বিএনএ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ছোট বোন জান্নাতুল হাসান 11wicket.com নামে একটি অনলাইন বেটিং অ্যাপে বিনিয়োগ করেছেন, ভারতে বেটিং কেলেঙ্কারির তদন্তে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এনেছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট।
গত ৮ মার্চ সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, অনলাইন বেটিং অ্যাপ মামলার তদন্তের সময় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত গিরিশ তালরেজা এবং সুরজ চোখানি নামে এই দুজন মহাদেব অ্যাপের অন্যতম পরিচালক হরিশঙ্কর তিব্রেওয়ালের ঘনিষ্ঠ সহযোগী বলে জানা গেছে। তিনি দুবাই ভিত্তিক হাওয়ালা অপারেটর।
তদন্ত সংস্থা ইডি তিব্রেওয়ালের ডেরায় অভিযান চালিয়েছিল। অভিযানে দেখতে পেয়েছে, তিনি ‘স্কাই এক্সচেঞ্জ’ নামে একটি অবৈধ বেটিং ওয়েবসাইটের মালিক। নিজেই সেটি পরিচালনা করেন। তার দুবাই–ভিত্তিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে, তিনি বাজিতে জেতা আয় ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট (এফপিআই) রুটের মাধ্যমে ভারতীয় শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন।
ইডির মতে, সুরাজ চোখানি তিব্রেওয়ালের টাকা তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করতেন। এ ছাড়া, চোখানি বাংলাদেশে 11wicket.com নামে একটি অ্যাপে বিনিয়োগ করেছিলেন। এই জুয়ার অ্যাপের একজন অংশীদার বাংলাদেশের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বোন জান্নাতুল হাসান।
চোখানি নেপালের কাঠমান্ডুতে অবস্থিত ডেল্টিন ক্যাসিনোতে ৪০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছিলেন এবং ক্যাসিনোটির একটি বড় অংশের মালিকও তিনি। Lotus 365 এবং Mahadev book app–এর মাধ্যমে অর্জিত অবৈধ আয় থেকে এই বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছে ইডি।
ইডির তদন্তে আরও জানা গেছে, গিরিশ তালরেজা Lotus 365 অ্যাপের কার্যক্রমেরও অংশীদার। এটি আবার মহাদেব অনলাইন বুকের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। তাঁর Lotus 365–এর অবৈধ কার্যক্রমে রতন লাল জৈন এবং সৌরভ চন্দ্রকর নামে আরও দুজন রয়েছেন।
একাধিক স্থানে অভিযান চালিয়ে তদন্ত সংস্থা ইডি নগদ ১ কোটি রুপি উদ্ধার করেছে। অর্থ পাচারের মামলায় মোট ১ হাজার ৭৬৪ দশমিক ৫ কোটি রুপির অস্থাবর সম্পত্তি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের অধীনে জব্দ করেছে ইডি।
সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের আগে, মামলার সঙ্গে জড়িত আরও নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। গত জানুয়ারিতে ইডি মহাদেব অনলাইন বেটিং এবং গেমিং অ্যাপ মামলায় অর্থ পাচারের তদন্তের জন্য নিতিন তিব্রেওয়াল এবং অমিত আগরওয়াল নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে।
মহাদেব অনলাইন বেটিং অ্যাপ মামলা সম্পর্কে ইডি জানায়, এটি একটি হাই–প্রোফাইল অর্থ কেলেঙ্কারির মামলা। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পোকার, তাস, ব্যাডমিন্টন, টেনিস, ফুটবল এবং ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অবৈধ জুয়ার ব্যবসা চলে। সেই অর্থ পাচার হয় বিদেশে।
এজেন্সির তদন্তে দেখা গেছে, মহাদেব অ্যাপটি পরিচিত সহযোগীদের প্যানেল এবং শাখা ফ্র্যাঞ্চাইজি করে ৭০–৩০ শতাংশ হারে লাভের অনুপাতে পরিচালিত হয়। ভুয়া তথ্য দিয়ে বেনামি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের একটি জটিল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দৈনিক অর্থ পাচার করে এই চক্রটি ।
উল্লেখ্য, সাকিব আল হাসানও এর আগে আলোচনায় এসেছিলেন স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব পেয়েও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)র দুর্নীতি দমন ইউনিটকে না জানানোয়। যার জন্য তিনি ২০১৯ সালের অক্টোবরে এক বছরের জন্য ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন।
২০২২ সালে অনলাইন জুয়ার সাইট বেটউইনারের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)র নীতিমালা অনুযায়ী ধূমপান, মাদক, জুয়া ইত্যাদি সম্পর্কিত কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করার নিয়ম নেই।
বিসিবির চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড় হয়েও নিয়ম ভঙ্গ করায় সমালোচনা ও শাস্তির হুমকি পেলে তিনি ওই চুক্তি বাতিল করেন। এবার আবারও তিনি একই ঘটনায় জড়ালেন।সম্প্রতি “বাবু৮৮” নামে অনলাইন জুয়া সাইটের প্রচারের পোস্টারে সাকিবের ছবি দেখা যায়।
বিজ্ঞাপনে সাকিব বলেছেন, “বাবু৮৮” সাইটটি বাংলাদেশের এক নম্বর স্পোর্টস প্লাটফর্ম। যেখানে ক্রিকেটসহ বাকি সব খেলার আপডেট পাওয়া যাবে।
তবে সাইটটিতে ঢুকলে দেখা যায়, এখানে ক্রিকেট নিয়ে বাজি তো ধরাই যায়, চাইলে খেলা যায় ক্যাসিনো, স্লট গেমের মতো জুয়াও। পরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)র চাপে সাকিব সেই চুক্তি থেকে সরে আসেন।
বিএনএ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী, ওজি/এইচমুন্নী