাত্তরের রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন সেই সহযোদ্ধাদের মিলনদৃশ্যে আমন্ত্রিত অতিথিরাও আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। এতে অংশগ্রহণ করতে পেরে খুশি হন মুক্তিযোদ্ধারা।
একাত্তরের রণাঙ্গনে পাকবাহিনীর সাথে যুদ্ধকালীন সময়ের বিভিন্ন স্মৃতি তুলে ধরে অনেকেই আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন, কেউ কেউ চোখের পানি সংবরণ করতে পারেননি শহীদ হওয়া মুক্তিযোদ্ধা বন্ধুর কথা স্মরণ করেন। আবার দীর্ঘ সময় পর মুখোমুখি হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আলিঙ্গণ ও স্মৃতি রোমন্থনে সৃষ্টি হয় এক হৃদয়ঘন পরিবেশ।
মিলনমেলার স্মৃতিচারণ পর্বে দেশ ও জনগণের স্বার্থে মুক্তিযোদ্ধাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহবান জানিয়ে আয়োজক আ’লীগ নেতা মিজানুর রহমান মজুমদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে ও তরুণ প্রজন্মের কাছে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে সুলতান আহম্মদ ফাউন্ডেশন এমন আয়োজন করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে”।আমাদের অঙ্গিকার হবে- মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জয়বাংলার চেতনা কেবল নিজেদের মধ্যে নয়, এই চেতনা আপনার আমার সন্তান, পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের সর্বত্র জাগিয়ে দিবো।
মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বক্তব্যে বলেন, বঙ্গবন্ধু ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক মূল্যায়ন করে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। বঙ্গবন্ধুর জন্ম-ইতিহাস সাধারণ মানুষের মাঝে তুলে ধরে জাতি কলঙ্কমুক্ত হওয়ার যে প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার তা বাস্তবায়ন করতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
মুক্তিযোদ্ধা মো. মোস্তফা জানান, ‘সুলতান ভিলা’ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত একটি বাড়ি। প্রয়াত সুলতান আহাম্মেদ মজুমদারের নামানুসারে বাড়িটির নামকরণ হয়েছে। সুলতান আহাম্মেদ মজুমদার পোর্টল্যান্ড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মজুমদারের বাবা। সুলতান আহাম্মেদ মজুমদার ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। তিনি ছিলেন তৎকালীন ছাগলনাইয়া থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে এই পরিবারের ত্যাগ এক অনন্য উদাহরণ। ছাগলনাইয়া উপজেলার উত্তর যশপুরের এই বাড়িটি ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প। এখানে ৩৫০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ২৯টি বাঙ্কারে অবস্থান নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর মোকাবিলা করেছিলেন। সুলতান আহাম্মেদ মজুমদার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিজের গোলাভরা ধান ও অর্থ সম্পদ উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
মিজানুর রহমান মজুমদারের জেঠা শফিকুর রহমান মজুমদার ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষক। সুলতান আহাম্মেদ মজুমদারের বড় সন্তান আবুল কালাম আজাদও ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা। এই বাড়ির পাশে পাক হানাদারদের গুলিতে শহিদ হয়েছিলেন এই বাড়ির সন্তান আবদুর রশিদ মজুমদার। বাড়ির পাশেই রয়েছে তাঁর সমাধিস্থল।
ছবি: মাসুদ পারভেজ টুটুল
বিএনএনিউজ২৪,এবিএম নিজাম উদ্দিন, জিএন