বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্যে প্রায় ভুয়া ভুয়া স্লোগান দেয়া হতো। এর কারণ হিসাবে দেখা যায় এই ভুয়া, ভুয়া স্লোগানের আবিস্কারক বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি প্রায় জনসভায় বিএনপি ভুয়া, বিএনপি স্লোগান দিতেন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর ওয়ায়দুল কাদেরের এই শ্লোগানটি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার মুখে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
কিন্তু এক সপ্তাহ যেতে না যেতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘দেশত্যাগে বাধ্য করা’র প্রতিবাদে গোপালগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিল থেকে সেনাবাহিনীকে উদ্দেশ্য করে ভুয়া-ভুয়া স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারিরা। এক পর্যায়ে সেনা সদস্যদের হামলা করে। আহত হয় অন্তত: ৫ সেনা সদস্য। জ্বালিয়ে দেয় তাদের বহনকারি একটি গাড়ি। এ সময় এক সেনাসদস্যের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে মিছিল করা হয়।
গত শনিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে এ ঘটনা ঘটে। সহিংসতার ছবি তুলতে গেলে দুই সাংবাদিককে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়। তাঁরা হলেন চ্যানেল ২৪-এর গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি বাদল সাহা ও মাছরাঙার টেলিভিশনের জেলা প্রতিনিধি সাবেত আহমেদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেলা তিনটার দিকে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। কর্মসূচিতে সদর উপজেলার গোপীনাথপুর ও জালালাবাদ ইউনিয়ন এবং কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গোপীনাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জড়ো হয়। তাঁরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকেন। এতে মহাসড়কের দুই পাশের গাড়ি আটকা পড়ে।
খবর পেয়ে গোপালগঞ্জে কর্মরত সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে সেনাসদস্যদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান তাঁরা। পরে বিক্ষোভকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সেনাসদস্যদের মারধর শুরু করলে সেনাসদস্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। বিক্ষোভকারীদের হামলায় সেনাসদস্যরা দৌড়ে পাশের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ সময় এক সেনাসদস্যের কাছ থেকে একটি অস্ত্র নিয়ে ছিনিয়ে নেয় এবং অস্ত্র উচিয়ে মিছিল করে।
পরে অস্ত্রটি গোপীনাথপুর পুলিশ তদন্তকেন্দ্রে জমা দেন বিক্ষোভকারীরা। কিন্তু তাঁরা অস্ত্রটি নিতে অস্বীকৃতি জানালে গোপীনাথপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান লাচ্চু শরীফের কাছে জমা রাখে। সেনাবাহিনীকে খবর দেয়ার পর সেনাবাহিনী এসে অস্ত্রটি নিজেদের হেফাজতে নেয়। এ ঘটনার পর থেকে এলাকায় এক ধরনের আতঙ্ক উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে এবং তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় মাথায় কাফনের কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সব ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এসে সমবেত হন। তাঁদের হাতে দেশীয় অস্ত্র, লাঠি, রড, পাইপ, বইঠা ছিল। বেলা ১১টায় বিক্ষোভ মিছিল হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ৯টার মধ্যে উপজেলা পরিষদের মাঠসহ আশপাশের এলাকা নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে পূর্ণ হয়ে যায়। এ সময় গোপালগঞ্জ-পয়সারহাট সড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকা পড়ে।
বেলা ১১টায় কোটারিপাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির সামনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান নেতা-কর্মীদের শপথবাক্য পাঠ করান। সবাই শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার শপথ নেন। এ সময় উপজেলা পরিষদ চত্বর ও এর আশপাশের এলাকা নেতা-কর্মীদের স্লোগানে উত্তাল হয়ে ওঠে।
সমাবেশে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুব আলী খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যত দিন দেশে ফিরে না আসবেন, তত দিন আমাদের এই সংগ্রাম চলবে। আমরা রাজপথে আছি, রাজপথেই থাকব।’ তিনি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কেউ মনোবল হারাবেন না। আমাদের প্রিয় নেত্রী খুব শিগগিরই দেশে ফিরে এসে এই দলের হাল ধরবেন।’
শুধু গোপালগঞ্জ নয়, ধীরে ধীরে সারাদেশে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জোরদার হচ্ছে। পাশাপাশি সনাতন ছাত্র ঐক্যের ব্যানারে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা ও পৃথক সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিতে শনিবার ঢাকার শাহবাগ ও চট্টগ্রামের চেরাগি চত্বরে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে নিজেদের অবস্থান ও শক্তির মহড়া দেখিয়েছে। সনাতন ছাত্র ঐক্যে তাদের আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে বেশ তৎপর রয়েছে।
বিএনএ নিউজ,সৈয়দ সাকিব/এইচমুন্নী