বিএনএ ডেস্ক: ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। অন্যদিনের মতোই কর্মব্যস্ত হয়ে উঠেছিল বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের প্রাণকেন্দ্র নিউইয়র্ক সিটি। স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে ঘটে সেই ভয়াল ঘটনা। মুহূর্তেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। ‘টুইন টাওয়ার’ হিসেবে পরিচিত বিশ্বের অন্যতম উঁচু দালানটিতে আঘাত হানে সন্ত্রাসীদের দখল করা দুটি যাত্রীবাহী বিমান। মুহ‚র্তের মধ্যেই নিউইয়র্কের নীলাকাশ ঢেকে গেল নিকষ কালো ধোঁয়ায়। সবার চোখের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গৌরবের প্রতীক ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার।
শুধু তাই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক গৌরবের প্রতীক ওয়াশিংটনের পেন্টাগন ভবনেও হামলা চালায় আরেকটি বিমান। এ ছাড়া পেনসিলভানিয়ায় আরেকটি বিমান দিয়ে হামলার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এই হামলা চালাতে ১৯ জঙ্গি যুক্তরাষ্ট্রের যাত্রীবাহী চারটি বিমান হাইজ্যাক করে। তাদের সবাই নিহত হয়। এ ছাড়া টুইন টাওয়ার ও এর আশপাশে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনে ৩৪৩ জন দমকল কর্মী ও ৬০ পুলিশ কর্মকর্তাসহ ২ হাজার ৭৪৯ জন প্রাণ হারান। নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক ব্যক্তি, নারী ও শিশু। পেন্টাগনে আত্মঘাতী বিমান হামলায় তখন ১৮৪ জন নিহত হন। এছাড়া, উদ্ধারকাজ চালাতে গিয়ে যারা আহত, অসুস্থ এবং বিষক্রিয়ার শিকার হয়েছিলেন তাদের মধ্যে ৮৩৬ জন পরে মৃত্যুবরণ করেন।
ওসামা বিন লাদেনের নেতৃত্বে আল-কায়দা এ হামলা চালিয়েছে দাবি করে এরপর থেকে বিশ্বব্যাপি সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট।এই একটি ঘটনা পাল্টে দেয় গোটা যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে এ হামলার জের টানতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে দেশটির ঋণের খাতায় যোগ হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি ডলার।
রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ‘কস্ট অব ওয়ার’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা যায়। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চালানো হামলায় নিহত হন ২ হাজার ৯৯৫ জন। ওই হামলায় ক্ষতি হয় ৫ থেকে ১০ হাজার কোটি ডলারের। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই নয়, নাইন-ইলেভেনের প্রভাব পড়েছিল সারা বিশ্বেও। এজন্য মাশুল গুনতে হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশকে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধে ইরাক, আফগানিস্তানকে দিতে হয়েছে চড়া মূল্য।
অবশ্য, ওয়ান-ইলেভেনের বড় বিপর্যয় থেকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞের ওপর আবার গৌরবের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে ফ্রিডম টাওয়ার। বিশাল বাজেট হাতে নিয়ে এর নির্মাণ শুরু হয় ২০০৬ সালের ২৭ এপ্রিল। প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হয় এই ভবনটি নির্মাণে।
বিএনএ/ ওজি