বিএনএ ডেস্ক: দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পর ভোজ্যতেলের বাজারে আবারও ভোক্তাদের ‘পকেট কাটা’ শুরু হয়েছে। বাজারে কয়েকটি কোম্পানির তেলের সরবরাহ এরই মধ্যে কমে গেছে। আবার কিছুসংখ্যক খুচরা ব্যবসায়ী বোতলের গায়ে লেখা মূল্যের চেয়ে লিটারে ৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারে ১০ টাকা পর্যন্ত বেশি নিচ্ছেন। একইভাবে খোলা সয়াবিন ও পাম অয়েলের দামও বেশি নেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, অর্ডার দিয়েও চাহিদামতো তেলের সরবরাহ পাচ্ছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশির ভাগ দোকানেই পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল নেই। এক লিটার ও দুই লিটারের বোতল কিছু থাকলেও পাঁচ লিটারের কোনো সয়াবিন সরবরাহ করা হচ্ছে না। বাজারজাতকারী কম্পানিগুলো চাহিদামতো সরবরাহ না করায় সয়াবিন তেলের এই সংকট তৈরি হয়েছে বলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন।
রাজধানীর নতুন বাজারের মুদি দোকানি শরিফুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ ধরে তেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদামতো তেল দিচ্ছে না। ছোট বোতলের তেল সামান্য কিছু পেলেও পাঁচ লিটার তেলের সরবরাহ বন্ধ আছে। কয়েকটি ব্র্যান্ডের ডিস্ট্রিবিউটররা তাদের অন্য পণ্যের (চিনিগুঁড়া চাল, সরিষার তেল) অর্ডার নিলেও সয়াবিন তেলের অর্ডার নিচ্ছেন না।
পটুয়াখালী জেনারেল স্টোরের মালিক হুমায়ুন কবির বলেন, বাজারে তেল নেই বললেই চলে। আমরা বারবার তেল চেয়েও পাচ্ছি না। ডিস্ট্রিবিউটররা আমাদের বলছেন তেলের দাম বাড়বে বলে সরবরাহ কম।
সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ২০ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে মিলমালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব ৩ আগস্ট বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনকে (বিটিটিসি) দিয়েছে সংগঠনটি। এতে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, এক লিটারের বোতল ২০৫ টাকা এবং পাঁচ লিটারের বোতল ৯৬০ টাকা করার কথা বলা হয়েছে। দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ব্যয়ের একটি বিবরণও তুলে ধরেছে।
এ বছর বোতলজাত সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ প্রতি লিটার ২০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, যা সম্প্রতি দুই দফায় ২০ টাকা কমিয়েছে তেল কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ২১ জুলাই লিটারপ্রতি দর ১৪ টাকা কমানো হয়। অবশ্য বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন এখন বলছে, টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ায় ভোজ্যতেলের আমদানিমূল্য বেড়েছে। এ কারণে দাম সমন্বয়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দাম বাড়ানো হয়নি বলে দাবি করেন কারওয়ান বাজারের ভোজ্যতেলের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী ও পুষ্টি ব্র্যান্ডের ডিলার সিদ্দিক এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সিদ্দিক। তিনি বলেন, আগের দামেই তেল বিক্রি হচ্ছে। কারও কাছ থেকে বেশি নেওয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি টি কে গ্রুপের পরিচালক শফিউল আথহার তাসলিম বলেন, দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এখনও কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। ডিলারদের কমিশন দিয়েই তেল সরবরাহ করে কোম্পানিগুলো। বোতলের গায়ের দরে বিক্রি করার সুযোগ তাদের নেই। কেউ এ ধরনের অনিয়ম করলে তার ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যাবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করার কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। কেউ বেশি দামে বিক্রি করছে- এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ