জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর কালো বিড়াল খ্যাত সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক অবৈধভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। সিলেটে যোগদানের আগে এনামুল হক চট্টগ্রামে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় চট্টগ্রামের ব্যবসায়িদের ভ্যাট আদায়ের নামে বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে জব্দ তালিকা না দিয়ে কম্পিউটার, খাতা, ভ্যাট ও কর প্রদানের মতো গুরুত্বপূর্ণ দলিল জোর করে নিজের অফিসে নিয়ে আসতেন। যাতে ব্যবসায়িরা ভ্যাট ও কর প্রদানের দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে না পারে। পরবর্তীতে কাউকে মামলার ভয়, কাউকে গণ মাধ্যমে প্রকাশের ভয় দেখিয়ে নিজেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন।
তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ব্যবসায়িরা ধর্মঘটও করে। এই অবস্থায় তাকে সিলেটে বদলি করা হয়।মুখে সততা ও কোরআন হাদিসের বয়ান করা এই এনামুল হকের অবৈধ সম্পদের একটি অংশের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তার বিরুদ্ধে গত বছরের ৩১ জুলাই ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা অবৈধ আয়ের অভিযোগের মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মাহবুবুল আলম।
চলতি বছরের ৪ঠা জুলাই এ মামলায় এনামুল হকের সব স্থাবর সম্পত্তি জব্দ করার নির্দেশ দেন আদালত। পরবর্তীতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক ফারজানা ইয়াসমিন মোহাম্মদ এনামুল হকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ই জুলাই ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দিয়েছেন ।
প্রসঙ্গত: এনামুল হকের জব্দ করা সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে গুলশানের জোয়ারসাহারায় তিন কাঠা জমি, খিলক্ষেতে ৩৩ শতাংশ জমি, কাকরাইলের আইরিশ নূরজাহান ভবনে ১ হাজার ১৭০ বর্গফুট ও ১ হাজার ৮৩৫ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট।
এছাড়াও কাকরাইলে কারপার্কিং সহ ১ হাজার ৯০০ বর্গফুট ও ৩ হাজার ৮০০ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার মূল্য ২ কোটি ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। গাজীপুরে পাঁচ কাঠা জমি, মোহাম্মদপুরে তিনটি বাণিজ্যিক ভবনে চার হাজার বর্গফুটের তিনটি স্পেস, মোহাম্মদপুরে ১০ হাজার ৯৬৫ বর্গফুটের জমি।
এ ছাড়া গুলশানের ২ হাজার ৪২৮ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং বাড্ডায় চার কাঠা নাল জমি। এনামুল হক তার জমা দেওয়া হিসাব বিবরণীতে সম্পত্তির মূল্য দেখিয়েছে ক্রয় মূল্যের তিন ভাগের একভাগ। সেই হিসাবে জ্ঞাত আয় বর্হিভূত ৯ কোটি ৭৬ লাখ ৯৭ হাজার ১০৭ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এনামুল হকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করে।
সিলেটের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার হিসেবে কর্মরত। মোহাম্মদ এনামুল হকের পৈত্রিক বাড়ি ফেনীর সদর ইউনিয়নের মনগাজী হলেও নতুন করে বাড়ি করেন পৌরসভার তুলাতলী এলাকায়। চারপাশে বাউন্ডারি দেওয়া চারটি বহুতল ভবন রয়েছে এনামুলের। যেগুলোর একটি পাঁচতলা, একটি দোতলা, আর দুটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন। তৃতীয় তলা বিশিষ্ট নুরে জান্নাত ভবনটি মেয়েকে দিয়েছেন এনামুল।
সোনা গাজীর হাজী স্ট্যান্ড নামক এলাকায় ১২০ শতকের বাউন্ডারি দেওয়া জায়গা রয়েছে এনামুলের। যে সম্পত্তির বর্তমান মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। এছাড়া, সোনাগাজীর চরখোন্দকার মৌজার ১২০ শতাংশ সম্পত্তি ছাড়াও থাক খোয়াজ লামছিতে আছে ১২০ শতাংশ। এছাড়া ১০-১২টি সুবিশাল দিঘী রয়েছে। এনামুলের সম্পত্তি দেখাশোনা করেন তাঁরই ভগ্নিপতি শরিফ। এই বিশাল সম্পত্তির বাহিরেও আত্মীয় স্বজনের নামে বিপুল অবৈধ সম্পদ রয়েছে এলামুল হকের। যা অধিকতর তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বিএনএনিউজ/শামীমা চৌধুরী শাম্মী/এইচমুন্নী