বিএনএ, ঢাকা : আওয়ামী লীগের দেড় দশকের শাসনে গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় শেখ হাসিনাসহ ৩০ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বুধবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তাদের মধ্যে ১৪ জন কর্মরত এবং ১০ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা রয়েছেন।

গত ৮ই অক্টোবর গুমের দুই মামলায় কর্মরত ও অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জারি করা ওই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে পাঠিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ২২শে অক্টোবরের মধ্যে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পরোয়ানা জারির আদেশের মাত্র দুইদিন আগে গত ৬ অক্টোবর রাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের, ১৯৭৩-এ (২০-সি) সংশোধন করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে আইন মন্ত্রণালয়
দুটি মামলায় সেনা কর্মকর্তাদের বাইরে অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন–– ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদ। এছাড়া র্যা বের দুইজন সাবেক মহাপরিচালকও আছেন।
ফৌজদারি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কোনো মামলায় সামরিক বাহিনীর এত বড় সংখ্যক কর্মরত ও সাবেক কর্মকর্তার অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা বিরল।
অবসরপ্রাপ্ত ১০ কর্মকর্তার মধ্যে শুধু মাত্র সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান এখন গ্রেফতার রয়েছেন। অন্যদের কোন কোন খোঁজ নেই। এর মধ্য সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল হামিদুল হক অন্যতম।
প্রসঙ্গত, গত ২রা আগস্ট দৈনিক বনিক বার্তা মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হামিদুল হককে রাষ্ট্র পুনর্গঠনে সহায়তার অনুরোধ করেছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের ঊর্ধ্বতন একজন— শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্দোলনকারীদের ওপর সেনাবাহিনী গুলি না চালানোয়, সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তোষ ছিল এসএসএফের সাবেক ডিজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল (বরখাস্ত) মুজিবুর রহমান এবং মেজর জেনারেল (বরখাস্ত) জিয়াউল আহসানের মধ্যে। তাদের অভিযোগ ছিল, ‘ওয়াকার নিজের কোরামকেও নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন না, আন্দোলন কীভাবে সামলাবেন’?
এর পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনার অনুমতিতে ওয়াকার-উজ-জামানকে সরিয়ে মুজিবুর রহমানকে সেনাপ্রধান করার পরিকল্পনা করা হয়। তবে একাধিক সূত্র মারফত সে খবর পেয়েছিলেন সেনাপ্রধান। তাদের মধ্যে মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হামিদুল হক একজন ছিলেন বলে জানা যায়। সে পরিকল্পনার খবর জানার পর হামিদুল হক তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন এবং বিদ্যমান ভারসাম্য রক্ষায় নিজেকে দৃশ্যত নিরপেক্ষ রাখেননি, সেনাপ্রধানকে সহায়তা করে গেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে সেনাবাহিনীকে নিউট্রালাইজ রাখা বা অভ্যুত্থানের বিপক্ষে সক্রিয় না করার বিষয়েও মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) হামিদুল হকের সঙ্গে জামায়াতের একটি অংশের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ ছিল। ওই সময় সেনাবাহিনীর ভেতরে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার কৌশলের অংশ হিসেবেই এ যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছিল বলে দাবি করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রশ্ন ওঠেছে, সাবেক ডিজিএফআই প্রধান মেজর জেনারেল হামিদুল হক কেন জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন?এখন তিনি কোথায়?
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, অবসরপ্রাপ্ত ও বরখাস্ত সেনা কর্মকর্তা ইতিমধ্যে সেইফ এক্সিট পেয়ে গেছেন। এখন দেখার বিষয় কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারবে? সেনাবাহিনী তাদের অফিসারদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আদৌ কোন পদক্ষেপ নিবে কীনা?
এদিকে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীকে কলঙ্কমুক্ত করতে হলে, মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত কর্মকর্তাদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে।’ ৯ অক্টোবর রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে তিনি এ মন্তব্য করেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা আশা করি, সেনা নেতৃত্ব এ বিষয়ে সরকার ও ট্রাইব্যুনালকে পূর্ণ সহযোগিতা করবে। কারণ এটি কোনও প্রাতিষ্ঠানিক ইগো বা মর্যাদার প্রশ্ন নয়। রাষ্ট্র, গণতন্ত্র ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।’
তিনি লেখেন, ‘সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধে যুক্ত সদস্যদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তাদেরকে অতিসত্বর গ্রেফতার করে বিচারের আওয়তায় আনতে হবে।
এনসিপি’র আহবায়ক নাহিদ ইসলাম সেনা অফিসারদের গ্রেপ্তারের দাবি জানালেও, বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী কোন ধরনের প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সেনানিবাসকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা গুজব-গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের উত্তেজনা দেখা যাচ্ছে।
বিএনএনিউজ/সৈয়দ সাকিব/এইচ.এম।