বিএনএ ডেস্ক: বিনা প্রশ্নে পাচার হওয়া টাকা দেশে আনার সুযোগ দেয়াকে সমর্থন করেন না ব্যবসায়ীরা। একথা জানিয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
শনিবার (১১ জুন) এফবিসিসিআই কার্যালয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের সভাপতি। জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা আগেও বলেছি পাচার হওয়া টাকা বিনা প্রশ্নে দেশে আনার সুযোগ ব্যবসায়ীরা সমর্থন করে না। কারণ এ ধরনের সুযোগ দিলে সবাই এতে উৎসাহী হবে।
তিনি বলেন, আমি এখন ২২ থেকে ৩০ শতাংশ কর দিয়ে টাকা সাদা করব। অন্যদিকে বিদেশ থেকে ফেরত আনলে ১৮ শতাংশ ডিসকাউন্ট পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা এটা সমর্থন করি না। কারণ এতে করে ভালো ব্যবসায়ীরা এক্সপোর্টে নিরুৎসাহিত হবে। এখন ডলারের সংকট তাই সরকার হয়তো ডলারের প্রবাহ বাড়াতে এ সুযোগ দিয়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা এটা সমর্থন করে না।
ব্যাংক ঋণের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরতা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করতে পারে জানিয়ে এফবিসিসিআই সভাপতি প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের প্রচেষ্টা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের প্রচেষ্টা নেয়ার অনুরোধ জানান তিনি। কেননা ব্যাংক ঋণের ওপর অধিক মাত্রায় নির্ভরতা বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধার সৃষ্টি করতে পারে।
জসিম উদ্দিন বলেন, কোভিড ও ইউক্রেন পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি, খাদ্য, পণ্যের কাঁচামালের মূল্যসহ শিপিং ও ট্রান্সপোর্ট খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে সব ধরনের দ্রব্যমূল্য ক্রমাগত বাড়ছে। এ অবস্থায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা আগামী বাজেট বাস্তবায়নে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনুৎপাদনশীল ও অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ খরচ কমানোর পাশাপাশি বিলাসী ও অপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। প্রস্তাবিত বাজেটে কতিপয় বিলাসী পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা হয়ছে যা আমদানি ব্যয় কমাতে সহায়তা করবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়ে বাজেটে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তা বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান প্রক্রিয়াকে গতিশীল করবে উল্লেখ করে জসিম উদ্দিন বলেন, এসব উদ্যোগ এসডিজি-৭, ৮ ও ৯ অর্জনে ভূমিকা রাখবে। অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপকে (পিপিপি) আরও জোরদার করতে হবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নিয়ন্ত্রিত রাজস্ব আয়ের লক্ষমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার (৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা) তুলনায় ১২.১২ শতাংশ বেশি উল্লেখ করে জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সময়ে শুল্ক-কর আয় বাড়ছে। কর ব্যবস্থা সহজ ও ব্যবসাবান্ধব করা দরকার। পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ইন্টিগ্রেটেড ও অটোমেশন প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা জরুরি। এতে ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়বে।
বিএনএ/ এ আর