বিএনএ, রাউজান (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক লোকমান হাকিম ২য় দফা তার জানাযার নামাজ শেষে গ্রামের বাড়ী রাউজানের সুলতানপুর হাজী পাড়ায় পারিবারিক কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সকাল ৭টার সময়ে কুমিল্লা জেলার নিজ বাসায় ইন্তেকাল করেন। এ দিন সন্ধ্যায় কুমিল্লায় প্রথম জানাযার নামাজ শেষে রাতে মরদেহবাহি গাড়ীতে করে অধ্যাপক লোকমান হাকিমের মরদেহ রাউজানের সুলতানপুর হাজী পাড়ায় নিয়ে আসা হয়। শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকাল থেকে সারাদিন রাউজানের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত মানুষ মরহুম অধ্যাপক লোকমান হাকিমের মরদেহ দেখতে ছুটে আসেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় সুলতানপুর হাজী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে মরহুমের ২য় দফা জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাজে রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, রাউজান উপজেলা আওয়ামীূ লীগের সভাপতি কাজী আবদুল ওহাব, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন চৌধুরী, রাউজান পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। জানাযার নামাজ শেষে মরহুমের মরদেহ তার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, অধ্যাপক লোকমান হাকিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিদ্যায় অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করে ১৯৭০ সনে শিক্ষাজীবন শেষ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি চট্টগ্রাম সিটি কলেজে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হন। পাশাপাশি এনায়েত বাজারস্থ চট্টগ্রাম মহিলা কলেজেও তিনি শিক্ষকতা চালিয়ে যান। সত্তরের জাতীয় নির্বাচনকালে তিনি অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তিনি দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
তিনি রাউজান উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামমুখী উন্নয়ন কার্যক্রম যথা আদর্শ গ্রাম প্রকল্প, তেভাগা প্রকল্প যা জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত এবং ভূমিহীন কৃষকদের তদারকী ঋণ প্রকল্প পরিচালনা করেন। অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদের নেতৃত্বে দেশ উন্নয়ন কাজে একনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ার কারণে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সুপিরিয়র সার্ভিসে যোগ দেননি। তিনি ১৯৭৬ সনের প্রথমদিকে ভারতে তিন মাসব্যাপী গ্রাম উন্নয়নের বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ৭৬-৭৭ সনে সোভিয়েত ইউনিয়নে সমবায়ের ওপর ডিগ্রি নেন। পরবর্তী সময়ে তিনি জাতীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা- ‘প্রশিকা’ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রে যোগ দেন। গ্রামমুখী দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত থাকাকালে তিনি চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী ও দৈনিক পূর্বকোণে নিয়মিত কলাম লিখতেন।
এছাড়া ছাত্রজীবনে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগ সমর্থিত যাত্রিক’র সভাপতি ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লা হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে তিনি ১৯৭৩-৭৮ সাল পর্যন্ত রাউজান থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। চট্টগ্রাম সমিতি, কুমিল্লার সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৪৫ সনের জানুয়ারিতে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার সুলতানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দু’ছেলেই ইঞ্জিনিয়ার। একজন অস্ট্রেলিয়ায় এবং অপরজন দেশে এলজিইডিতে কর্মরত। দু’মেয়ের একজন গৃহকর্মে নিয়োজিত। অন্যজন উন্নয়নকর্মী। লেখক বর্তমানে পেইজ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার নামে এনজিও’তে সংশ্লিষ্ট থেকে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত রাখেন নিজেকে।
বিএনএনিউজ/শফিউল আলম,বিএম