বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় জোরপূর্বক আসামী ছিনতাই, পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের অপরাধে করা পুলিশ অ্যাসল্ট মামলায় আগাম জামিন পেয়েছেন আনোয়ারা উপজেলার নব নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মোজাম্মেল হক। সেই সাথে এই মামলায় বাকী ৪৩ জনও জামিন পেয়েছেন। উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জন্য আগাম জামিন পেয়েছেন বলে জানান জামিনপ্রাপ্তরা। এদিকে বুধবার (১২ জুন) তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে শপথ নিবেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১১ জুন) দুপুর ১টার দিকে মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল করিম ও বিচারপতি কে এম ইমরুল কায়েশ এর দ্বৈত বেঞ্চ ক্রিমিনাল মিস চ্যালেঞ্জাস কেসের (৪২১৮৫) শুনানী শেষে তাদের কে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন প্রদান করেন।
জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করা হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রশিদা চৌধুরী।
জামিনপ্রাপ্তরা হলেন প্রধান আসামী কাজী মোজাম্মেল হক (৫৮), মোজাম্মেল হক প্রকাশ মোজাম্মেল (৪০), শাহাদাৎ হোসেন (৩৬), মো. আজাদ (৩৫), শাহাদাৎ হোসেন টিপু (৪০), এম নজরুল ইসলাম (৪৫), মো. জসিম (৪২), আক্তার হোসেন প্রকাশ আক্তার (৪০), জিয়া উদ্দিন (৩৫), নাজিম উদ্দিন (৪৫), মো. ইয়াছিন হিরো (৫৫), ফাকরুল ইসলাম (৩০), শামসুল আলম (৪২), তৌহিদুল ইসলাম (৩৮), মনছুর (৩০), এয়ার মোহাম্মদ (৫৫), মো. রাসেল (৪০), মুছা তালুকদার (৪২), মো. বাবু (১৯), মো. রিয়াজ (২২), মিশন কলি (৩৮), নাজিম উদ্দিন (৫৮), অনুপম চক্রবর্তী (৪৫), নবী হোসেন (৩৬), মোজাহের (৩৮), মাকসুদ প্রকাশ মাকসুদ উদ্দিন বাচ্চু (২৫), এরশাদ মিন্টু (৩০), মো. আইয়ুব (৪১), মো. হানিফ (৩০), রাসেল সিকদার (৪৫), আব্দুল্লাহ আল নোমান (৪৫), মুজিবুল হক (৩৫), আলী আকবর (২৬), মো. দিদার (৩৫), মো. আলী আজগর (৩৪), সাদ্দাম হোসেন (২৮), বোরহান উদ্দিন (২২), জাহাঙ্গীর (৩১), আশরাফুল হক আসিফ (৩৮), মো. জসিম উদ্দিন (৩১), মো. হেলাল প্রকাশ গুটি হেলাল (৩৫), তারেক আজিজ (৩৫) ও আজিজুল হক আজিজ (৪৫)। তিন ধাপে ৪৪ জন আসামিই জামিন নেন।
পুলিশের করা মামলা সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার (৮ জুন) রাত ১১টার দিকে আনোয়ারা উপজেলার চাতরি-চৌমুহনী এলাকায় উপজেলা চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে পুলিশের ওপর হামলা করে মোজাম্মেল হক নামের এক আসামীকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে।
পরদিন পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার নব নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা কাজী মোজাম্মেল হককে প্রধান আসামি করে ৪৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ।
মামলার অন্যান্য আসামিরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। এবং তারা সবাই বর্তমান অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান এমপির অনুসারী।
বন্দর পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই ) মো. মিজানুর রহমান আনোয়ারায় থানায় পুলিশ অ্যাসল্টে এ মামলা দায়ের করেন।
জানা যায়, হাইকোর্টের একই আদালতে আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত আওয়ামী লীগ নেতা এম এ মান্নান চৌধুরী ২৬ জনকে আসামি করে যে মামলা করেছিলেন কর্ণফুলী থানায় ওই মামলার ১৭ জন আসামিও হাইকোর্ট থেকে ৬ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন।
জামিনপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মোজাম্মেল হক প্রকাশ মোজাম্মেল (৪০), শাহাদাৎ হোসেন (৩৫), মো. মুছা তালুকদার (৪২), জিয়া উদ্দিন (৩২), নাজিম উদ্দিন (৪৫), মো. হাশেম (৪৫), তৌহিদুল ইসলাম (৩৮), নবী হোসেন (২৫), মনিরুল আলম (৩০), মো. মোজাহের (৩৪), মাকসুদ উদ্দিন বাচ্চু (৩৬), এরশাদ মিন্টু (৩৫), মো. আইয়ুব (৩৫), তারেক আজিজ (৩৫), মো. আজাদ (৩৫), শামসুল আলম (৪০), মাঈন উদ্দিন খান মিন্টু (৫৫)।
এর আগে একই মামলায় গতকাল চট্টগ্রাম আদালতে আত্মসমর্পণ করে ৫ জন আসামি জামিন নেওয়া আসামিরা হলেন- মোজাম্মেল হক প্রকাশ মোজাম্মেল (৩০), আলী আজম প্রকাশ লিটন (২৭), সাইদুর রহমান (৩২), মো. মুছা (৩৬) ও মো. বেলাল (৪০)।
এর আগে গত ৭জুন উপজেলার বন্দর সেন্টার এলাকায় বাজেট ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের আনন্দ মিছিল কর্মসূচির পরে সংঘর্ষে দুই গ্রুপের কয়েক ডজন নেতাকর্মী আহত হয়। ওই ঘটনায় সংসদ সদস্য জাবেদ গ্রুপের সমর্থিত আহত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক এম এ মান্নান চৌধুরী বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। পরে মামলার অভিযুক্ত প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তার করার জন্য পুলিশ টানেল চত্বরে অভিযান চালায়। এ সময় স্থানীয় জনতার সাথে পুলিশের ধস্তাধস্তির পর প্রধান আসামি যুবলীগ নেতা মোজাম্মেল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যায় বিক্ষুব্ধ জনতা।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ/ বিএম/এইচ মুন্নী